চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

প্রাণীদেহে রক্ত সঞ্চালন

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

২৩ মে, ২০১৯ | ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

­৬২৮ সালে ‘উইলিয়াম হার্ভের’ ঘোষণা থেকে প্রাণিদেহের শিরা-উপশিরায় কিভাবে রক্ত বয়ে চলে তার ধারণা প্রথম পাওয়া যায়। তিনিই প্রথম বলেন, কিভাবে প্রাণীর হৃদপি- রক্ত পাম্প করে ধমনীর মাধ্যমে পাঠায় শরীরের যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেঁ এবং সে রক্তই আবার শিরার মধ্য দিয়ে হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে।
এ আবিষ্কারের প্রায় ৩০ বছর পর বৃটিশ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘রিচার্ড লোয়ার’ এক কুকুরের শিরা থেকে অন্য এক কুকুরের শিরায় রক্ত সঞ্চালন করতে সক্ষম হন। বাইরে থেকে মানুষের শিরায় রক্ত ঢোকানোর চেষ্টা সফল হয় তার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ১৬৬৭ সালের দিকে।
১৮১৭ সালে ইংরেজ শরীর বিজ্ঞানী ‘জেমস্ ব্লীন্ডেল’ কুকুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখালেন যে, ক্রমাগত রক্তপাতের ফলে মুমূর্ষু কোন প্রাণীর শরীরে বাইরে থেকে রক্ত দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। সম্ভবত তিনিই প্রথম জোর দিয়ে বলেন, কোন প্রাণীর শরীরে রক্ত সঞ্চালন করতে হলে সে রক্ত তার স্বজাতির হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
ডা. ব্লীন্ডেল এর পথ অনুসরণ করে রক্ত সঞ্চালনের ব্যাপারে নতুন করে অনেকে এগিয়ে আসেন। রক্ত সঞ্চালনকে সার্থক করে তোলার জন্য যে মানুষটির কাছে বিশ^বাসী কৃতজ্ঞ তাঁর নাম ‘ল্যান্ডস্টেনার’।
ভিয়েনায় বসে গবেষণা করার সময় অষ্ট্রিয়ার এ চিকিৎসা বিজ্ঞানীর হঠাৎ একদিন মনে হল রক্ত যখন মেশানো হয় তখন কোন সময় সেগুলো মিলে যায় আবার কখন বা সেগুলো ঘন হয়ে জমাট বাঁধে।
বেশ কিছুদিন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর পর ১৯০০ সালে ‘ল্যান্ডস্টেনার’ মানুষের রক্তকে গুণগত মান অনুযায়ী তিনটি গ্রুপে ভাগ করেন। এগুলোর নাম অ, ই এবং ঙ পরের বছর আবিষ্কৃত হলো অই. ‘ল্যান্ডস্টেনার’ দেখালেন, যাদের রক্তের গ্রুপ ঙ তাদের রক্ত সকলের শরীরেই কাজ করে। যাদের গ্রুপ অই তারা যেকোন লোকের রক্ত নিতে পারলেও তারা শুধু অই অধিকারী লোককে রক্ত দিতে পারবে; যাদের গ্রুপ অ আর ই তারা রক্ত নিতে পারবে নিজেদের গ্রুপ আর ঙ গ্রুপের কাজ থেকে।
‘ল্যান্ডস্টেনারের এ আবিষ্কারের পর রক্ত সঞ্চালনের ব্যাপারটি বিজ্ঞানসম্মত রূপ নেয়। শল্য চিকিৎসকদের পক্ষে যে কোন ধরনের অস্ত্রোপচারে আর বাধা রইলো না। বিশে^র বিভিন্ন দেশে ‘ব্ল্যাড ব্যাঙ্ক’ তৈরী হতে থাকলো।
লেল্যান্ড ক্লার্ক এক অভিনব পরীক্ষার মাধ্যমে চমকে দিয়েছিলেন সারা বিশে^র বিশেষজ্ঞ মহলকে। পরীক্ষাটা ছিলো স্বচ্ছ তরল ভর্তি একটি জারের মধ্যে একটা ইঁদুরকে ছেড়ে দেয়ার পর ডুবে যাওয়ার পরিবর্তে তরলের মধ্যে ডুবন্ত ইঁদুরটি দিব্যি শ^াস-প্রশ^াসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ‘ক্লার্ক’-এর কারণ হিসেবে বলেছিলেন ঐ তরলটি হলো ‘ পারফ্লুরোকেমিক্যাল’ জাতীয় এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যার অক্সিজেন ধরে রাখার ক্ষমতা অপরিসীম। তরলের মধ্যে মিশে থাকা অক্সিজেনই বাঁচিয়ে রেখেছিলে ইঁদুরটিকে। ফ্লোরিন থেকে সৃষ্ট ঐ রাসায়নিক পদার্থটিকে রক্তের বিকল্প হিসেবে কাজে লাগানো যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তা ভাবনার সূত্রপাত হলো ‘ক্লার্কের’ সে পরীক্ষাটি থেকেই।
রক্তের উপাদান হচ্ছে তরল প্লাজমা এবং তিন ধরনের কোষ। যেমন, লোহিত কণিকা, শে^তকণিকা এবং অনুচক্রিকা। লোহিত কণিকার জন্য রক্তের রং লাল দেখায়। এ লোহিত কণিকার মধ্যে হিমোগ্লোবিন নামে প্রোটিন জাতীয় এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ থাকে। তার প্রধানকাজ হলো ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে শরীরের অসংখ্য কোষ এবং কোষকলায় পৌঁছে দেয়া।
রক্ত দিলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, অসুখ-বিসুখ হয় এরকম অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। কিন্তু ধারণাটা সঠিক নয়। তবে, কোন সুস্থ মানুষের শরীর থেকে একেবারে কখনোই ২৫০ মিলিলিটারের বেশি রক্ত নেয়া উচিত নয়। স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করলে কয়েকদিনের মধ্যেই ঐ রক্ত শরীরের মধ্যে নতুন করে তৈরি হয়ে যায়।
অথচ ঐ সামান্য রক্তটুকুতেই একজন মুমূর্ষু, রোগীর জীবন বেঁচে যায়। রক্ত ঘাটতি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ফেরাম ফস, কেলকেরিয়া ফস নিয়মিত সেবন করুন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট