চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীবান্ধব সমাজ গঠনে জোর দিন

৮ মার্চ, ২০২০ | ২:২৭ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্র ও সমাজজীবনের সর্বত্র নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ নানা অনুষ্ঠানমালায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারীদিবস। সার্বিক বিচারে বাংলাদেশে এখন নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। নানা ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে গেছে। এটা আশা জাগানিয়া খবর, সন্দেহ নেই। তবে জাতিসংঘের সিডও সনদ অনুযায়ী নারীর প্রতি বৈষম্য এখনও দূর হয়নি। এখনো পদে পদে নারীরা লাঞ্চিত ও বঞ্চিত হচ্ছে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে নারীর কাক্সিক্ষত অগ্রযাত্রা হচ্ছে না। নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ‘জেন্ডার সোশ্যাল নর্মস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তাতে দেখা যাচ্ছে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এ সংখ্যা ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ নারী-পুরুষের মধ্যে ৯০ জনই নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক নারীদিবস নারীসমাজের অগ্রযাত্রায় বাধা চিহ্নিতকরণ ও দূরীকরণে সুযোগ তৈরি করবে। একইসঙ্গে নারীসমাজকে সব বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে ও নিজেদের সম্মানজনক অবস্থান তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করবে, সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশে নারীর অধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন ও বাধাহীন এগিয়ে যাওয়ার জন্যে বহুমাত্রিক উদ্যোগ আছে। এতে ফলও আসছে। আজ নারীসমাজ পূর্বাপেক্ষা অনেক এগিয়ে গেছে। নারীর সাফল্যের কীর্তিগাথা সর্বত্র। নারীর ক্ষমতায়ন এক সময় ছিল বিলাসী স্লোগান। এখন তা আনন্দময় বাস্তবতা। নানা অনুসন্ধানী ও গবেষণারিপোর্ট বলছে, সামগ্রিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশে। আজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতাসহ সামাজিক উন্নয়নের প্রায় প্রতিটি সূচকেই নারীর অগ্রগতি দৃশ্যমান। কৃষি, ক্ষুদ্রঋণ ও পোশাকশিল্পসহ জাতীয় অর্থনীতির সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই নারীর অবদান স্বীকৃত। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি কোনো ক্ষেত্রেই নারী আজ পিছিয়ে নেই। দেশ-বিদেশের নানা উচ্চতর পদ ও প্রতিষ্ঠানেও বাংলাদেশের নারীদের পদচারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত। বৈশ্বিকবিচারে বাংলাদেশে নারীর এগিয়ে যাওয়ার চিত্র এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় ঈর্ষণীয়। আর ‘আপন ভাগ্য জয়’ করার সংগ্রামে পুরুষ নারীর সহযাত্রী। তবে নারীর এই সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে যে পথপরিক্রমণ করতে হচ্ছে তা মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ নয়।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী ৫০ শতাংশ পুরুষ মনে করেন, চাকরির ক্ষেত্রে নারীর চেয়ে তাদের অধিকার বেশি। জরিপে অংশ নেওয়া এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন, পুরুষ তার সঙ্গীকে মারধর করলেও তা গ্রহণযোগ্য। আদতে বিশ্বের কোনো দেশেই লিঙ্গসমতা নেই বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে। বিভিন্ন গবেষণাজরিপ বলছে, নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতাই হচ্ছে নারীঅধিকারের সবচেয়ে মারাত্মক লঙ্ঘন। স্থান ও কালভেদে সহিংসতার ধরন ভিন্ন হলেও ফলাফল সবক্ষেত্রেই অভিন্ন। আবার সহিংসতার মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। তা শুধু শারীরিক নির্যাতনেই সীমাবদ্ধ থাকতেছে না, অনেক ক্ষেত্রে বিপন্ন করে তুলছে নারীর জীবনও। যৌতুকের বলি থেকে শুরু করে এসিড সন্ত্রাস, যৌন হয়রানিসহ নানা কারণে বাংলাদেশের নারীদের জীবন আজ বিপন্ন। সরকারের সদিচ্ছা এবং নারীর নিরাপত্তার পক্ষে শক্ত আইন থাকার পরও সহিংসতার এই দানবকে কেনো থামানো যাচ্ছে না, তা নির্ণয় করা, একইসঙ্গে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। নারীর কাজের আর্থিক মূল্য চিহ্নিত হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গেও নারীর অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু সেই স্বীকৃতি এখনও বহুলাংশে অধরা থেকে গেছে।
আমরা মনে করি, নারীর ন্যায্য অধিকারের প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীলতা, অগ্রসরমানতা ও অসাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে নারীমুক্তির সংগ্রামের সম্পর্ক স্পষ্ট করা দরকার। পাশাপাশি নারীর কল্যাণে ‘নারীবান্ধব’ সমাজ গঠনেও জোর দিতে হবে। মনে রাখা দরকার, বিশ্বায়নের এই যুগে নারীসমাজকে বাদ দিয়ে একুশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা অসম্ভব। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব নারীকে আমরা অভিবাদন জানাই। নারীর অন্তহীন সংগ্রামের জয় হোক। নারীশক্তির উজ্জীবনে মহিমান্বিত হোক পৃথিবী। নারীর অধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে শান্তি, স্থিতি, গণতন্ত্র ও মুক্তির সব পথ খুলে যাক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট