চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এ ধারা অব্যাহত থাকুক শেয়ারবাজারে সুবাতাস

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

সরকারের নানা ইতিবাচক পদক্ষেপের পর সুবাতাস বইছে পুঁজিবাজারে। দার্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা বিনিয়োগকারীরা এখন আড়মোড়া ভেঙে শেয়ার কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এতে শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেনের পালে হাওয়া লেগেছে। সূচকের টানা উত্থানের সঙ্গে প্রতিদিন বাড়ছে লেনদেনের গতি। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রোববার রীতিমতো উল্লম্ফন হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক বেড়েছে ৫৩৩ পয়েন্ট। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে চালু হওয়ার পর এটি ডিএসইএক্স সূচকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান। এর আগে সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি এ সূচকটি সর্বোচ্চ ২৩২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছিল। পুঁজিবাজারে মূল্যসূচক ও লেনদেন বৃদ্ধির এমন খবর নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ।
শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ১৬ জানুয়ারি বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সভা করেন। সেখানে সবার বক্তব্য শোনে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের পাঠানো প্রস্তাবগুলো আমলে নিয়ে তিনি সংকট উত্তরণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাসহ ছয়টি নির্দেশনা দেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, পুঁজিবাজারের জন্য যা যা করার দরকার তা করা হবে। বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়, পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কতিপয় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। স্বল্প-মেয়াদি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত অচিরেই বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। এ নিয়ে চার কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি ৩৪৮ পয়েন্ট বেড়ে রোববার লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৩৪ পয়েন্টের অবস্থানে। মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে উত্থান দেখা দেয়। সেই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে পৌঁছে। পরের কার্যদিবস বুধবার ডিএসইতে ৬০০ কোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ৭০০ কোটি টাকার ওপর। আগের তিন কার্যদিবসের মতো চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। ডিএসইতে লেনদেনের শুরু থেকেই অংশ নেয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে উল্লম্ফনে রূপ নেয় সূচক। সেই সঙ্গে হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায় লেনদেন। উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের লেনদেনকে চাঙ্গা করতে সরকারের কাছে স্বল্প সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ডের দাবি করে আসছিল মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকার হাউসগুলো। এখন এটার কিছুটা প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এসব উদ্যোগের প্রভাবে বাজার এখন ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এখন এ ধারা ধরে রাখতে হবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্য সব সূচকেই এগিয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু এতোদিন উল্টোপথে হেঁটেছে শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজার দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির সূচকগুলোর সঙ্গে এতোদিন তাল মেলাতে পারেনি। এর পেছনে তীব্র তারল্য সঙ্কট, সুশাসনের অভাব, স্বার্থানেষী মহলের গুজব, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবসহ নানা কারণ রয়েছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগ ও ছয় দফা নির্দেশনা নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে। শেয়ারবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ইতিবাচক ফল দিয়েছে। আমাদের বিশ^াস, সংশ্লিষ্টরা দক্ষতা, আন্তরিকতা, সততা ও বিচক্ষণতার সাথে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর সুচারু বাস্তবায়নে সক্ষম হলে পুঁজিবাজারের এখন যে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে, তা অব্যাহত থাকবে। প্রসঙ্গত, বিগত সময়ে দেখা গেছে পুঁজিবাজার চাঙ্গা হওয়ার সাথে সাথেই কিছু অসাধুচক্রের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। তারা অনৈতিক কর্মকা- দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে পুঁজিবাজারে ধস নামায়। বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে কেউ অনৈতিক সুবিধা ভোগের মাধ্যমে আবারও শেয়ার বাজারে ধস নামাতে না পারে। আমরা আশা করতে চাই, পুঁজিবাজারে বহমান সুবাতাস অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগই গ্রহণ করবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট