চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে চাই সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ

৬ মার্চ, ২০২০ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

নানা কারণে দেশে অগ্নিকা-ের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারেই বেড়ে চলেছে। এসব দুর্ঘটনায় জীবনহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু প্রতিরোধমূলক তৎপরতা তেমন নেই বললেই চলে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে চলেছে। ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে প্রচুর। গত রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নগরীর হালিশহর থানার বড়পোল এলাকায় একটি কলোনিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধ হয়ে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ আরো কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ ও বন্দর ইউনিটের চারটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি। ঠিক কি কারণে আগুন লেগেছে তা তদন্তে শণাক্ত হবে নিশ্চয়ই। তবে অগ্নিকা-ের ঘটনাটি ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, অগ্নিকা-ে জীবন ও সম্পদহানির ঘটনা সাংবাৎসরিক। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে দেশে। প্রায়ই বস্তি, গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানায় অগ্নিকা-ের খবর পাওয়া যায়। অগ্নিকা-ে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। দমকল বাহিনীর প্রতিবেদন বলছে, গত বছরেই শুধু সারাদেশে ২৪ হাজার ৭৪টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছে ১৮৫ জন। আহত হয়েছেন সহ¯্রাধিক। সম্পদহানি হয়েছে ৩৩০ কোটি ৪১ লাখ টাকার। যদিও নানাবিধ সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কারণে দেশের শিল্প-কারখানায় আগুনের ঘটনা কমছে। তবে অগ্নিকান্ড বাড়ছে আবাসিক ভবনে। অসতর্কতাই যে এর মূল কারণ, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সারাদেশে গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে আগুনে পুড়েছে অন্তত ১২ হাজার মানুষ। আর এর মধ্যে মারা গেছে এক হাজার ৯১৬ জন। আর সম্পদহানির পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি থেকে চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত দুই বছরে চট্টগ্রাম জেলায় ১৩ শতাধিক অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকা-ের বেশিরভাগই হয়েছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে। দিনকয়েক আগে নগরীর মির্জাপুলের বস্তি এলাকায় সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি অগ্নিকা-ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উল্লেখ্য, ফায়ার সার্ভিস ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চট্টগ্রামে পরিচালিত এক জরিপে নগরীর ৪২টি এলাকাকে অতিঝুঁঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তন্মধ্যে ১৩টি রয়েছে বস্তি ও কলোনি। উল্লেখ্য, বিদ্যুতের শর্টসার্কিট, গ্যাস বিস্ফোরণ, দাহ্য কেমিক্যাল গোডাউন, রান্নাঘরসহ নানা ক্ষেত্রই অগ্নিদুর্ঘটনার উৎস হলেও এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ খুবই দুর্বল। ফলে প্রতি বছরই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হতাহত ও সম্পদহানির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে অগ্নিকান্ডের কারণ উল্লেখ করে নানা সুপারিশ করে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য। কিন্তু এসব সুপারিশমালা বাস্তবায়ন হয় খুবই কম।
বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, সংঘটিত অগ্নিকা-ের ৬৫ থেকে ৭০ ভাগই বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে ঘটছে। কারণ বেশিরভাগ স্থানেই বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা অনেকটাই নাজুক ও উপেক্ষিত। পরিসংখ্যান মতে, যে পরিমাণ দগ্ধ রোগী হাসপাতালে যান, তাদের বড় অংশই বৈদ্যুতিক আগুনে পোড়া মানুষ। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট অগ্নিকা-ের দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই প্রতিরোধ করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে উন্নতমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান দ্বারা ওয়্যারিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয় না। ফলে শর্টসার্কিটজনিত দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার। নিয়মিত বৈদ্যুতিক ও গ্যাসের লাইন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাও প্রয়োজন। আর শুষ্ক মৌসুমে যেহেতু অগ্নিকা- বেশি ঘটে, সেহেতু এ সময় সবারই বিশেষভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। গ্যাসের চুলার ব্যবহারেও সতর্কতা প্রয়োজন। এছাড়া বৈদ্যুতিক লাইন, সুইচ, ক্যাবল এসবের মধ্যে কোনো ত্রুটি দেখা দিচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারেও বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন হতে হবে দিয়াশলাই, মোমবাতি, কয়েল, সিগারেট প্রভৃতি অগ্নি উদগারক বস্তুর ব্যবহারেও। মনে রাখতে হবে, দেশে বিদ্যুৎ ও আগুনের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকা-ের ঘটনা এবং ক্ষয়ক্ষতিও বাড়ছে। এটি উদ্বেগকর। অগ্নিকা-ের এই দুর্ভাগ্যজনক চিত্রের অবসানে জনসচেতনতা সৃষ্টি, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো ডেকোরেটরের উপকরণের সঙ্গে প্রয়োজনীয়সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা, জলাধার সংরক্ষণসহ বহুমাত্রিক উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি নাশকতামূলক অগ্নিকা- প্রতিরোধেও কঠোর পদক্ষেপ থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট