চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সম্পাদকীয়

গ্রামে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা বাড়ছে

নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নিন

৬ এপ্রিল, ২০২০ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গণছুটি ঘোষণা করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও নাগরিকদের ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করতেই মূলত এই গণছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ছুটি ঘোষণার পর শহরে বসবাসকারী কর্মজীবীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রামে চলে গেছে সপরিবারে। আবার গ্রামে গিয়েও তারা সরকারের নির্দেশনা মানছেন না। ঘরে অবস্থানের পরিবর্তে অবাধে চলাফেরা করছেন। একদিকে বিদেশফেরতদের অবাধ আনাগোনায় ঝুঁকিতে আছে গ্রামগুলো, অন্যদিকে নতুন করে যোগ হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহুরে জনপদ থেকে গ্রামে বাড়িতে ফিরে যাওয়া লাখো মানুষ। গ্রামে যাওয়া মানুষদের মধ্যে কে করোনাভাইরাস বহন করছেন কেউ জানেন না। ফলে গ্রামাঞ্চল হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অপরিহার্য গ্রামের এমন চিত্র উদ্বেগকর। সন্দেহ নেই, কোনোভাবে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেলে পুরো জাতিকেই এর খেসারত দিতে হবে।
একে তো আগে থেকেই বিদেশফেরত ব্যক্তিরা গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হলেও বেশিরভাগ ব্যক্তিই তা মানেননি বা মানছেন না। হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে তারা সর্বত্র ঘোরাঘুরি করছেন। আত্মঘাতীর মতো তারা নিজেদের জীবনের পাশাপাশি পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিলেও তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সে প্রশ্ন থেকে গেছে। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে শহর থেকে যাওয়া জনগোষ্ঠী। সরকারি টানা ১৭ দিনের ছুটি পেয়ে ¯্রােতের মতো গ্রামে ছুটে গেছে কর্মজীবী মানুষ। সরকার যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেও বিকল্প পথে হাজারো মানুষ বাড়ি ফিরেছেন। কেউ খোলা ট্রাকে, কেউবা কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি, আবার কেউ পণ্যবাহী পরিবহনে করে বাড়ি গেছেন। লাখো মানুষ গ্রামে ফিরে যাওয়ার এই দৃশ্য ছিলো অনেকটা ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার মতো। সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক-লরি ও পণ্যবাহী পরিবহনের দীর্ঘ জট ছিলো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে আটকে ছিলো তাদের বহনকারী যানগুলো। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চরম ঝুঁকিও ছিলো। আবার গ্রামে ফিরেও মানছেন না তারা সরকারি বিধি-নিষেধ। গণমাধ্যমের খবর বলছে, করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে দেশের গ্রামীণ জনপদগুলোতে জনসমাগম অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে গ্রামের হাট-বাজারে চলছে কেনাকাটা। সচেতনতার অভাবে মাছ, কাঁচাবাজারে ও নিত্যপণ্যের দোকানে ব্যাপক ভিড় থাকছে সারাদিনই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না কেউ। সড়কে চলছে টেম্পো, ইজিবাইক ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যান। খোলা থাকছে চায়ের দোকান। আবার হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে চলছে জুয়ার আসর, চায়ের আড্ডা। কোথাও কোথাও লকডাউন উপেক্ষা করেই চলছে গণজমায়েত। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এতে গ্রামগঞ্জে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
সরকার যখন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে মানুষকে ‘ঘরে’ রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন গ্রামের এমন চিত্র কোনো যুক্তিতেই কাম্য হতে পারে না। এমন আচরণের মাধ্যমে তারা শুধু গ্রাম নয়, পুরো বাংলাদেশকেই অনিরাপদ করে তোলছেন। এখন গ্রামেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেক ব্যক্তি এ ভাইরাস বহন করছে। যদিও পরীক্ষার অভাবে তা চিহ্নিত হচ্ছে না। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে, আরও অনেক ব্যক্তি সংক্রমিত হয়ে এটি মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। আজ আমাদের সবার জীবনই শুধু নয়, জীবিকাও হুমকির মধ্যে পড়েছে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ব্যর্থ হলে ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতিও পঙ্গু হয়ে যাবে। তাই শহরের পাশাপাশি গ্রামগুলোর সুরক্ষায়ও নজর দিতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি, একইসঙ্গে মহামারি আইনের কঠোর প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই করোনাযুদ্ধে আমরা জয়ী হবো, ইনশা’আল্লাহ। বিপরীতে সামান্য খামখেয়ালিও মহাবিপদ ডেকে আনবে। সরকারের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকসাধারণ এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকেও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে নিজের গ্রামকে করোনাভাইরাসমুক্ত করার কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। এতে নিজের এবং নিজেদের পরিবারের জীবন রক্ষার সম্ভাবনা প্রশস্ত হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট