চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রতিরোধে যথোপযুক্ত উদ্যোগ নিন কাপ্তাই লেকে মর্মান্তিক নৌদুর্ঘটনা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকে পর্যটকবাহী দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে শিশু ও মহিলাসহ ৬ জনের করুণ মৃত্যু ও আরো কয়েক জনের নিখোঁজ থাকার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। প্রতিবছরই এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর আসে গণমাধ্যমে। বলা হয়ে থাকে, এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্যে পর্যটকদের অবাধে হৈ হুল্লোড়, ফিটনেসবিহীন নৌযান, পর্যটকের লাইফ জ্যাকেট না থাকা, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, চালকের স্বেচ্ছাচারিতা এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারীর অভাবসহ নানা কারণ দায়ী। তবে প্রতিবছরই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরও কেনো ভ্রমণকারীরা সচেতন ও সতর্ক-সাবধান হন না, কেনো সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে শণাক্তকৃত কারণগুলোর সমাধানে যুক্তিপূর্ণ উদ্যোগ নেয়া হয় না, তা বোধগম্য নয়। যদি যার যার অবস্থান থেকে সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতেন তাহলে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে হতো না নিশ্চয়ই।
দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে দেখা যাচ্ছে, বিশ^ ভালোবাসা দিবসে পৃথক ৩ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন, নিখোঁজ রয়েছেন আরো ২ জন। চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি ঘুরতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না তাদের। এরমধ্যে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে স্থলপথে ও বাকি দুটি জলপথে। শুক্রবার সকাল নয়টায় রাঙামাটির সাপছড়িতে পিকনিক বাস উল্টে প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে বাসটির হেল্পার ঘটনাস্থলে নিহত ও ২৬ জন আহত হয়। ৬০ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর পতেঙ্গা থেকে রাঙামাটির উদ্দেশে পিকনিকে যাচ্ছিল বাসটি। কিন্তু চালকের অদক্ষতায় রাঙামাটির সাপছড়িতে গিয়ে বাসটি উল্টে যায়। বাসের যাত্রীরা সবাই পতেঙ্গা এলাকার একটি গার্মেন্টসের কর্মী। এছাড়া নগরীর সিইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানার ৫০ শ্রমিক রাঙামাটি বেড়াতে যান। তারা দুটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ভাগ হয়ে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণে নামেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী। কিছুদূর যেতেই জেলাপ্রশাসক বাংলোর সামনে একটি বোট উল্টে ডুবে যায়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট ও রোভার স্কাউট দল। হতাহতদের উদ্ধার করে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ দুর্ঘটনায় পাঁচজন মারা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই হওয়ার কারণে বোটটি ডুবে গেছে। অন্য এক নৌদুর্ঘটনায় রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা সদরের কর্ণফুলী কলেজসংলগ্ন এলাকায় বোটে করে কর্ণফুলী নদীতে ধর্মীয় উৎসব পালনকালে বোট ডুবে তিন জন নিখোঁজ হয়, পরে শিশু দেবলিনা দে’র মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার সকালের দিকে এ নৌদুর্ঘটনাটি ঘটে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দুর্ঘটনাকবলিতরা নন্দনকানন এলাকার রাধামাধব মন্দির থেকে ইসকনের আয়োজনে অংশ নিয়ে কাপ্তাই ভ্রমণে গিয়েছিলেন। পরে তারা কর্ণফুলী নদী হয়ে ৩টি বোটে চা বাগানে যাওয়ার পথে ২টি বোট কূলে ভীড়লেও অপর ১টি বোট কূলে ভিড়ার আগেই নৌ ডুবির ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া বোটে ৪৭ জন যাত্রী ছিল। ধারনা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
উল্লিখিত তিনটি দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সড়কপথে যে বাসটি উল্টে গেছে তার পেছনে রয়েছে পথ সম্পর্কে চালকের প্রয়োজনীয় জানাশোনা ও চালকজ্ঞানের অভাব, নৌপথে ঘটে যাওয়া দুটি দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই। যদি পিকনিকের আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতেন তাহলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হতে হতো না। সাধারণত পার্বত্য এলাকাগুলোতে ভ্রমণকালে সেখানকার চালকদেরকেই নেয়া হয়, কারণ সেখানকার রাস্তাঘাটের চিত্র তাদের নখদর্পণে থাকে। ফলে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। ভ্রমণকারীদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে নৌভ্রমণের সময়ও নৌকার ফিটনেস, চালকের দক্ষতা ও দায়িত্বজ্ঞান, অতিরিক্ত যাত্রী যাতে না উঠেন, চালক যাতে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাবে নৌকা না চালান প্রভৃতি বিষয় খেয়াল করেন আয়োজক কমিটি ও ভ্রমণকারীরা। এর অন্যথা হলে দুর্ঘটনা ও জীবনহানির শঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু শুক্রবারের দুর্ঘটনাকবলিতরা এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েছেন বলে মনে হয় না। গণমাধ্যমের খবরই বলে দিচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের কারণেই ঘটেছে দুর্ঘটনাগুলো। অন্য কারণ থাকলে তদন্তে হয়তো তাও বেরিয়ে আসবে। আমরা মনে করি, দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করে অপনোদন এবং ভ্রমণকারীদের জন্যে কিছু নিরাপত্তাজনিত শর্ত বেধে দিলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর দেখতে হবে না। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, কাপ্তাই হ্রদে চলাচল করা ইঞ্জিনচালিত সকল বোটের ছাদ গতকাল থেকে খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাঙামাটি জেলাপ্রশাসন। এ সংক্রান্ত এক সভায় সকল পর্যটকের লাইফ জ্যাকেট পরিধান নিশ্চিতকরণ এবং বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বোটের ফিটনেস চেকসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এটি সুখবর নিশ্চয়ই। তবে সিদ্ধান্তের কঠোর বাস্তবায়ন না হলে কাক্সিক্ষত ফল আসবে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশিত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট