চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রহমতের মাস মাহে রমজান

আবছার উদ্দিন অলি

২২ মে, ২০১৯ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ

মাহে রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত তিন ভাগে বিভক্ত। সে-ই সৌভাগ্যবান যে এই মাসে পূর্ণ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সংযমের সাথে রোজা পালন করবে। মুসলমানদের প্রধান ইবাদত-বন্দেগীর মাস রমজান। সব ধরনের অন্যায় অসত্য ত্যাগ করে আদর্শ নীতি-নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্র দিয়ে মানুষকে আল্লাহর রহমতের বৃত্তে আসার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে পারলে মানুষের কাছে প্রিয় হওয়া যায়। রোজা আমাদের শিক্ষা দেয় আত্মশুদ্ধি, ব্যক্তিত্বের সংস্কার এবং নিজস্ব সংকীর্ণতাগুলো কাটিয়ে ওঠার। রাসুল (সা:) এর প্রবর্তিত পবিত্র ইসলাম এই রমজান মাসে জগতের সকল আস্তিক মানুষের জন্য এনে দিল অপূরণীয় আনন্দ। সিয়াম সাধনার প্রার্থীত পথের সন্ধান। যুগ সমস্যার প্রচ- ব্যাতিব্যস্ততার মাঝে একটি স্বর্গীয় আনন্দপূর্ণ সময় এই রমজান। সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারে ভালবাসার নিবিড় বন্ধন অটুট করতে রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম। নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থেকে মানুষ এই মাসেই স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে আকুল হয়ে উঠে।
রোজা আমাদের নতুন করে আত্মশুদ্ধির পথ দেখায়। ভালভাবে পথ চলতে শেখায়। রোজা আমাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি শিক্ষা। রোজার আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আলোর পথে নিজের জীবন পরিচালিত করা উচিত। রোজা আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। আমরা রোজা রাখব, পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ও তারাবিহ’র নামাজ পড়ব, গরীবকে সাহায্য করব। এর মাধ্যমে আল্লাহ্র প্রিয়পাত্র হব।
মাহে রমজানের মাস মূলত প্রতিটি মানুষের মাঝে লাগামহীন ব্যয় বাহুল্য বর্জনের শিক্ষাকে রপ্ত করার মাস। অথচ আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় ইসলামের যুগোপযোগী শিক্ষা-সংযম, নীতি-নৈতিকতা আর আত্মসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে জীবন বিধান প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মানুষের জন্য করে দিয়েছেন তা থেকে আমাদের যোজন ব্যবধান লক্ষ্য করি। তবুও ধনী-দরিদ্র এক কাতারে আনার এই আয়োজনে বিশ্বকে রোজার সংস্কৃতির মাধ্যমে সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষিত হয়।
দেখা যায়, প্রতিটি মানুষ অবলীলায় অন্তরের উদারতা দিয়ে জানা কিংবা অপরিচিত যে কাউকেই সাথী করে ইফতারে অংশ নেবার ঐকান্তিকতার মহত্তম আকুতি প্রকাশ করে। রোজার একটি বড় অংশ হচ্ছে ইফতার। অঞ্চল ভেদে ইফতারের আয়োজন ভিন্নরকম। চট্টগ্রামের ইফতার সংস্কৃতির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষজন এমনিতেই ভোজন রসিক। তাই বাহারি আইটেম থাকে ইফতারিতে।
রমজান মাসে ইফতারির কদর বেশ আকর্ষণীয়। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার রোজাদারদের কাছে খুব প্রিয় বিষয় হয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। এর ধর্মীয় গুরুত্ব যেমন রয়েছে তেমনি সামাজিক গুরুত্ব বহন করে। পরিবার-পরিজন নিয়ে একসাথে ইফতার এবং অফিস-আদালত-কলকারখানা মালিক শ্রমিক মিলিয়ে একসাথে ইফতারের সংস্কৃতি আমাদেরকে ঐক্যের বন্ধনে অটুট থাকার মানষিকতা জাগিয়ে তোলে। আমরা সবাই এক হয়ে শ্রেণী বৈষম্য ভুলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একসাথে ইফতার করে থাকি।
রমজানের ইফতার সংস্কৃতি একটি সর্বজনীন আয়োজন হিসাবেই আমরা দেখতে পাই। কুলী-মজুর সকলেই কাতারভুক্ত হয়ে ইফতারে অংশগ্রহণ এমন আনন্দ বিশ্বের কোন উৎসবে অনেকটা বিরল। দরিদ্র ভূখাদের জন্যও রোজায় থাকে আনন্দ।
ঈদ অবধি থাকে প্রাত্যাহিক হৃদয়ঘনিষ্ঠ আয়োজন। রোজা রাখি কি না রাখি তাতে কোন বাধ্যবাধকতার বালাইও যারা নাই বলে মনে করেন সেই তারাও রোজাদারদের সাথে ইফতারের মাহফিলে একিভূত হতে কোন কসুর করে না।
আত্মশুদ্ধি ও খোদাভীতিই সিয়াম-সাধনার মূল লক্ষ্য। রমজানে আমাদের মন-মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। রোজা সৎ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হতে শেখায়। রমজানের বাকী দিনগুলো ভালই ভালই কাটুক- এমনটিই প্রত্যাশা।
৩০ রোজার পর মহা-মিলনের ঈদ বয়ে আনুক আনন্দের জোয়ার। রোজাদারের নিকট ইফতারের যে আনন্দ তা তুলনা করা যায় না। জগতের তাবৎ, ইনসানের জন্য রোজা যে নেয়ামত পরিবহন করে এনেছে জটিল জীবন ব্যবস্থা, মহার্ঘ বাজার দর, অসহনীয় যানজট, দুঃসহ আর্দ্রতা কোন কিছুই তাকে ম্লান করে দিতে পারেনা। সৃষ্টিকর্তার নামে সারাবেলা উপোষ করে ইফতার মুখে যে প্রশান্তির হাসি আর তারই গুণগান-এর নমুনা কিংবা উপমা স্বর্গীয় বিষয় ছাড়া পার্থিব কোন আয়োজন হতে পারে না। পুরো রমজান মাস জুড়ে সবাই ভালো থাকুন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট