স ম্প্রতি ভেনে জুয়ে লার রাজ নৈতিক সংকট আন্তর্জাতিকভাবে বেশ আলোচিত হচ্ছে। দেশটি বেশ কয়েক বছর ধরে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশটির সাধারণ জনগণ বেশ ভোগান্তির মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছে। ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক পরিম-লের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে জনগণের দুর্দশা ও যন্ত্রণা। দেশটির সংকটাপন্ন অবস্থা এমন খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে যে স্বাভাবিকভাবে বিষয়গুলো ভাবা বেশ কঠিন। অথচ, একসময় ভেনেজুয়েলা পুরো ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল। বিগত কয়েক বছরে দেশটিতে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চমূল্যস্ফীতি, ক্ষুধা বিভিন্ন রোগ, ক্রমবর্ধমান অপরাধ, মৃত্যুহার বৃদ্ধি, বিদ্যুতের ঘাটতি, খাদ্য ও ওষুধের অভাব, দেশ থেকে ব্যাপক অভিবাসন, রাজনৈতিক দুনীতি, কোম্পানী বন্ধ হয়ে যাওয়া, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, বেকারত্ব, কর্তৃত্ববাদ, সার্বিক অর্থনীতির অব্যবস্থাপনা, তেলের ওপর বেশি নির্ভরতা ইত্যাদি। এই পর্যন্ত প্রায় ৩০ লক্ষ লোক দেশটি ছেড়ে অন্য দেশে চলে গেছে উন্নত জীবনের আশায়। এইসব কিছু মিলিয়ে পুরো পরিস্থিতি এখন দেশটিতে মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। ২০১০ সাল থেকেই মূলত ভেনেজুয়েলার আর্থ সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংকটের সূত্রপাত ঘটে। তখন দেশটির রাষ্ট্রপতি ছিলেন হগো শ্যাবেজ। হুগো শ্যাবেজ ছিলেন মূলত ভেনেজুয়েলার একজন বিপ্লবী সামরিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। পরবর্তীতে নিকোলাম মাদুরো ক্ষমতায় আসার পর অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। এমনকি দেশটি ভেনেজুয়েলার ইতিহাসে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়। হুগো শ্যাভেজ ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করলে তখন একটি নির্বাচনের মধ্য স্বল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে মাদুরো জয়ি হন। তার সরকারের প্রথম আমলেই অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে নি¤œমুখী হয়ে যায়। সেজন্য ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ মানুষ মনে করছে এমন অবস্থার জন্য মাদুরোই দায়ি। ২০১৬ সালে ভেনেজুয়েলায় আরেকটি নির্বাচন হয় সেই নির্বাচনেও মাদুরো জয়ি হয়ে রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু সেই নির্বাচনটিতে ভেনেজুয়েলার অনেক বিরোধীদলকে অংশ করতে মাদুরো বাঁধা দিয়েছিল এমনকি বিরোধীদলের অনেক নেতাকে জেলেও বন্দী করে রেখেছি। অনেক নেতা জেলে যাওয়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ছিল ফলে ঐ নির্বাচনে জয়ি মাদুরোকে আন্তর্জাতিক মহল মেনে নেয় নি। এ বছরের জানুয়ারির ২৩ তারিখ মাদুরো যখন ২১ শতাব্দীর সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন ৩৩ বছর বয়সী হুয়ান ও্যয়াইদো নামক একজন আইন প্রণেতা নিজেকে ভেনেজুয়েলার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলে ঘোষণা দেন। তিনি বিরোধীদল নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদের প্রধান নেতা। ভেনেজুয়েলার সংবিধানের ২৩৩ এবং ৩৩৩ ধারা মতে এমন পরিস্থিতি তিনি নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার এই ঘোষণার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে সমর্থন করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আরো যারা হুয়াইদোকে সমর্থন জানিয়েছেন তারা হলো অস্ট্রিয়া, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, ইকুয়েডর, ফ্রান্স, জার্মানি, গুয়াতেমালা, হ-ুরাস, লাটভিয়া, নেদারল্যান্ড, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন ও যুক্তরাজ্য। খুব সম্ভবত ভেনেজুয়েলার ব্যাপক জনগণও এমন পরিস্থিতির জন্য মাদুরোকে পছন্দ করছে না। মাদুরো মূলত টিকে আছে দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভেনেজুয়েলার অবস্থা আরো খারাপের দিকে গড়াবে বলে বিশ্লেষকরা মতামত দিয়েছেন। সেহেতু দেশটিতে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে সেহেতু মাদুরো এ অবস্থায় কী করে তা দেখার বিষয়। তবে, মাদুরো যে বহিঃবিশে^র সমর্থন পাবেনা তা এক কথায় বলাই যায়। কারণ, তিনি সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার শপথ নিয়েছেন আর আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বেশিরভাগ দেশই সমাজতন্ত্র পছন্দ করেন না।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।