চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পরিবেশ দূষণে নগরজীবনে অস্বস্তি

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর আবির্ভাবের প্রারম্ভিক কাল থেকে মানুষ পরিবেশকে নানাভাবে ব্যবহার করছে। সাথে গড়ে উঠেছে মানব সৃষ্ট পরিবেশ। মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে পরিবেশের পরিবর্তন হয়। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশগত সমস্যা মারাত্মক সমস্যা। প্রতিদিন আমাদের চারপাশে তৈরী হচ্ছে বিষাক্ত পরিম-ল। নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এক নিঃশব্দ বিষক্রিয়ার মধ্যে।

পরিবেশের মারাত্মক অবনতি আমাদের জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিশেষ করে শব্দদূষণ ও বায়ু দূষণের পরিবেশগত বিপর্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শব্দদূষণ বর্তমান সময়ে এক মারাত্মক সমস্যা হিসাবে আর্বিভূত হয়েছে। হাইড্রোলিক হর্ন, উচ্চমাত্রায় মাইকের আওয়াজ ও কলকারখানার শব্দ। এই শব্দদূষণ আমাদের পরিবেশগত বিপর্যয়কে ঘনীভূত করেছে। এরপর পানিদূষণ। দেশের ভূ-উপরিস্থ পানি শিল্প কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য, পৌর এলাকার অপরিশোধিত বর্জ্য পানি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, তেলবাহিত দূষণ এবং নদীবন্দর ও উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রবন্দর ও জাহাজ ভাঙ্গা কর্মকা- থেকে নিঃসৃত তেলজাতীয় পদার্থ দ্বারা ক্রমাগত দূষিত হয়ে চলছে। আরো রয়েছে নিষিদ্ধ পলিথিনের অপ্রতিরোধ্য ব্যবহার। পলিথিনের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে প্লাস্টিক সামগ্রিক ব্যবহার। মাটির জন্য সেই প্লাস্টিক মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি মাটির উপকারি ব্যকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। অন্যদিকে নগর জীবনে বর্তমানে ভোগান্তির আরো একটি কারণ বায়ুদূষণ, যা জনজীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। রাজধানীর বিভিন্ন নির্মাণ কাজ এবং অন্যান্য উৎস থেকে অবারিত ধুলা নির্গমনের ফলে পরিবেশ ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে। ধুলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে ফুসফুসকেন্দ্রিক রোগ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের মতো মারাত্মক রোগও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সারাদেশে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ছাড়পত্রহীন এসব ইটভাটা মানছে না আবাসিক এলাকা, মানছে না কৃষিজমি। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ইটভাটাগুলোতে বেআইনিভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে বায়ু। জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস) পোড়ানোর ফলে শিল্পকারখানা, যানবাহনের অসম্পূর্ণ দহন থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের প্যাটিকুলেট ম্যাটার, অ্যাশ, ধূলিকণা, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়তই মিশে যাচ্ছে বায়ুতে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে চলছে।
জনজীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। বিশেষ করে শব্দদূষণ, বায়ূদূষণ ও পানিদূষণ সমস্যা সমাধান অতীব জরুরী।

পরিবেশের বিপর্যয়ের সমস্যা থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য কোনো নিদিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ আইনই যথেষ্ট না, এ জন্য দরকার দেশের সমগ্র জনগণের চেতনাবোধ। নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখতে হবে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, সব আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। ডিজেলের পরিবর্তে সিএনজির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া নগরায়ন হওয়া উচিত সুপরিকল্পিত।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য উন্নয়ন কর্মকা-ও চালিয়ে যেতে হবে, যা ভবিষ্যৎ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত না করে এবং পরিবেশ দূষণ না করে। অপরিকল্পিত নগরায়নের অভিঘাত নগরজীবনে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ। পরিবেশদূষণের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে আমাদের এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

বায়ুদূষণ রোধে সম্প্রতি দেওয়া মহামান্য উচ্চ আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রত্যেক ব্যক্তিকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সরকারের উচিত রাজনৈতিক দক্ষতা, সকলের ম্যান্ডেট আর সমন্বিত প্রশাসনিক পদক্ষেপকে কাজে লাগিয়ে বিপন্ন পরিবেশের ছোবল থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর স্বদেশভূমি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি নগরজীবনে পরিবেশ রক্ষায় দরকার নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং দরকার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার আন্তরিক প্রচেষ্টা।

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট