চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এবং মার্চ মাস

ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলি

৩ মার্চ, ২০২০ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

মার্চ মাসের সাথে এদেশের মানুষের ঐতিহ্যগত যে সম্পর্ক তা ইতিহাসের উজ্জ্বল আলোয় চিরভাস্বর। এদেশের মুক্তির আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে, অর্জন-বিসর্জনে মার্চ মাস দিয়েছে বীভৎস কাল রাতের বিভীষিকা। এনেছে উজ্জ্বল আলোর উদভাষণ। হাজার বছরের শৃঙ্খলমুক্তি। ঊনপঞ্চাশ বছর আগে এই মার্চ মাসই বাঙালি মুক্তির তথা স্বাধীনতার দ্বার খুলে দিয়েছিল। মুক্তিপাগল বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ ধাপে অবস্থান করছিল ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে। জাগ্রত জাতির যুদ্ধ করেছিল তার হাজার বছরের মুক্তির জন্য। স্বাধীনতার জন্য নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মরণপণ যুদ্ধের সূচনা এই মার্চ মাসে। অগ্নিঝরা মার্চ, রক্তঝরা মার্চ, প্রাণঝরা, প্রাণহরা বিসর্জনের মাস মার্চ।

১৯২০ সালের এই মাসেই অর্থাৎ ১৭ মার্চ বাঙালি মুক্তির মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। আজ বাঙালির সামনে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণিল উদ্ভাস। বছরজুড়ে মুজিব বর্ষের শতবর্ষ সমাসীন।
বাঙালির হাজার বছরের মুক্তির মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান । পরবর্তীতে ‘বঙ্গবন্ধু’ এবং বাঙালি জাতিসত্ত্বার জনক। ইতিহাসের শব্দ, বাক্য, অধ্যায় থেকে বাঙালির সমগ্র ইতিহাস। সমগ্র দুনিয়ার মানুষের মননে অভিষিক্ত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা যদি বাঙালির বিগত শতবর্ষের ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, মার্চ কখনো আন্দোলনে উজ্জ্বল, কখনো রক্তাক্ত, কখনো বিভীষিকাময়, কখনো অনিরুদ্ধ, কখনো আলোকবর্তিকা, কখনো ইতিহাসের মাইলফলক। সবশেষে বাঙালির স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। মার্চের এই ঐতিহ্যিক বৈচিত্র্য বহুমাত্রিক। অর্জনে, বিসর্জনে, আনন্দে উল্লাসে, প্রতিশ্রুতি, প্রতিজ্ঞার অনিরুদ্ধ ইতিহাসে ভরা বাঙালির মার্চ।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে। পাকিস্তানের জনক ১৯৪৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।’ ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে।’ প্রতিবাদে ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হরতাল পালিত হয়। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন ২৮ বছর বয়সী তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ভাষা প্রশ্নে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সভায় ফজলুল হক মুসলিম হলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের প্রস্তাব দেন শেখ মুজিবুর রহমান।

মার্চ মাসের ১১ তারিখে তিনি সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেন। সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছাত্রদের আন্দোলন ও বিক্ষোভের মুখে ১৫ মার্চ তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্রজনতার সভার আয়োজন করেন তিনি। সভায় শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। প্রতিবাদে শেখ মুজিব ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধর্মঘটের ডাক দেন।
১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের ধর্মঘটে সমর্থন দান করেন। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিকভাবে তাঁকে জরিমানা করে। সর্বশেষ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ইতিমধ্যেই আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।

১৯৫১ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস পালিত হয়। ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা সমগ্র দেশে বিস্তৃত হতে থাকে। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলে মুজিব অনশন করেন। তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হতে থাকে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে এগিয়ে যায়। পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ এবং পরে গুলি চালায়। জব্বার, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়। জব্বারের মাথার খুলি উড়ে যায়। বরকতসহ ১৭ জন আহত হয়। বরকত অপারেশনের টেবিলে মারা যায়। ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে ২৭ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলখানা থেকে মুজিবকে মুক্তি দেয়া হয়।
১৯৫৩ সালে মুজিব আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালের ৭ থেকে ১১ মার্চ পূর্ব বাংলার আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুজিব গোপালগঞ্জ আসনের প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। বায়ান্নের ভাষা সংগ্রামের পরে এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। নির্বাচনের ফলাফল মুসলিম লীগ সরকারকে বিপর্যয়ে ফেলে দেয়। ১৯৫৪ সালের ২৩ মার্চ চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনা কাগজ কলে বাঙালি -অবাঙালি শ্রমিকদের মাঝে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা বাঁধানো হয়। ১৫ মে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার শপথের দিনেও নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিলে দাঙ্গা বাধানো হয়।

এতে প্রায় ছয় শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়। এভাবে যুক্তফ্রন্টের বিজয়কে নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হয়।
১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত হয়। মারি সম্মেলনে পূর্ব বাংলার নামকরণ করা হয় পূর্ব পাকিস্তান। তীব্র প্রতিবাদ করে শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচিত হয়। ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চের শাসনতন্ত্র বাতিল করেন। পাকিস্তানে প্রথম সামরিক শাসন জারি হয়। মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। আইয়ুবের সামরিক শাসনের দিন গুলো এভাবেই চলতে থাকে। ইতিমধ্যেই শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৬৪ সালের ৬ ও ৭ মার্চে ঢাকার গ্রীন রোডে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৪ সালের ১১ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ১৬ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। ২৯ মার্চ পল্টন ময়দানে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির জনসভায় শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, ‘ভোটাধিকার না দিলে ট্যাক্স দেওয়া বন্ধ করা হবে।’

১৯৬৫ সালের ২১ মার্চ সাজানো জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আইয়ুব সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এটিই ছিল মুসলিম লীগের সর্বশেষ নির্বাচন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এই নির্বাচনের ফলাফল বিপর্যয় থেকেই তীব্রভাবে ঘুরে দাঁড়ান শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের অরক্ষিত অবস্থা মুজিবকে দারুণভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। পাকিস্তানের শাসক কর্তৃক মুজিবকে প্রথমবারের মতো ভারতীয় দালাল’ বলে গণ্য করা হয়। ১৯৬৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধীদলীয় সম্মেলনে মুজিব প্রথমবারের মতো বাঙালির বাঁচার দাবি ছয় দফা উপস্থাপন করেন। সাবজেক্ট কমিটিতে তা বাতিল হয়। পরে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত আসেন এবং ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে ছয় দফা তুলে ধরেন। ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পত্রিকা গুরুত্বের সাথে প্রচার করে। জনগণের মাঝে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রজনতা কর্তৃক ছয় দফাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ছয় দফাকে সমর্থন করে বিবৃতি দেয়। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘিতে ছয় দফার উপর প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৬৬ সালের ১৮, ১৯ এবং ২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয় ঢাকার হোটেল ইডেনে। এই অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি এবং তাজউদ্দিন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মুজিব অপ্রতিরোধ্য চেতনায় উদ্ভাসিত হন। ২০ মার্চ মুজিব পল্টনের জনসভায় ছয় দফার উপর ভাষণ দেন। ২৩ মার্চ ভাষণ দেন মানিকগঞ্জের শিবালয়ে। এরপর তিনি ছয় দফার বাহনে সারা দেশ চষে বেড়ান। হামলা মামলা চলতে থাকে। আওয়ামীলীগের বেশিরভাগ কর্মীকে জেলে নেয়া হয়।
১৯৬৬ সালের এপ্রিল থেকে সম্পূর্ণ ১৯৬৮ সাল শেখ মুজিব জেলে জেলে কাটান। ইতিমধ্যেই সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছয় দফার সাথে যুক্ত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে পূর্ব পাকিস্তানের কৃষক, শ্রমিক, মজুর-মুটে, ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, জনতা, শিল্পী সংস্কৃতিকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গে পাকিস্তানের আইউব সরকার বেসামাল হয়ে পড়ে। আসাদুজ্জামান আসাদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯। আন্দোলন অদম্য তীব্রতা ধারণ করে। ২৪ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেনির ছাত্র মতিউর রহমান। ১৫ ফেব্রুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয় আগরতলা মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে। ১৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং রসায়ন বিভাগের রিডার ডক্টর শামসুজ্জোহা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা উত্তাল জনতরঙ্গে ভেসে যায়। গণ-অভ্যুত্থান মুক্তির আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র জনতা স্লোগান দেয়, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা।’ ‘তুমি কে, আমি কে- বাঙ্গালী বাঙ্গালী।’ ‘জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো।’ গণ-অভ্যুত্থানে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনাবোধ এবং জাগরন অদম্য, অনিরুদ্ধ, অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে । প্রতিটি মৃত্যুই আন্দোলনের তীব্রতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে থাকে।
আইয়ুব খানের একাধিক প্রতিশ্রুতি কোন কাজেই আসে না। তার ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে যোগ না দেয়ার জন্য শেখ মুজিব দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন। ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইয়ুব খান চেষ্টা করেন। শেষে ২২ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান শর্তহীনভাবে আগরতলা মামলা তুলে নেন। শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকলকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ কর্তৃক ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন।

১৯৬৯ সালের ১০ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত আইয়ুবের ডাকা গোলটেবিল বৈঠক চলে। আইয়ুব খান ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি অগ্রাহ্য করলে গোলটেবিল আলোচনা ব্যর্থ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৪ মার্চ ঢাকায় ফিরে আসেন। ১৯ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান পদত্যাগ করেন। গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় ২৫ মার্চ আইয়ুব খান তার সেনাবাহিনীর প্রধানের কাছে ক্ষমতা হারান।
জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। এভাবে ১৯৬৯ সাল নির্বাচনের আন্দোলনে কেটে যায়। আসে নির্বাচনের বছর ১৯৭০ সাল। সত্তরের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। ইয়াহিয়া সরকার বিপাকে পড়ে যায়। ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার দাবি জানান। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো সাথে ষড়যন্ত্র করে ইয়াহিয়া ১ মার্চ হঠাৎ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। সারা বাংলায প্রতিবাদের ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়।
১৯৭১ সালের মার্চ মাস বাঙালির জাতীয়তাবাদী জাগরণ ও আন্দোলনের নতুন মোড়ক উম্মোচিত হয়। বড় বড় শহর এবং ঢাকায় সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। (চলবে)

ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলি মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, কর্ণফুলী গবেষক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট