চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সম্পাদকীয়

সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে কৃষিতেও প্রণোদনা প্যাকেজ

১৬ এপ্রিল, ২০২০ | ৩:২২ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র-মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পখাতের পর এবার কৃষিতে প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় গ্রাম এলাকার ক্ষুদ্র চাষীরাও সহায়তা পাবেন। একই সঙ্গে করোনার কারণে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আগামী বাজেটে সারের ক্ষেত্রে আরও ৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি প্রদানেরও ঘোষণা দিয়েছেন সরকারপ্রধান। রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১৬টি জেলার জেলাপ্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, সংসদসদস্য, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে সর্বশেষ মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেন। কৃষক ও কৃষিখাতের বিপর্যয় রোধে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক, সুচিন্তিত এবং সাধুবাদযোগ্য। দলীয়করণ, দুর্নীতি ও অপব্যবহার রোধ করে এর নৈর্ব্যক্তিক বন্টন ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে কাক্সিক্ষত সুফল আসবে।
বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাস শুধু ভয়ঙ্কর মহামারি হিসেবেই নয়, অর্থনীতির জন্যও এক অশনিসংকেত। এই অবস্থায় অর্থনীতির বড় ধরনের বিপর্যয় রোধে বিশে^র সব দেশই নিজের মতো করে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় দিনকয়েক আগে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার নতুন ৪টিসহ মোট ৫টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগেই গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। সর্বশেষ কৃষক ও কৃষির ক্ষতি কাটিয়ে উঠে উৎপাদন ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘোষণা করা হলো কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজ। ঘোষণা অনুযায়ী, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ সহায়তা প্রদানের জন্য সর্বাধিক ৫ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। সেখান থেকে শুধু কৃষিখাতে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ দেয়া হবে। এই তহবিল থেকে গ্রাম অঞ্চলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষী তাদের জন্য ঋণ দেয়া হবে। কৃষি, ফুল, ফল, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি সকল কর্মকা-ে এখান থেকে সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি সারের ভর্তুকি হিসেবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হবে। যাতে কৃষকের উৎপাদন ব্যাহত না হয়। সরকারের এই উদ্যোগ খুবই সুচিন্তিত সন্দেহ নেই। প্রকৃত কৃষকরা হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে প্রকল্পের অর্থ পেলে কৃষি উৎপাদন ঠিক থাকবে। এতে দেশ করোনাপরবর্তী সময়ে খাদ্যসঙ্কটে পড়ার ঝুঁকিমুক্ত হবে।
আমরা মনে করি, কৃষিপ্রধান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশে কৃষক ও কৃষির সুরক্ষায় নেয়া সরকারের প্রণোদনা উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক, প্রশংসনীয় ও সময়োপযোগী। কৃষকদের মনোবল বাড়বে। সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এখন যা প্রয়োজন তা হচ্ছে প্রণোদনা প্যাকেজের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। যেখানে গরীবের ত্রাণে নয়ছয় হওয়ার খবর আসছে গণমাধ্যমে, সেখানে দুর্নীতিমুক্তভাবে প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন খুবই কঠিন ব্যাপারে। তাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্যাকেজের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ থাকলে টার্গেটকৃত প্রকৃত কৃষকরা এর সুফল ভোগের সুযোগ পাবে। আর প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিউৎপাদন ঠিক রাখা গেলে অভ্যন্তরীণ খাদ্যনিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে। এতে করোনাযুদ্ধে জয়ের পথ যেমন প্রশস্ত হবে, তেমনি করোনাপরবর্তী খাদ্যসংকট মোকাবিলা ও বিপর্যস্ত অর্থনীতির মেরামতও অনেকটাই সহজ হবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে খাদ্যসঙ্কটে পতিত দেশগুলোকেও সহযোগিতা করা যাবে। তবে কাক্সিক্ষত সাফল্য নির্ভর করছে প্রকৃত ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ নৈর্ব্যক্তিকভাবে বন্টন এবং সঠিক ব্যবহারের তদারকির উপর। যদি সবকিছুই সঠিকভাবে হয় তাহলে প্রণোদনা প্যাকেজের লক্ষ অর্জিত হবে, সন্দেহ নেই।
কিছুদিনের মধ্যে বোরো ফসল উঠবে। কৃষক যেন সঠিক মূল্য পায় তাও নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় এবছর দুই লাখ টন চাল বেশি ক্রয় করবে। তা যেন সঠিকভাবে হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। কেউ পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলা জাতীয় কিছু উৎপাদন করলে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার আরেকটি উদ্যোগও বর্তমানে চলমান রয়েছে। তাও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন দরকার। প্রধানমন্ত্রী রফতানির বিষয়টি মাথায় রেখে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর কথাও বলেছেন। এ জন্যে কারও এতটুকু জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বাড়ির আশ-পাশ এবং ছাদের টবসহ যেখানেই সুযোগ হয়, সেখানেই উৎপাদন করার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো আমলে নিয়ে উৎপাদনের সব সুযোগকে কাজে লাগানো উচিৎ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট