চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

খুঁটির কারণে কাজ বন্ধ থাকা দুঃখজনক

জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাঁধা দূরীকরণে দ্রুত উদ্যোগ নিন

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুতের খুঁটির কারণে সিডিএ এভিনিউ’র জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার খবরটি খুবই দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, বিদ্যুতের খুঁটির কারণে গত ১৯ দিন ধরে প্রকল্প কাজের কোন অগ্রগতি নেই। বিদ্যুত বিভাগের দায়সারা ভাবের দরুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনগণকে। সহসা এই বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ঢাকা থেকে অনুমতি আসার পর খুঁটি অপসারণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। সেই অনুমতি কখন আসবে তাও স্পষ্ট নয়। যেখানে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে, সেখানে বিদ্যুতের খুঁটির কারণে প্রকল্পের কাজ এভাবে দিনের পর দিন বন্ধ থাকবে তা মেনে নেয়া যায় না।

দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত ‘১০ মণ ঘি জোগাড় হলে রাধা নাচবে! বিদ্যুতের খুঁটিতে হ য ব র ল’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিডিএ এভিনিউ এলাকার সড়কের উভয় পাশে ড্রেনের উপর বিদ্যুৎ খুঁটি রয়েছে ২৪টি। তন্মধ্যে কয়েকটি ৩৩ হাজার ভোল্টের। কিন্তু খুঁটি অপসারণের ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের গড়িমশির কারণে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ড্রেন সম্প্রসারণ কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক খুঁটিই প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সিডিএ এভিনিউসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ খুঁটির কারণে আটকে আছে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে, বারবার পিডিবিকে চিঠি দিলেও তারা নির্দিষ্ট সময়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাচ্ছে না। যদিও নানা জটিলতার কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো দ্রুত সরানো যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে এভাবে সময় নষ্ট হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সময়মত ড্রেনের কাজ শেষ না হলে গত বছরের মত এবারও বর্ষায় জলাবদ্ধতাজনিত দুর্ভোগ পোহাতে হবে নগরবাসীকে। প্রসঙ্গত, ড্রেন সম্প্রসারণের কাজ থমকে যাওয়ায় পথচারীদের চলাচলেও বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ড্রেনগুলোও আবর্জনা ও ময়লাযুক্ত পানিতে ভরে যাচ্ছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আবার ড্রেনের কর্তনকৃত মাটি রাস্তার ওপর থাকায় পথচারীদের হাঁটাচলা কষ্টসাধ্য হচ্ছে। একইসঙ্গে ধুলাদূষণও বেড়ে গেছে। এমন চিত্র কখনো নাগরিক কাম্য নয়।

উল্লেখ্য, বছরকয়েক ধরে বর্ষায় জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের জনগণের ললাটলিখনে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হলেও কোনোটিই বাস্তবায়ন করা হয়নি যথাযথভাবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত কয়েক বছরে কমবেশি সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গৃহীত হলেও সুচারু বাস্তবায়নের অভাবে দৃশ্যমান সুফল অর্জিত হয়নি। বাস্তবায়নের অভাবে বরাদ্দকৃত অর্থও ফেরত গেছে। ফলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকেও মুক্তি মিলেনি চট্টলবাসীর। সামান্য বৃষ্টিতেই স্থবির হয়ে পড়ছে দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মহানগর জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্মব্যস্ত মানুষদের জীবন। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার চরম নেতিবাচক পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতেও। এমনতর প্রেক্ষাপটে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার প্রায় ছয়হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় সিডিএ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন যথাসময়ে এবং সুচারুভাবে যেন প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। সংগতকারণে সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থার উচিত হবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা। বিদ্যুতের খুঁটি বা অন্য কোনো কারণে কাজ থমকে যাবে, তা জনকাম্য হতে পারে না।

আমরা চাই যথাসময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হোক; একইসঙ্গে জনগণের টাকায় যেনতেনভাবে যেনো প্রকল্পের বাস্তবায়ন না হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে। আর সামনে আসছে বর্ষাকাল। নগরবাসীর জন্যে বর্ষা মানেই পানিবন্দীজনিত আতঙ্কের কাল। তাই বর্ষার আগেই ড্রেনের কাজ সুচরুভাবে সম্পন্ন করে পানি নিষ্কাশনের পথগুলো যাতে নির্বিঘœ করা যায় সে বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে। নালা-নর্দমাসহ পানিপ্রবাহের মাধ্যমগুলোকে পরিস্কার ও সচল রেখে, পাহাড়কাটা বন্ধ করে, বিভিন্ন সেবাসংস্থার কাজে সমন্বয় করে, যখন-তখন ও যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি না করে, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে, জলাধারগুলোর সুরক্ষা দিয়ে পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা এবং জেলাপ্রশাসনকে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। নাগরিকসমাজকেও রাখতে হবে বলিষ্ঠ ভূমিকা। সব পক্ষেরই যদি জোরালো তৎপরতা থাকে তাহলে আশা করা যায়, বর্ষামৌসুমে পানিবদ্ধতার কষ্ট থেকে নগরবাসী কিছুটা হলেও স্বস্থি পাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট