চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চরিত্র সংশোধনে মাহে রমজানের ভূমিকা

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী

২৬ মে, ২০১৯ | ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

হয রত আবু হুরা ইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূ লুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও গুনাহর কাজ পরিত্যাগ করলো না, আল্লাহ তায়ালার নিকট তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোন মূল্য নেই। সহীহ বুখারী-১৯০৩। নৈতিক অবক্ষয় রোধে রমজানের ভূমিকা
ইসলামের কল্যাণময় শিক্ষার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় রোধ তথা চরিত্র সংশোধন। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, উদারতা, মহানুভবতা, সহিষুষ্ণতা, ক্ষমাশীলতা প্রভৃতি নৈতিক মানবীয় গুণাবলি অর্জনের জন্য ইসলাম মানব জাতিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। যেহেতু নৈতিকতা বিবর্জিত হয়ে কোনো আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, তাই উন্নত জাতি, দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য ইসলামী নৈতিকতার প্রয়োজন সর্বাধিক। এ জন্য রমজান মাসে মানুষের কথাবার্তা, আচার-আচরণ, লেনদেন ও কাজ-কারবারে সততা রক্ষার জন্য জোরালো তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের সত্য কথা বলা উচিত। কেননা সত্যবাদিতা অবশ্যই পুণ্যের দিকে পরিচালিত করে, আর নিশ্চয়ই পুণ্য জান্নাতের দিকে পরিচালিত করে।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম।
রোজাদার মানুষের জীবনকে যথার্থ সৌন্দর্যময় ও সাফল্যম-িত করে তার নৈতিক মূল্যবোধ। মানুষের জীবনের সাধনা হচ্ছে মনুষ্যত্ব অর্জনের চেষ্টা। মনুষ্যত্বের সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক বিরাজমান। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আদর্শবাদিতা প্রভৃতি মহৎ গুণাবলির সমাবেশেই নৈতিকতার স্বরূপ উদ্ভাসিত হয়। ধর্মপ্রাণ মানুষ যত দিন বিবেকবান হয়ে এ ধরনের আদর্শকে সমুন্নত রাখে, তত দিন মনুষ্যত্বের গৌরব বিকশিত হয় এবং সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের পরিচয় সমুজ্জ্বল হয়ে থাকে। সার্থক মানুষ ও সুন্দর সমাজ গঠনে ইসলামে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম রোজা এমন এক সাবর্জনীন ইবাদত, যা রোজাদারকে সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি- নৈতিকতা, অন্তরের সজীবতা, হৃদয়ের পবিত্রতা ও চিন্তাধারার বিশুদ্ধতা প্রদান করে। মাসব্যাপী রোজা পালনের মাধ্যমে খোদাভীতি অর্জন করা যায়। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে আত্মিক, নৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধ ও চারিত্রিক কল্যাণের ধারক বানানোর জন্য আল্লাহ রোজাকে ফরজ করেছেন। রোজাদার যখন রমজান মাসে রোজা রাখেন, তখন তিনি আত্মশুদ্ধি লাভ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’-সূরা বাকারা :১৮৩।
অনৈতিকতা জঘন্যতম অপরাধ ও সব অপকর্মের মূল। প্রতারণা, প্রবঞ্চনা প্রভৃতি সমাজবিরোধী কার্যকলাপের মূলে রয়েছে অসততা আর মানুষের জীবনে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিলে সততার অবসান ঘটে। যে সমাজে সত্যবাদিতা ও সততার ব্যাপক অভাব ঘটে, সে সমাজ বিপর্যস্ত হয় এবং ক্রমেই ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয়। সেখানে অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন প্রভৃতি স্থান দখল করে। ফলে সমাজ জীবনে নানা রকম অনৈতিক কর্মকা-, পাপাচার, অনাচার, অবৈধ কাজ প্রভৃতি প্রাধান্য পায়। তখন মানুষের মধ্যে নৈতিক গুণাবলি হারিয়ে যায়। এমনিভাবে মানুষ অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হলে মনুষ্যত্ববোধ লোপ পায়। এতে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সমাজে মানুষের সততা ও নৈতিকতার অভাবে ব্যাপক আকারে অন্যায় ও অনৈতিকতা প্রবেশ করে জাতিকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয় এবং জাতীয় জীবনে নৈতিক অধঃপতনের সূচনা হয়।
পক্ষান্তরে সদাচার ও সত্যবাদিতা হচ্ছে ইহকাল ও পরকালে সফলতা ও মুক্তির উপায়। রমজান মাসে রোজাদারদের পরচর্চা, পরনিন্দা ও মিথ্যাচার বর্জনের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নিতে হয়। মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠন ও অবক্ষয় রোধে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দিকনির্দেশনা প্রদান করে ঘোষণা করেছেন, ‘অবশ্যই তোমরা মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকবে। কেননা নিশ্চয়ই মিথ্যা অনৈতিক কাজের দিকে পরিচালিত করে এবং নিশ্চয়ই অনৈতিক কাজগুলো দোজখের দিকে পরিচালিত করে।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম।
সুতরাং মাহে রমজানে যাবতীয় অনৈতিক ও অনৈসলামিক কর্মকা-, অসদাচরণ, কথাবার্তা ও অবৈধ লেনদেন থেকে বিরত থাকুন এবং পরচর্চা ও পরনিন্দা পরিহার করুন। নিখুঁত ও মর্যাদাপূর্ণ রোজা হলো এই, রোজাদার ব্যক্তি মিথ্যা বলবে না, ঘুষ খাবে না। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেবে না, প্রতারণা করবে না। যে কোনো লোকের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করবে না। হত্যাকা-, ব্যভিচার, ধর্ষণ ও ছিনতাই করবে না। ইসলাম এসব নৈতিকতাবিরোধী কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং কঠোর শাস্তির বিধান করে দিয়েছে।

লেখক : এম.ফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট