চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রণোদনাসহ যুক্তিপূর্ণ পদক্ষেপ নিন

করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত দুগ্ধখাত

৫ এপ্রিল, ২০২০ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে ১৭ দিনের গণছুটিসহ সরকারের নেওয়া নানামাত্রিক পদক্ষেপে দেশ কার্যত লকডাউন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘরের বের হচ্ছেন না। গণপরিবহন ও দোকানপাট বন্ধ। বন্ধ রয়েছে আয়-রোজগার। ফলে চাহিদা অনুপাতে করোনা প্রতিরোধে পুষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস দুধ সংগ্রহের সুযোগও মিলছে না সাধারণ মানুষের। বন্ধ রয়েছে দুধের অন্যতম গন্তব্য মিষ্টির দোকানগুলোও। মিষ্টিসহ দুগ্ধজাত বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ রয়েছে। এতে বিপুল অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছেন দুগ্ধখামারিরা। চলমান সংকটে শত শত কোটি টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দুধ সংগ্রহ করে তা গুড়োদুধে রূপান্তরের উদ্যোগ, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের যুক্তিযুক্ত সরকারি প্রণোদনা না থাকলে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় দুগ্ধশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে, সন্দেহ নেই।
গতকালের দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বিপাকে পড়েছেন কর্ণফুলী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৯ শতাধিক খামারি। করোনাকালে কোনো কোনো খামারি নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করছে, আবার অনেক খামারি দুধ থেকে ননি তুলে রেখে ক্ষতি কিছুটা পোষানোর চেষ্টা করছেন। কারো কারো দুধ অবিক্রিত অবস্থায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা মিল্কভিটার দুগ্ধশীতলকরণ কেন্দ্রটিও বন্ধ রয়েছে। ফলে খামারে উৎপাদিত দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শহরতলীর উপজেলা কর্ণফুলীর সাতশতাধিক খামারি। দুধ বিক্রি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সুযোগের অভাবে ব্যাপক লোকসানের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন ‘ডেইরি জোন’ হিসেবে পরিচিত এ উপজেলার খামারিরা। এ অবস্থায় লোকসান কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন তারা। আর শুধু কর্ণফুলী উপজেলা নয় শুধু, এভাবে চরম লোকসানের দিন গুণছেন রাঙ্গুনিয়াসহ দেশের সব অঞ্চলের দুগ্ধখামারিরা। সারাদেশের দুগ্ধখামারে নেমে এসেছে বিপর্যয়। বড় খামারিরা বিকল্প ব্যবস্থায় সামান্য হলেও দুধ প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু প্রান্তিক খামারিরা করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত। অসংখ্য পরিবার আছে, ছোট্ট দুগ্ধখামারটিই যাদের আয়-রোজগারের একমাত্র উৎস। ছোট্ট দুগ্ধখামারটিই সন্তান-সন্ততির লেখাপড়া ও চিকিৎসাসহ পরিবারের যাবতীয় খরচ যুগিয়েছে। এখন করোনার প্রভাবে তারা চরম দিশেহারা। তাদের সংসারে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। গাভি থেকে দু’বেলা দুধ পেলেও ক্রেতা নেই। এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাত্র ১০ থেকে ১৫ টাকা লিটার হাঁকিয়েও বেচতে পারছেন না দুধ। এতে সংসারের খরচ দূরে থাক, খামারের খরচ মেটাতেই পড়তে হচ্ছে ঋণের ফাঁদে। চলমান পরিস্থিতিতে গোখাদ্য জোগাড় করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিচ্ছেন অনেকেই। সামনের দিনগুলোতে সংকট আরো ঘনিভূত হওয়ার আশঙ্কায় প্রান্তিক খামারিদের অনেকেই গাভি বিক্রি করে দিচ্ছেন বলেও খবর এসেছে গণমাধ্যমে। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) এর তথ্যমতে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দিনে অন্তত ৯০ কোটি টাকার দুধ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। চলমান অবস্থা এক মাস থাকলে দুগ্ধখাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে আড়াই হাজার কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, দেশে দুধের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৯৯ লাখ টন। গত পাঁচ বছরে দুধের উৎপাদন তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দুধের বার্ষিক উৎপাদন দেড় কোটি টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সে হিসেবে এই খাতের গতি খুবই ভালো ছিল। কিন্তু করোনার প্রভাবে সবকিছু তছনছ হয়ে যাচ্ছে। বিডিএফএ’র তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে উৎপাদনের অন্তত ৯৫ শতাংশ দুধ বিক্রির জায়গা বন্ধ রয়েছে। সামান্য দুধ পানির দরে বিক্রি করা গেলেও বড় অংশই অবিক্রীত। অনেকে ক্রিম আলাদা করে রাখছেন। কেউ কেউ ঘি বানানো শুরু করেছেন। এতে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে প্রান্তিক খামারিদের ওই সুযোগ নেই। তারা অনেকেই ইতোমধ্যে পথে বসেছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশের দুগ্ধখাত দীর্ঘমেয়াদি সংকটে নিপতিত হবে। চলমান বিপর্যয় সামাল দিয়ে কতগুলো খামার টিকে থাকতে পারে, সেটিই এখন ভাবনার বিষয়।
দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ দুগ্ধখামার রয়েছে। পুষ্টিচাহিদা পূরণের পাশাপাশি এর ওপর নির্ভরশীল প্রায় সোয়া কোটি মানুষের জীবিকা। সংগতকারণে এ বিষয়ে সরকারের ভাবনা-চিন্তা দরকার। জনমানুষের পুষ্টিচাহিদার অন্যতম প্রধান যোগানদাতা দুগ্ধখাত এভাবে মুখ থুবড়ে পড়–ক, তা নিশ্চয়ই সরকারসহ কারো কাম্য নয়। আমরা আশা করতে চাই, দুগ্ধখাতকে বাঁচিয়ে রাখতে খামারিদের জন্য যুক্তিপূর্ণ প্রণোদনাসহ সময়ের দাবির আলোকে সব পদক্ষেপই গ্রহণ করবে সরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট