চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কৃষক হাসলেই হাসবে বাংলাদেশ

২৪ মে, ২০১৯ | ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। গ্রামীণজীবনে কৃষি জীবিকার প্রধান উপজীব্য। কৃষি বলতে বিভিন্ন ধরনের শস্যকে বুঝালেও মূলত ধান ও আলুকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। কারণ অতীতে পাট, ভুট্টা, তামাক উৎপাদন বর্তমানে তা শুধুই সোনালি দিনের অংশ। বছরে সাধারনত, ধান দু’বার ও আলু একবার উৎপাদন করা হয়। যার উপর নির্ভর করে দেশে খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশি রপ্তানি করা হয়। চলতি বোরো মৌসুমে বাস্তব প্রেক্ষাপটের দিকে একটু লক্ষ্য করা যাক, অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদিত ধানের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৩ কোটি ৬২ লাখ টন আর চলতি বছরে অতীতের সব রের্কড পেছনে ফেলবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। দিন দিন উৎপাদিত ধানের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। যা কৃষিবিপ্লব নামে অভিহিত করলে ভুল হবে না। তবে প্রশ্ন হচ্ছে যাদের শ্রম দ্বারা এই শস্য ভান্ডার পূর্ণ হয় তাদের কি আদৌ কোন পরিবর্তন ঘটছে?
এর উত্তর সহজে পাওয়া যায় বর্তমান কৃষকের দিকে লক্ষ করলে। প্রতি বিঘা জমিতে বিভিন্ন আনুষঙ্গিক বাবদ খরচ হয় সর্বনিম্ন১৫,০০০ টাকা এবং ঐ জমিতে কৃষকরা ধান বিক্রি করছে মাত্র ১২,০০০ টাকা অর্থাৎ প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ৩,০০০ টাকা। যদিও সরকার প্রতিমণ ধানের দাম ১০৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও কৃষকরা প্রতিমণ ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে মাত্র ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। অথচ প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৭০০ টাকার অধিক। গ্রামের গরিব ও ক্ষুদ্র কৃষকরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধান উৎপাদন করলেও তাদের কপাল খুলছে না। বরং ফল হচ্ছে উল্টো। চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে, উৎপাদিত ধান বিক্রি করে সেই সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গরীব ও বর্গাচাষী কৃষকরা পথে বসছে। সেইসাথে ধান কাটার উচ্চ মজুরী। প্রতিবিঘা ধান কাটার মজুরী ৩৫০০ টাকার অধিক। দেড় মণ ধান দিয়ে একদিনের মজুরী পাওয়া এখন সোনার হরিণের মতো। সবকিছু মিলে এখন দিশেহারা কৃষক। যার ফলে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ও পাকা ধানে আগুন লেগে দেওয়ার মতো ঘটনা নিছক কম নয়। যা কৃষিপ্রধান দেশের জন্য লজ্জাজনক।
অপরদিকে প্রযুক্তির সুবাতাস সারা বাংলাদেশে পৌঁছালেও আজ কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির সুবাদে বড় কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নি। ১৯৭১ সালে ধান কেটে আনার জন্য কাধের উপর নির্ভরশীল হলেও ২০১৯ সালে তেমন কোন পরিবর্তন আসে নি। যার ফলে কৃষিকাজে কায়িক শ্রম থেকে আজও মুক্তি মিলেনি কৃষক পেশার সাধারণ লোকের। প্রকৃতির পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় ধান উৎপাদনের জন্য। তবে গরু দিয়ে জমি চাষ করার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যা ইতিবাচক দিক। আগামী দিনে কৃষিকাজে কায়িক নির্ভরশীলতা কমাতে এবং লাভজনক খাতে পরিণত করার জন্য প্রযুক্তির উপর নির্ভর হতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর জন্য কৃষিপ্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার কোন বিকল্প নেই।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি অর্থাৎ ধান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আবাদযোগ্য কৃষিজমি কমে যাওয়াসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রান্তিকালে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমাদের কৃষি। এসব সমস্যাকে সামনে রেখে ২০৩০ সালে ১৯ কোটি জনসংখ্যার জন্য শুধু দানাদার ৪ কোটির বেশি টন খাদ্য প্রয়োজন হবে। সেদিক বিবেচনা করে কৃষি তথা খাদ্যশস্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিপনন-বিতরণ ব্যবস্থায় যথেষ্ট মনোযোগ দিতে হবে । কৃষিজমি ১৯৭১ সনে যেখানে ছিল প্রায় ১ কোটি হেক্টর, বর্তমানে তা প্রায় ৬৫ লাখ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। একটা সময় দেশের ৮০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমানে সে সংখ্যা এখন কিছুটা কমলেও জাতীয় উন্নয়নে এখনো কৃষির বিশেষ অবদান অনস্বীকার্য। এসব বিবেচনায় কৃষি ও কৃষকের চাহিদা যথাযথ নির্নয় করে গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসাথে কৃষকের ন্যায্য মূল্য, অধিকার ও কৃষিখাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক খাতে রূপান্তর করে কৃষকের ঘাম মাখা মুখে হাসি ফুটা এখন সময়ের দাবি। পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, কৃষক কাঁদলে কাঁদবে দেশ আর কৃষক হাসলে হাসবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ।

মোঃ রাশেদ আহমেদ
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট