চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিদায় ১৪২৬ বঙ্গাব্দ

১৩ এপ্রিল, ২০২০ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

‘কত বর্ষ হবে গত, কত সূর্য হবে অস্ত/ আছিল নূতন যাহা পুরাতন হবে…।’ কালের অমোঘ নিয়মে আজ মহাকালের গর্ভে লীন হয়ে যাচ্ছে আরেকটি বছর, বিদায় ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। বিদায়ী বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, ভালোবাসা-সংঘাত, পাওয়া-না পাওয়া, অর্জন-বিসর্জন সবকিছুই ঠাঁই নেবে স্মৃতির পাতায়। নতুন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে কাল সূচিত হবে আরেকটি নতুন বছরের। নতুন সূর্যের হলদে আভা ছড়িয়ে শুরু হবে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের নতুন পথচলা। মহাকালের গর্ভে একটির পর একটি বছরের বিলীন হলেও নিয়মানুযায়ী নতুন স্বপ্নকে ধারন করেই প্রতিটি নতুন বছরকে মানুষ স্বাগত জানায়। বিদায়ী বছরের পাওয়া-না পাওয়া, আনন্দ-বেদনা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসেবভূমিতেই রচিত হয় নতুন স্বপ্ন-আশা ধারনে নতুন বছরের পথচলা। হয়তো সে স্বপ্নের সবই পূরণ হয় না, কিন্তু নতুন বছর আসে বিদায়ী বছরের ধারাবাহিকতায়। নানা হিসেব-নিকেশের মাধ্যমে অপূরণকৃত স্বপ্নের পরিপূরণ ঘটানোর নব-উদ্যমে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বরণ করা হয় নতুন বছরকে। ‘যাক পুরাতন স্মৃতি/যাক ভুলে যাওয়া গীতি,/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।’
বিদায়ী বছরে আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, রাজনৈতিক আতংক, আশা-নিরাশার দোলায় দুলেছে সাধারণ মানুষ। যে আশা নিয়ে শুরু হয়েছিল ১৪২৬, সে আশা তেমন পূরণ হয়নি। বাস্তবায়ন হয়নি অসংখ্য চাওয়া-পাওয়ার। সুখকর ঘটনায় পুলকিত হওয়ার চেয়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়েছে বেশি। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে। সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হয়েছে। বিশ্বব্যাংক নি¤œমধ্য আয়ের দেশ ঘোষণা করেছে। আগামি বছর ‘ভিশন ২০২১’-এর বাস্তÍবায়নের মাধ্যমে মধ্য আয়ের দেশের কাতারে শামিল হওয়ার চেষ্টা চলছে। ঘোষণা আছে ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার। সন্দেহ নেই, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলে এই লক্ষ্য পূরণ সহজেই সম্ভব। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, মানবসম্মপদ উন্নয়নসহ নানাক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিষ্ময়কর সাফল্য পেয়েছে। সারা বিশ্বেই বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ আসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে অবনতির চিত্র লক্ষণীয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত মানবসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ। সে লক্ষ্য আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। গণতন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রগুলো সংকোচিত হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে নির্বাচনব্যবস্থা। নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে হাস্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। দলীয়করণ, আমলাতোষণ, যেনতেন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতাকে আকড়ে ধরা, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অপকা- এখন পূর্বাপেক্ষা বেড়েছে। জাতীয় নীতিসহ নানাক্ষেত্রে নেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো ঐক্য। বিদায়ী বছরে এসবের চর্চা দেখে দেশবাসী হতাশ হয়েছে। তবে সবার মধ্যে শুভবোধের উদ্রেক হলে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সত্যিই অন্তরে ধারণ করলে, এসব ক্ষেত্রে আশা জাগানিয়া সুসংবাদ আসতে পারে নতুন বছরে।
আজ বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সমগ্র পৃথিবীর মানুষের কাছে সাক্ষাৎ ‘যমদূত’ হয়ে এসেছে। সারাবিশ্বের জনগণই অদৃশ্য এই শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। আর করোনা প্রাণহানিই নয় শুধু, পৃথিবীর অর্থনীতিকেও ধংস করে দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও অর্থনীতির পূর্বচিত্র ফিরিয়ে আনতে গলদগর্ম হতে হবে সবাইকে। লেগে যাবে বছরের পর বছর। করোনার পর অন্য কোনো মারণভাইরাস দেখা দিলে তো পরিস্থিতি আরো নাজুক হবে। তবে বিদায়ী বছরের করোনাকালে সবার মধ্যে যে ঐক্য-সংহতি তৈরি হয়েছে, তা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে একটি গণতান্ত্রিক,মানবসাম্যপূর্ণ সমাজ, দেশ ও বিশ্ব গড়ার পথ মসৃণ হয়ে যাবে। ১৪২৬ বঙ্গাব্দের বিদায়লগ্নে আমরা আশা করবো, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করবে। আমাদের রাজনীতিকরা দেশ ও জনস্বার্থের পরিপন্থি সবকিছুরই চর্চা থেকে বিরত থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে দেশ ও জনগণের মঙ্গলচিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাবেন। আমরা উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত পথ চাই। বিগত দিনের ব্যর্থতা, হতাশা আর বঞ্চনার অবসান চাই। চাই না, ধ্বংস, হানাহানি সংঘাত আর মৃত্যুর অসুস্থ রাজনীতি। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনার ক্ষতি মোকাবিলা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে আমাদের। এই দেশের মানুষের যোগ্যতা, সততা ও দৃঢ়তা প্রবল। এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। আমরা আর পেছনে ফেলে আসা দুঃখ-কষ্ট ও বেদনার কথা মনে করতে চাই না। সবকিছু ঝেড়ে ফেলে নতুনকে বরণ করে নিতে চাই। স্বস্তির সুবাতাসের প্রত্যাশার নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চাই। সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধিতে ঋদ্ধ হোক বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট