চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্থায়ী উন্নয়ন ও সুখী সমাজ গঠনের চাবিকাঠি স্বনির্ভর অর্থনীতি

২৩ মে, ২০১৯ | ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতা মুক্ত। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশে যে অশনি-সংকেত একসময় বিরাজ করছিল তা এখন নেই। বর্তমানে দেশের অপ্রচলিত পণ্য বিদেশে রফতানি করে সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আমরা তুলনামূলকভাবে সবল করে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটিতে বহু ধরনের বিদেশী ফলমূলের চাষ করার প্রচেষ্টা নিয়ে এখন চলছে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ার প্রচেষ্টা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত নানা ধরনের ফল ক্রমান্বয়ে চাহিদা পূরণ করে জনগণের শরীর-স্বাস্থ্যের পুষ্টি ও ভিটামিন সরবরাহ ছাড়াও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা করবে। পরিকল্পিত রপ্তানির ব্যবস্থা হলে। কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক চিত্রকে যেমন আমরা উজ্জ্বল করে তুলতে পালি। তেমনই দেশের উন্নয়নকেও। এটি বর্তমানে একটি বাস্তব সত্য। এ ধরনের পরিকল্পিত চাষাবাদ চলছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বিভিন্ন ধরনের ফলমূল উৎপাদনের সাফল্যজনক উদাহরণ বেশ কিছুই সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে সৃষ্টি হয়েছে। দেশের উদ্যোগী কিছু মানুষ আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহী কিছু যুবক বেকারত্বের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসায় প্রত্যাশী কিছু কিছু উদ্যোগী তরুণ, অধ্যবসায়ী ও নবীন উদ্যোক্তা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এমনই সাফল্যের নজির স্থাপন করেছে। এ সমস্ত সাফল্যের উদাহরণ তাদের নিজ নিজ এলাকার অন্যান্য চাষী ও উৎসাহী পরিবারগুলোকেও অনুপ্রাণিত করেছে। এভাবে তারা ব্যক্তিগতভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন। সাথে সাথে নোতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এদেশের দরিদ্রজনের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যেরও ব্যবস্থা করে দিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করে দিতে পারছেন।
এদেশের মাটির উর্বরা শক্তি ও বহু প্রজতার যে গুণ রয়েছে তা আজ আমাদের কৃষক সমাজের কাছে উদঘাটিত। আমাদের বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদগণ তাদের অব্যাহত গবেষণার মাধ্যমে এদেশে অপ্রচলিত কৃষিজ পণ্য ও ফলমূল চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিজ্ঞান এমনইভাবে আমাদের চাষীভাইদের অবহিত করে গেলে এবং মাটির গুণাগুণ, চরিত্র, উর্বরতা ও কালোপযোগী ফসল চাষের ধারণা দান করে গেলে, নদীমাতৃক এই ব-দ্বীপের মাটি যে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পথে বিশাল ভূমিকাবাহী হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহের কোন কারণ নেই।
আমরা চাই, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের এই অসীম সম্ভাবনাময় দিকটি সংশ্লিষ্ট সকলের উপযুক্ত পরিচর্যা পাক, পৃষ্ঠপোষণা লাভ করুক। দূর হোক বাজারজাতকরণের সকল প্রতিবন্ধকতা। এদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর এর সন্নিহিত কিছু এলাকা একটা সময়ে আশি^ন-কার্তিকের দিনগুলোতে মঙ্গা কবলিত হয়ে থাকতো প্রায় প্রতি বছর। এখন এ সমস্ত এলাকায় কিছু যুবক বেশ কয়েক বছর যাবৎ কৃষি বিভাগের গবেষক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে উন্নতজাতের আপেল কুল ও বাউকুলের চাষ করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। চিরাচরিত মঙ্গার বিরুদ্ধেও প্রতিকার খুঁজে পেয়েছে। এই কুলচাষে সংযুক্তরা এখন সুখী, অর্থনৈতিক সাফল্যের মাধ্যমে।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ফল ও ফষল তরিতরকারী, শাক সবজী ইত্যাদির উৎসাহী পরিকল্পিত বাণিজ্যিক উৎপাদন যদি আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হয়ে ওঠে। তবে এমন উদ্যোগ অভাবী অঞ্চলে এবং কর্মহীন অলস মৌসুমের দিনগুলোতে চাষাবাদে আগ্রহী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াটাই আমাদের জন্যে মঙ্গল হবে। এর জন্যে চাই দেশের ভেতরে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক কর্মদ্যোগ।
অর্থনৈতিক জীবনযাত্রা পাল্টে যেতে চলেছে উদ্যোগী মানুষের প্রচেষ্টায় আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামেও দেশী-বিদেশী নানা ধরনের ফলের চাষের মধ্য দিয়ে আসছে এই পরিবর্তন। আনারসের কথা, পেঁপের কথা তো আমরা সবাই জানি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কমলার চাষ আর বিদেশী মাল্টা চাষের সাফল্য। রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র বিশেষ সফলতা দেখাতে পেরেছে রসালো ফল মাল্টার উৎপাদনে। দেখা যাচ্ছে, বিদেশী ফলমূল এদেশে ফলানো যায় না, এমন ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন এই সম্ভাবনাময় সাফল্যকে এদেশের ও এখানকার জনগণের অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে ব্যবহারের উপযুক্ত পরিবেশ রক্ষা করাই আমাদের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। এখন নোতুন আঙ্গিকে ও উদ্ভাবনে উৎপাদিত ফলমূল, শাকসব্জী, তরি-তরকারী ইত্যাদি পণ্যের পরিকল্পিত উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ সুযোগ উৎসাহী উদ্যোক্তাবৃন্দের জন্য সম্প্রসারিত ও নিশ্চিত করা হলে জনজীবনে সচ্ছলতা স্থায়ী করা সম্ভব হবে। এভাবেই দেশের ও দেশবাসীর প্রকৃত উন্নয়ন ও ভাগ্য পরিবর্তন স্থায়ী ও সংহত করা গেলে মুখ্য সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট