চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

একুশ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ইউনিকোড সিস্টেম

প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

একুশে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন টঘঊঝঈঙ এ দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর একটা বড় উদ্দেশ্য ছিলো সারা পৃথিবীর জনগোষ্ঠীর ভেতরে ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধিতে আনা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানান দেয়া। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, জাতিসংঘের ৫৬/২৬২ প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০০২ সালে এর অনুমোদন দেয়। বহু ভাষাবাদ ও এর বিস্তৃতি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সাথে জড়িত। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আবার জীববৈচিত্র্যের সাথে জড়িত।

পৃথিবীর উপরিভাগের বৈশিষ্ট্য একরকম নয়। মানবজাতির বসবাস ও সভ্যতার বিকাশ হয় যেখানে জীবনধারণ ও উৎপাদনের সহজ ভূপ্রকৃতি আছে। এ জন্য মানুষের কেন্দ্রীভূত হওয়ার লক্ষণ উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের কর্কট ও মকর ক্রান্তির ভেতরে যাকে নিরক্ষীয় অঞ্চল বলা হয়। চিরসবুজ বনাঞ্চল, মরুঅঞ্চল ও বিশাল হিমালয় পর্বতমালার ও ক্যারিবীয় মায়াসভ্যতার ভিত্তিভূমি ও এতদঅঞ্চলে। টপোগ্রাফীর (ঞড়ঢ়ড়মৎধঢ়যু) ভিন্নতার কারণে প্রাণের ও জীবের ভিন্নতাও লক্ষ্যণীয়। অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু আর কোন ভৌগোলিক পরিবেশে পাওয়া যায় নি। গোবীমরুভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রাণীবৈচিত্র্য সবুজ তৃণভূমিতে তো নয়ই, এমনকি ভারতের হার মরুভূমির প্রাণীবৈচিত্র্যের সাথেও মিলে না। প্রত্যেক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট প্রাণীবৈচিত্র্যের জন্ম দেয়। মানুষের প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রয়োগের ফলে যদি মরুভূমিকে সবুজ তৃণভূমিতে রূপান্তর করি তাহলে মরুভূমির প্রাণীবৈচিত্র্য হারিয়ে যাবে। যা পরিবেশের ভারসাম্যের বিপর্যয় ঘটাবে।
কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জীবনাচরণ হলো সংস্কৃতি। মানুষের সৃষ্টি, তা রাস্তাঘাট, হাতিয়াড় বা টুলস (ঞড়ড়ষং) বা মূল্যবোধ, আদর্শ, ধর্ম, বিশ^াস এগুলোও সংস্কৃতি। সংস্কৃতির চরিত্র নির্মাণে ভৌগোলিক পরিবেশ এক বিশেষ ভূমিকা রাখে। গ্রীষ্মম-লীয় দেশের পোশাক, বাড়ী-ঘর ও তার তৈরি করবার প্রক্রিয়া, চিন্তা-চেতনা উত্তর মেরুর শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে পৃথক। এই হলো সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। এক পরিবেশে এক ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থাও গড়ে ওঠে। চিরহরিৎ অঞ্চলে গাছপালা নির্ভর আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়, যা শীতপ্রধান দেশে অনুপস্থিত। সুন্দরবনের মধু, পাশ্চাত্যে অনুপস্থিত, তাও ভৌগোলিক পার্থক্যের জন্য। এই প্রাণীবৈচিত্র্য, মানুষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকেও রক্ষা ও নির্ধারণ করে। সংস্কৃতির একটি অংশ হলো ভাষা। মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান ধারণা, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, প্রযুক্তির উন্নয়ন, চিকিৎসাব্যবস্থা, রাষ্ট্রচিন্তা, সবই ভাষার মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা-চেতনা সঞ্চারিত হয় ভাষায় সঞ্চিত জ্ঞানের মাধ্যমে। মানুষ ও অন্য প্রাণীদের পার্থক্য হলো, মানুষের ভাষা আছে, এই ভাষায় সে জ্ঞানের সঞ্চয় করে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা ট্রান্সমিট করে। জ্ঞানের সঞ্চয়ের মাধ্যমের উন্নয়ন ও পরিবর্তন আমাদের সমাজ পরিবর্তনের নির্ণায়কও বটে। পাথরে মনের ভাব ও চিন্তা সঞ্চয় করবার কাল থেকে, একে একে প্যাপিরাস, গাছের বাকল, কাগজ ও পরে অডিও ও ভিডিও টেপ, হার্ডডিস্ক, অপটিক্যাল ডিস্ক, ব্লু রে ডিস্ক ইত্যাদি আসলে জ্ঞান ও তথ্য সঞ্চয়ের মাধ্যম। আর এই মাধ্যমের একমাত্র উপায় হচ্ছে ভাষা। ভাষা তাই সভ্যতার বাহন। এ না থাকলে সভ্যতা, সমাজ থাকে না। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আবেদন তাই প্রত্যেক জাতি, তা ছোট বা বড় হোক, তাঁদের ভাষা সংরক্ষণ ও চর্চার সুযোগ তৈরি করতে হবে। কারণ এই ভাষাতেই পৃথিবীর সমস্ত জাতি-গোষ্ঠীর জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি সঞ্চিত থাকে। প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়া ও পলিনেশিয়ায় বহু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অস্তিত্ব আছে, যাঁদের জনসংখ্যা অত্যন্ত অল্প। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণসহ অন্যান্য কারণে অনেক নৃগোষ্ঠীই অবলুপ্তির পথে। এঁদের অবলুপ্তি ঘটলে শেষ হয়ে যাবে ওঁদের ভাষা ও ভাষার সঞ্চিত জ্ঞানের বিষয়সমূহ। আধুনিক মানুষ ক্যান্সারসহ বহু রোগব্যাধিকে এখনও জয় করতে পারেনি।

যদি ভাষা হারিয়ে যায়, তাহলে ভাষাকে কেন্দ্র করে রচিত ভেষজশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান একেবারেই হারিয়ে যাবে। কে জানে আজকের আধুনিক মানুষের রোগব্যাধির বিরুদ্ধে নয়া ঔষধ আবিষ্কারের সূত্রটা বিলুপ্ত প্রায় ওঁদের ভাষায় লুকিয়ে আছে? ওঁদের ভাষাকে তাই বিলুপ্ত হতে দেয়া যাবেনা। এও আমরা জানি, হিব্রু ভাষা ছিলো একটি মৃত ভাষা। ইসরাইলীরা এ ভাষাকে জীবন্ত করে তোলে। ফলে এ ভাষায় সঞ্চিত জ্ঞান-বিজ্ঞান, গল্প-কবিতা, শিল্প-সাহিত্যের এক নয়া দুয়ার অবারিত হয় মানবসমাজের সামনে। এতে শুধু ইসরাইলীরা নয়া, সমগ্র মানবসমাজই উপকৃত হবে। গাছ-গাছালী, প্রাণীদের নিয়ে রূপকথা, বিশ^াস, লোকসাহিত্য কত যে রচিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সবই প্রাণীবৈচিত্র্য থেকে উৎসারিত সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব। স¤্রাট অশোকের শিলালিপি পাঠোদ্ধার করা যদি সম্ভব না হতো তাহলে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতির কিছু অংশ হলেও আবৃত থাকতো। ভাষা তাই, সমাজ, অর্থনীতির অগ্রগমনের জন্য প্রয়োজন।
পৃথিবীতে ভাষা আছে অগণিত। বর্তমান যুগ হলো তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আমাদের এখনকার প্রাত্যাহিক জীবন এর দ্বারা নির্ধারিত। ব্যবসা, শিক্ষা, প্রশাসন, খেলাধুলা সবখানেই রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া। আজকের গ্লোবালাইজেশনের সবচেয়ে বড় উপায় তথ্যপ্রযুক্তি। অর্থনৈতিক সা¤্রাজ্যবাদ, সাংস্কৃতিক সা¤্রাজ্যবাদ বা নয়া উপনিবেশবাদ যাই বলে অভিহিত করি না কেন তা কাজ করে তথ্যপ্রযুক্তির উপায়ে। ইমানুয়েল ওয়ালেরেস্তেইন এর গ্লোবাল এমপায়ার (এষড়নধষ ঊসঢ়রৎব) বা সারা পৃথিবী এক অর্থনৈতিক অস্তিত্বে পরিণত হওয়ার বর্তমান সহযোগী সেই তথ্যপ্রযুক্তি। আন্দ্রে গুন্ডার ফ্রাঙ্ক বর্ণিত মেট্রোপলিস-স্যাটেলাইট যে সম্পর্ক ভুবনব্যাপী বিস্তৃত তাও এখন সম্ভব হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির কারণে। তথ্যপ্রযক্তি মূলতঃ তথ্য সরবরাহ করে থাকে। উধঃধ বা উপাত্তকে প্রক্রিয়াজাত করে তথ্যে রূপান্তর করা হয়। সে তথ্যের সাথে মিথষ্ক্রিয়ায় আমাদের অন্যান্য কাজের সমাধা হয়। তথ্যের উৎপাদনের পরে তা সঞ্চয় বা সংগ্রহ করে রাখার উপায় হলো, হার্ড ডিস্ক বা ম্যাগনেটিক ডিস্ক, অপটিক্যাল ডিস্ক, পেন ড্রাইভ ইত্যাদি। আবার এ তথ্য ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে বা দূরের কোন সার্ভার-এ সংগ্রহ করে রাখা যেতে পারে। তবে এ তথ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিংশ শতকে বা গত শতকের সীমাবদ্ধতা ছিলো যে, শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষাতেই তা সম্ভব হতো। কারণ তথ্য সংরক্ষণের উপায় ভাষা। আর যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইংরেজি প্রচলিত আর তা লেখা হয় রোমান হরফে তাই তাঁরা একে নির্দিষ্ট করেই কম্পিউটারের কোডিং সিস্টেম রচনা করে। উল্লেখ্য কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং এ মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজে বা ভাষার জন্য প্রতিটি অক্ষর বা ক্যারেক্টারকেই কোড করতে হয়। রোমান হরফে ফ্রেঞ্চ, ইটালিয়ান, জার্মান ও স্পেনিশ ভাষা লেখা হয়ে থাকে। ফলে মার্কিনীদের রচিত আট বিট অর্থাৎ ০ ও ১ এর আটটি বিট ব্যবহার করে কোডিং সিস্টেম রচনা করে। একে সংক্ষেপে অঝঈওও বা পূর্ণরূপে অসবৎরপধহ ঝঃধহফধৎফ ঈড়ফব ভড়ৎ ওহভড়ৎহধঃরড়হ ওহঃবৎপযধহমব বলে উল্লেখ করা হয়। প্রথমে ৭ বিটের হলেও পরে ৮ বিটের কোডিং সিস্টেম বলে এইটি ব্যবহৃত হয়। ৮ বিটের কোডিংয়ে ২৮ = ২৫৬ টি ক্যারেক্টার বা অক্ষর ও চিহ্নকে কোড করা যায়। এতে রোমান ২৬টি অক্ষর, কমা, সেমিকোলন ইত্যাদি চিহ্নের কোডিংয়ের পরেও কোডিংয়ের আরো কিছু সামর্থ্য থাকলেও পৃথিবীর তাবৎ অন্যান্য ভাষার অক্ষরকে কোডিং করা সম্ভব নয়।

নৃবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশ ওপনিবেশিকীকরণের সহগামী। পাশ্চাত্য যখন প্রাচ্যে উপনিবেশ স্থাপন করে তখন এবং তারও আগে খ্রিস্টান মিশনারীরা এ সকল অঞ্চলের জনগণের ধর্মান্তর ও ধর্মপ্রচারের জন্য স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতিকে রপ্ত করতেন। পরবর্তীকালের নৃবিজ্ঞানীরা স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও সংস্কৃতির সাথে মিশে তথ্য উদঘাটনের এ প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিকে চধৎঃরপরঢ়ধঃরড়হ ঙনংবৎাধঃরড়হ গবঃযড়ফ বলে উল্লেখ করেন। এতে স্থানীয় জ্ঞান ও হাজার বছরের ঐহিহ্যিক সঞ্চয়ের ধারণা পান এবং তা শুধু স্থানীয় ভাষাতেই রচিত ছিলো।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগ ভবিষ্যতে চধঢ়বৎষবংং ঝড়পরবঃু বা কাগজহীন এক সমাজে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। তখন তথ্য সঞ্চয়ের একমাত্র উৎস হবে ইলেক্ট্রনিক স্টোরেজ মিডিয়া। অঝঈওও কোডিং সিস্টেমে বাংলাসহ সারা পৃথিবীর ছোট-বড় জাতি ও নৃগোষ্ঠীর জ্ঞান-বিজ্ঞান সংরক্ষণের কোন সুযোগ নাই। অথচ মানবজাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে এ সকল ভাষায় রচিত সমস্ত সম্পদ সংরক্ষণ দরকার। কারণ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও জীববৈচিত্র্য একে অপরের পরিপূরক।
একের হানি অপরকেও প্রভাবিত করে। কিন্তু ৮ বিটের কোডিং সিস্টেমে তা সম্ভব নয়। ফলে ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় সব ভাষার কোডিং স্ট্যান্ডার্ড নিরূপণে গঠিত হয় টঘওঈঙউঊ ঈঙঘঝঙজঞওটগ (ইউনিকোড কনসোটিয়াম)। একথা আমরা জানি শুধু চীনা ভাষাতেই হাজারের উপরে ক্যারেক্টার আছে, আছে লোগোগ্রাম (খড়মড়মৎধস) ও ঊসড়লর বা ইমোজী। এছাড়া বাংলা, হিন্দী, রুশ, তুর্কী, আরবীসহ পৃথিবীর জানা সমস্ত অক্ষরকে কোডিং আওতায় আনবার জন্য অঝঈওও কোডের পরিবর্তে টঘওঈঙউঊ কোডিং সিস্টেমের ধারণায় উপনীত হতে হয়। ১৬ বিটকে অবলম্বন করে প্রায় ৬৫, ৫৩৬ টি ক্যারেক্টারকে কোড করা যায়। এইটি পৃথিবীর সমস্ত ভাষার অক্ষরকে কোড করবার জন যথেষ্ট। স্মরণযোগ্য যে প্রতি অক্ষরের জন্য ১৬টি বিট এতে ব্যহৃত হয়। টঘওঈঙউঊ ঈঙঘঝঙজঞওটগ এর যৌথ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মার্ক ডেভিস (গধৎশ উধারং) বলেন, “ ঙঁৎ মড়ধষ রং ঃড় সধশব ংঁৎব ঃযধঃ ধষষ ড়ভ ঃযব ঃবীঃ ড়হ পড়সঢ়ঁঃবৎং ভড়ৎ বাবৎু ষধহমঁধমব রহ ঃযব ড়িৎষফ রং ৎবঢ়ৎবংবহঃবফ নঁঃ বি মবঃ ধ ষড়ঃ সড়ৎব ধঃঃবহঃরড়হ ভড়ৎ বসড়লরং ঃযধহ ভড়ৎ ঃযব ভধপঃ ঃযধঃ ুড়ঁ পধহ ঃুঢ়ব পযরহবংব ড়হ ুড়ঁৎ ঢ়যড়হব ধহফ যধাব রঃ ড়িৎশ রিঃয ধহড়ঃযবৎ ঢ়যড়হব”
উল্লেখ্য, কম্পিউটারের প্রাথমিক অবস্থায় দুইটি টাইপ ওইগ ও গধপরহঃড়ংয এর জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলো ছিলো প্ল্যাটফরম ডিপেন্ডেন্ট বা নির্ভরশীল। এর সাদামাটা অর্থ হলো ওইগ এর জন্য প্রণীত সফটওয়্যার গধপরহঃড়ংয কম্পিউটারে ব্যবহারের উপযোগী নয়, আবার গধশরহঃড়ংয এর জন্য প্রণীত এ্যাপ্লিকেশন ওইগ কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় না। শুধু তাই নয় ওইগ এর অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের এক ভার্সনে সেভ (ঝধাব) করা ফাইল অন্য ভার্সনেও খোলা যায় না। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ২০১৩ ভার্সনে সেভ করা ফাইল বা ডকুমেন্ট পরবর্তী ভার্সনে খোলা যায় না। ফলে প্ল্যাটফরম (চষধঃভড়ৎস) ইন্ডিপেন্ডেন্ট সফটওয়্যারের দরকার হয়ে পরে। চউঋ ফরম্যাট মূলত প্ল্যাটফরম ও এপ্লিকেশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট। টঘওঈঙউঊ পদ্ধতি মূলতঃ পৃথিবীর সব প্রচলিত অক্ষরের জন্য একটি কোড বরাদ্দ রাখে এবং ফলে টঘওঈঙউঊ ঋঙঘঞ প্ল্যাটফরম ইন্ডিপেন্ডেন্ট হওয়ায় যে কোন ইউনিকোড সমর্থিত সফটওয়ারেই ব্যবহার করা যায়। এর ফলে বাংলাসহ পৃথিবীর সমস্ত ভাষাতেই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির লিখিত সমস্ত সম্পদকেই সঞ্চয় বা সম্ভারে (ঝঃড়ৎধমব) রাখা যায়। ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মৌলিক উদ্দেশ্যটাই অর্জন করা যায়।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে কালে কালে সংগ্রাম, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয়লাভ করি। এই ইতিহাস ভবিষ্যতে কালির আঁচড়ে বা কাগজে নয়, সঞ্চিত হবে ইলেক্ট্রনিক স্টোরেজ মিডিয়ায়। আর এজন্য প্রয়োজন বাংলাভাষায় লিখবার সমস্ত এ্যাপ্লিকেশনকে টঘওঈঙউঊ সিস্টেমের উপযোগী করা। আমরা গর্বিত, আমাদের ভাষা আন্দোলন ও সৈনিকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে, টঘঊঝঈঙ’র স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এই স্বীকৃতির কারণে আজকের পৃথিবী যে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন সেখানে জীববৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এক ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখতে পেরেছে।

প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট