চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

নগরীতে রমজান মাসে পানির সঙ্কট ও ভাউজার বাণিজ্য

২৪ মে, ২০১৯ | ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ওয়াসা যে নগরবাসীর চাহিদামতো পানি সরবরাহ করতে পারছে না তা অবরোধ-বিক্ষোভের মাধ্যমে আরো একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন নগরীর ঈদগাহ-মনসুরাবাদের জনগণ। দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সোমবার ওয়াসার পানি সরবরাহের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোডের ঈদগাহ এলাকার রূপসা বেকারি মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় ক্ষুব্ধ জনগণ। সড়ক অবরোধকালে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে ওয়াসার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পানি সরবরাহ শুরুর ঘোষণা দিলে অবরোধ তুলে নেয় এলাকাবাসী। শুধু ঈদগাহ-মনসুরাবাদ নয়, নগরীর লালখানবাজারসহ আরো বহু এলাকার জনগণ চরম পানিসংকটে আছে। দৈনিক পূর্বকোণে বহুবার এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে। পানির জন্য ভয়াবহ রকমের হাহাকারের পাশাপাশি সরবরাহকৃত পানির মান নিয়েও আছে নানা অভিযোগ। নানা অজুহাতে সংকট নিরসনে ওয়াসা দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ আছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনকই বলতে হয়।
এখন চলছে প্রচ- দাবদাহের দিন। নগরীতে গরমের তীব্রতায় বেড়ে গেছে পানির চাহিদা। ফলে চাহিদানুপাতে পানি না পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি সংকটের কারণে রান্নাবান্না-গোসলসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় পানিসংকটপ্রবণ এলাকার জনগণ যে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। প্রচ- দাবদাহ এবং পানিসংকট, দুয়ে মিলে জনজীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। কোনো কোনো এলাকায় দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের অভিযোগও পুরনো। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপারটি হচ্ছে অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে জনদুর্ভোগ নিরসনে ওয়াসার জনকাক্সিক্ষত তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াসার পানি সরবরাহ বহুগুণ বেড়েছে। নগরীর বিশাল এলাকায় ওয়াসা পানিসংকট নিরসনে সক্ষম হয়েছে। পাইপলাইন সংস্কারের কাজও চলছে। হয়তো এক সময় সংকট নিরসন সম্ভব হবে। তবে অভিযোগ আছে কাজের ধীরগতি এবং দুর্নীতিবাজচক্রের কারণে জনগণ কাক্সিক্ষত সুফল পাচ্ছে না। নগরীর সব এলাকায় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের সক্ষমতা অর্জনের কথা ওয়াসার পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও বেশকিছু এলাকার মানুষের পানি না পাওয়ার বা রেশনিং সিস্টেমে পানি পাওয়ার কথা শোনা যায়। এটি যে দুর্নীতিবাজচক্রের কারসাজি তা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। ঈদগাহ-মনসুরাবাদের জনগণ যখন সড়ক অবরোধ করলো তখন ওয়াসার পক্ষ থেকে ওই এলাকায় দ্রুত পানি সরবরাহের ঘোষণা দেয়া হলো। কিন্তু প্রশ্নটি হচ্ছে, প্রতি মাসে ওয়াসার অনুকুলে বিরাট অঙ্কের বিল পরিশোধ করেও গ্রাহকদের অবরোধ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে পানি পাওয়ার অধিকার আদায় করতে হবে কেনো?
ওয়াসার কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত লোক পানি সরবরাহে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে ভাউজার বাণিজ্যে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আছে বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে দৈনিক পূর্বকোণের পাঠকের কলামে ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন মতও প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে দুর্গন্ধময় পানি পাওয়ার খবরও পুরনো। ভৌতিক বিলের অভিযোগতো আছেই। কিন্তু সমস্যা সমাধানে বলিষ্ঠ উদ্যোগ না থাকায় জনজীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। এটি কোনো মতেই জনকাম্য নয়। নাগরিক জীবনের পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতেও তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ওয়াসার উচিত এখনই এ ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া। আর পানিসংকট নিরসন করতে চাইলে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্র্নীতিবাজচক্রের মূলোৎপাটন ও সৎ মানুষদের দায়িত্ব প্রদানে মনোযোগ দিতে হবে ওয়াসাকে। নিশ্চিত করতে হবে ওয়াসার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। বন্ধ করতে হবে দলীয় লোকদের অপতৎপরতাও। ওয়াসাকে করতে হবে পুরোপুরি জনবান্ধব। মনে রাখতে হবে, পানি ছাড়া নগরজীবন অচল। বিকল্প কোনো উৎস না থাকায় নগরাঞ্চলে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিই নাগরিকদের একমাত্র ভরসা। এ অবস্থায় নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ওয়াসার দায় কতটুকু তা নতুন করে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা আশা করতে চাই, নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ওয়াসা সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট