চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ভেজাল দমনে সরকারের উচিৎ মাদক নিয়ন্ত্রণের মতো কঠোর পদক্ষেপ

২২ মে, ২০১৯ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ

ভেজালের ভয়াবহতায় দেশে বর্তমানে জনগণের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা ভয়ঙ্কর সঙ্কটের মুখোমুখি। এর সংবাদ-চিত্র পত্র-পত্রিকাসমূহে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে। এদেশের আদালত তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এই বিপজ্জনক ও অহিতকর অবস্থা থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্যে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এদেশে মাদক বিস্তারের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছেন। উল্লেখ্য একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আদালত সরকারকে অনুপ্রাণিত করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ভেতরে খ্যাত-অখ্যাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের জনস্বার্থ ও গণস্বাস্থ্য বিনষ্টকারী কর্মকা- তথা ভেজাল ও নি¤œমানের পণ্য তৈরি বেড়াজাল ধ্বংস করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের আর কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয় বলেই আমরা মনে করি। আদালত, বলতে গেলে, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের মতোই ভেজাল দ্রব্য প্রস্তুতকারী ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলেছেন। বর্তমানের জনবান্ধব সরকারকে জনস্বার্থেই এই লক্ষ্যে পা বাড়াতে হবে বলে আমাদের বিশ^াস।
এদেশের আদালত প্রকৃতপক্ষে দেশের জনগণের জন্যে নিরাপদ খাদ্য বাজারজাত করার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতেই সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন। এ দেশ সম্প্রতি সরকার পরিচালিত মাদকদ্রব্য নির্মূল ও মাদক ব্যবসার অবসানের কঠিন কাজটি দৃশ্যত এই অপকর্মে যুক্ত ব্যবসায়ীকুল ও পাচারকারীদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। ফলে, এদের অনেকেই এখন আত্মসমর্পন করে সৎপথে আয়-রোজগার করার শপথ গ্রহণ করে ধনে-প্রাণে রক্ষা পেতে চাইছে। সরকারের জন্য মাদকবিরোধী এমন অবস্থান গ্রহণ অনেক ধরনের বাস্তবতার কারণেও খুব একটা সহজ ছিলো না। তবে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই সরকার মাদক নির্মূলে নামায় কেউ আর রেহাই পাচ্ছে না। প্রশ্নটা হলো, সরকার কি পারবেন ভেজালের বিরুদ্ধে আদালতের উচ্চারিত প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হতে? এই কাজটি করতে হলে সরকারকে কিন্তু একইভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই মাঠে নামতে হবে। কারো মুখের দিকে তাকানো যাবে না। জনগণের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে অনেক বাস্তবতারও সম্মুখীন হতে হবে সরকারকে। তবে, এক্ষেত্রে মাদক নির্মূলের কর্মকা-ের মতো সাফল্য দেখাতে পারলে, সরকারের অনেকগুলো অর্জনের মুকুটে সাফল্যের আরেকটি পালক যুক্ত হবে। এতে সরকারের জনপ্রিয়তা কোন্ উচ্চতার উন্নীত হবে তা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন রাখে না। আমরা চাই, সরকার ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও বিজয়ী হোন।
আদালত গণমাধ্যমের ভেজালবিরোধী ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছেন, “এটা বলতেই হবে যে, গণমাধ্যমে এইসব ভেজাল সংক্রান্ত বিষয় উঠে আসায় আমরা বিষয়গুলো জানতে পারছি। তাই, গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। তারা বিষয়গুলো জাতির সামনে না নিয়ে আসলে আমরা তো তা জানতেই পারতাম না।” আমাদের মতে, জনস্বার্থেই ভেজালদানকারী ও ভেজালদ্রব্য প্রস্তুতকারী ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচয় জনসম্মুখে উন্মোচিত হওয়া দরকার। অবশ্য, সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তাও কখনও কখনও এই ধরনের অপশক্তিগুলোর কর্মকা- উন্মোচন করতে গিয়ে বিঘিœত হয়েছে। কেউ কেউ দূর-অতীতে নিহতও হয়েছেন। তবুও সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীরা থেমে নেই। জনস্বার্থই তাদের কাছে সর্বাগ্রে বিবেচ্য বিষয়। তাই তারা ভয়হীন। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার বিরুদ্ধেই। তাদের সর্বদা অবস্থান।
ভেজালদানকারীদের সতর্ক করে দিয়ে আদালতও বলেছেন, ‘মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ গত ১৫ মে বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে. এম. হাফিজুল আলমের বেঞ্চ আলোচ্য বক্তব্যের সাথে যুক্ত করে বলেছেন, ‘ভেজালদানকারী সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার।’ প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আমরাও আশা করতে চাই যে, সরকার মাদক দমনের মতোই ভেজালের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে অগ্রসর হবেন। জনগণ শুভ কাজে সর্বদাই তাঁদের সাথে থাকবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট