চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

রাজনীতির নিপুণ শিল্পী মঈনউদ্দিন খান বাদল

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

রাজনীতি যে একটা শিল্প তা মঈন উদ্দিন খান বাদল তাঁর কর্মের মাধ্যমে আমাদেরকে শিখিয়েছেন। একজন শিল্পী যেমনি ভাবে তুলির মাধ্যমে তাঁর স্বপ্নকে ক্যানবাসে ফুটিয়ে তোলেন তেমনি ভাবে তিনি তাঁর স্বপ্নকে কর্মের মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি যে স্বার্থক এক শিল্পী যা সমাজের মানবিক চেতনার বিকাশের জন্য তিনি তার মননশীল চিন্তা চেতনাকে কাজে লাগিয়েছেন।

জন্মের পর থেকে স্বপ্ন দেখতেন বলেই কোন প্রতিকুলতা কোন বাধা তার চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। পরিবার সমাজ সংগঠন তার চলার পথে মারাত্মক বাধা হয়ে দাঁড়ালেও তিনি সব প্রতিকুলতাকে জয় করে তার গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন। তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। যাঁরা তার চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা শেষ পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করেছেন।
মঈনউদ্দিন খান বাদলের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল দীর্ঘ দিনের। বলতে গেলে আমরা ছিলাম গুরু-শিষ্য। সম্পর্ক ছিল মান-অভিমানের। তিনি আমাদের রাতের পর রাত রাজনৈতিক ক্লাস নিতেন। মার্ক্স, এঙ্গেলস, লেনিন, চে গুয়েভারা, জুলিয়াস ফুসিক, রেজিস দেব্রে, দান্তে, ভলতেয়ার, বার্ট্রেন্ড রাসেল, পার্ল এস বার্ক, এম এন রায়, কমরেড মুজাফফর আহমদ থেকে সাম্যবাদ, পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ কোন কিছু বাদ ছিল না। বিংশ শতাব্দীর ষাট, সত্তর দশক সাম্যবাদ সমাজতন্ত্রের ওয়েবে সারা বিশ্বের মেধাবী তরুণ যুবারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছিল। তা থেকে এপার ওপার দুই বঙ্গের মেধাবী তরুণ যুবারাও বাদ যায়নি। যখন তিনি রাজনৈতিক আলোচনা করতেন তখন আমাদের মনে হতো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব অতি সন্নিকটে। তিনি যখন বার্মা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার ছাত্ররা বিশ্বের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর বক্তব্য উপস্থাপন করতেন মনে হত তিনি সেই সব আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তার যুক্তি, তথ্য উপাত্ত এত সমৃদ্ধ ছিলো যে আমরা মোহগ্রস্ত হয়ে তার বক্তব্য শুনতাম।

তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের সদস্য। একাত্তর সালে মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের সময় সিরাজুল আলম খান তাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে চট্টগ্রামে পাঠান। এর কয়েক দিন পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তিনি তখন চট্টগ্রাম পোর্টে অবস্থানরত সোয়াত জাহাজ থেকে গোলাবারুদ নামানো বন্ধ করার জন্য হাজার হাজার মুক্তিকামী জনতার প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডোদের পাকিস্তান বাহিনীর যুদ্ধজাহাজে আক্রমণের সময় তার ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নৌ কমান্ডোদের দুনিয়া কাঁপানো ‘অপারেশন জ্যাকপটের’ মূল সমন্বয়কারী ছিলেন তিনি। তাঁর সুনিপুণ সমন্বয়ের কারণে নৌকমান্ডোদের এতো বড় বিজয় সম্ভব হয়েছিল। ‘অপারেশন জ্যাকপট’ ছিল বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী গেরিলা কর্ম যা সারা পৃথিবী কে জানান দেয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বৃত্তান্ত। তিনি মৌলবী ছৈয়দ সহ চট্টগ্রাম মহানগরে অনেক গেরিলা অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় তিনি আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাবে অবস্থান করেন। নওজোয়ান ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতারা ছিলো তার আত্মীয় । জালাল উদ্দীন, আলাউদ্দিন, জসিমউদদীন, আফতাব উদদীন সবাই ছিল মুক্তি যোদ্ধা।
যেহেতু তিনি নিউক্লিয়াস এর সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন তার সাথে চট্টগ্রামের নিউক্লিয়াসের নিবিড় যোগাযোগ এবং সর্ম্পক রেখে তাঁর কর্মপরিধি চালাতেন। আওয়ামি লীগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ^াসী ছিলেন বলেই নিউক্লিয়াসের সব সদস্য ছিলো জেলার নেতা-কর্মী। জেলা আওয়ামী লীগের ও জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্যোগে ছাব্বিশে মার্চ একাত্তর সালে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র চালু করা হয়। বেতারের কোন কর্মচারী স্বইচ্ছায় বেতারকেন্দ্র চালু করেনি। ছাত্রলীগের নেতারা বেতারকর্মীদের জোর করে ধরে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে বেতারকেন্দ্র চালু করে। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের প্রথম কণ্ঠ হলো তখনকার জেলার উত্তর মহকুমার ছাত্রলীগের সভাপতি রাখাল চন্দ্র বণিকের। পরবর্তীতে আরো কয়েকজন ছাত্রনেতা বক্তৃতা করেন। তারপর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম,এ হান্নান বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে যে তিনি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন বলে উল্লেখ করেন। এম,এ হান্নানের ভাষণও কোন লিখিত ছিলনা। ২৭মার্চ সন্ধ্যায় মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন কালুরঘাট বেতার থেকে। তাতে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে উল্লেখ করেন। ২৮ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আবার ও স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তার ভাষণ ছিলো স্বল্প কথায় লিখিত। এখানে উল্লেখ্য যে সেই সময় চট্টগ্রামের কোন নির্বাচিত এম,পি বা এমএনএ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেনি। আমি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদের ভাষনের কিছু অংশ তুলে ধরছি।” চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলের সমর পরিচালনার ভার পড়েছে মেজর জিয়াউর রহমানের উপর। নৌ, স্থল ও বিমান বাহিনীর আক্রমণের মুখে চট্টগ্রাম শহরে যে প্রতিরোধব্যূহ গড়ে উঠেছে এবং আমাদের মুক্তিবাহিনী ও বীর চট্টলা ভাই-বোনেরা যে সাহসিকতার সাথে শত্রুর মোকাবিলা করেছে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই প্রতিরোধ স্ট্যালিনগ্রাডের পাশে স্থান পাবে। চট্টগ্রাম শহরের কিছু অংশ ছাড়া চট্টগ্রাম ও সম্পূর্ণ নোয়াখালী জেলাকে “মুক্ত এলাকা” বলে ঘোষণা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে আরো বলেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের এ অভূতপূর্ব সাফল্য ভবিষ্যতে আরও নতুন সাফল্যের দিশারী। প্রতিদিন আমাদের মুক্তিবাহিনীর শক্তি বেড়ে চলে। একদিকে যেমন হাজার হাজার মানুষ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়, তেমনি শত্রুর আত্মসমর্পণের সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলে। আর এই সঙ্গে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসছে শত্রুর কেড়ে নেওয়া হাতিয়া। এই প্রাথমিক বিজয়ের সাথে সাথে মেজর জিয়াউর রহমান একটি পরিচালনা কেন্দ্র গড়ে তোলেন এবং সেখান থেকে আপনারা শুনতে পান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম কন্ঠস্বর। এখানেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়।” (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র। পৃষ্ঠা-৪)। স্বাধীনতার এই গৌরব গাঁথার গর্ভিত অংশিদারও মঈনউদ্দিন খান বাদল। প্রতিটি গৌরবজনক ঘটনার সাথে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে যে নতুন সমাজ ও রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব ঘটে তারও নেতৃত্বে ছিলেন মঈন উদ্দিন খান বাদল। মুক্তিযুদ্ধের পর নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠিত হলে তিনি জাসদ প্রতিষ্ঠার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তখন তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর জাসদ গণবাহিনী গঠন করলে চট্টগ্রামে গণবাহিনীর কমান্ডার নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জাসদকে প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি শুরু করার প্রক্রিয়ায় আনতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৬/৭৭ সালে জাসদ যখন কোন প্রকাশ্য কর্মকা- চালাতে পারছেনা তখন অধ্যক্ষ হারুনর রশীদের বোনের বিয়েতে বরযাত্রী বেশে নুরুল আলম জিকু সহ জাসদ নেতৃবৃন্দ মিরেশরাই মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন প্রকাশ্য রাজনীতির। সেই সিদ্ধান্তের পর জাসদ ক্ষমতাসীনদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। সেই প্রক্রিয়ার সাথে মঈন উদ্দিন খান বাদলও জড়িত ছিলেন। জাসদ যখন অভ্যান্তরিণ দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত তখন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাসদ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে বাসদও ভাগ হয়ে যায় এবং তিনি আ ফ ম মাহাবুবুল হকের সাথে যুক্ত হয়ে খন্ডিত বাসদের নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে আবারো তিনি জাসদের হাসানুল হক ইনু গ্রুপে যোগ দিয়ে জাসদের কার্যকরি সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক দলে তার শেষ ঠিকানা হলো জাসদ শরীফ নুরুল আম্বিয়া গ্রুপে। আম্বিয়ার সাথে মিলে তিনি এই জাসদ গঠনের নেতৃত্ব দেন। এবং এই গ্রুপের কার্যকরি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জল। বাকশাল বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জল ও অসাধারণ। এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় সাত দল- পনর দল এবং পাঁচ দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গঠনের তার ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনজোটের রপরেখা প্রণয়নের তিনি অন্যতম রূপকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রধান বিচারপতির নাম প্রথম তিনি প্রস্তাব করেন। চৌদ্দ দলীয় জোট গঠনের তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে চৌদ্দ দলীয় জোট থেকে বোয়ালখালী চাঁন্দগাও চট্টগ্রাম -৮ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনি বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হন। পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ সংসদে দেখতে পেল এক নুতন পার্লামেন্টারিয়ানের রূপ। যাঁর মধ্যে ছিল গভীর প্রজ্ঞা, যুক্তি, তথ্য উপাত্ত দিয়ে বক্তব্য প্রধান অন্য কোন পার্লামেন্টারিয়ানের মধ্যে আগে দেখেনি দেশের গণতন্ত্রকামী জনতা। যার ক্ষুরধার যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য সবসময় ট্রেজারি বেঞ্চ ও বিরোধী দলকে তটস্থ রাখতো। পর পর তিনবার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কি সংসদে বা কি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টকশোতে তার সঙ্গে কোন ব্যাক্তি তার যুক্তি তথ্য উপাত্ত কে সহজে খন্ডন করতে পারতেন না। তারমতো বাংলাদেশের আইন, সংবিধান, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বরাজনীতি নিয়ে তার জ্ঞান অধ্যয়ন দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে খুব কম পাওয়া যাবে। আমার জানা মতে তিনিই প্রথম বাংলাদেশি রাজনৈতিক হিসেবে বৃটিশ কমন্সসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন। তখন তিনি সংসদ সদস্য ও নির্বাচিত হননি।

সংসদে তিনি চট্টগ্রামের স্বার্থ নিয়ে সবসময় বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। যা চট্টগ্রামের অন্য কোন সংসদ সদস্য বলতেন না। বোয়ালখালীকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি বিদেশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে চলেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে আইটি ভিলেজ প্রতিষ্ঠা, কর্ণফুলী তীর ঘেষে মেরিন ড্রাইভ প্রতিষ্ঠা করে পর্যটনের স্থান প্রতিষ্ঠা, মেদসমুনি আশ্রমকে হিন্দুদের আন্তর্জাতিক তীর্থস্থান হিসেবে রূপ দেওয়া। মেদসমুনি তীর্থ স্থান নিয়ে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে তিনি প্রচারনাও চালিয়েছিলেন। বোয়ালখালীকে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত দিক থেকে উন্নয়নের ভিলেজ হিসেবে উন্নীত করার জন্য তিনি অনেক পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন। তার অন্যতম স্বপ্ন ছিল কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর দিয়ে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মান করা। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন এই বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর কাজ শুরু না করলে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের। এই সেতু তিনি দেখে যেতে পারে নি। কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুর মঈনউদ্দিন খান বাদলের স্পষ্ট পদত্যাগের ঘোষণার কথা স্মরণ করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এক টিভি টকশোতে কালুরঘাট সেতুর জন্য মঈন উদ্দিন খান বাদলকে শহিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

দক্ষিণ এশিয়াকে একটি স্থিতিশীল অঞ্চলে পরিণত করার মানসে তিনি নিরলসভাবে তাঁর মেধাকে কাজে লাগিয়েছেন।দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল পিপলস ফোরাম। যার সভাপতি সর্ব ভারতীয় ফরোয়ার্ড ব্লকের সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাস এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন মঈন উদ্দিন খান বাদল। এই তিন দেশে সাতবারের মতো সন্মেলন করা হয়েছিল। দুই বার বাংলাদেশের মধ্যে এবং তিনবার ভারতে। তাদের মূলনীতি ছিল স্থিতিশীল গনতান্ত্রিক সেকুলার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। ফ্যাসিবাদ, জঙ্গিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক মানবকল্যানকামী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্বপ্ন হলো পিপলস ফোরামের।

১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করেন চট্টগ্রাম -৭ আসনে। সে সময় আমি ও খালিদ নোমান নমি এক মাস বোয়ালখালীতে তাঁর বাড়ীতে অবস্থান করি। সমগ্র বোয়ালখালীর প্রতিটা গ্রাম তাঁর সাথে নির্বাচনী প্রচারণায় ঘোরাঘুরি করেছি। অনেক সময় সাথে থাকতেন অধ্যাপক আলতাফ হোসেন অথবা বাদল ভাইয়ের বাবা আহমেদ উল্লা খান। এক দিন রাতে আহারের সময় বাদল ভাইয়ের বাবা চাটগাঁইয়া ভাষায় বললেন এবার বাদল নির্বাচনের প্রাকটিস করছে। তার ফাইনাল খেলা অনেক দূরে। তিনি আরো বলতে লাগলেন চুয়াত্তরের সতর মার্চের ঘটনার পর সরকার থেকে আমার উপর চাপ সৃষ্টি করা হয় এবং বলেন যে আপনার ছেলে রাষ্ট্রদ্রোহী কাজের সাথে জড়িত। তখন আমি সরকার কে বলতে বাধ্য হয়েছি যে তাকে আমি তেজ্য পুত্র হিসেবে ঘোষণা করেছি এবং তাঁর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। এক পর্যায়ে তিনি আবেগ প্রবন হয়ে বলতে থাকেন একদিন আমি পরিচিতি হবো বাদলের নামে। বাদল ভাইয়ের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল তাঁর এমপি হোস্টেলের বাসায়। আমি আমার প্রথম প্রকাশিত বই দিতে গিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে কিছু আবেগ তাড়িত কথাবার্তা হযেছিল। এর পরবর্তীতে আরো বেশ কয়েক বার বার মোবাইলে কথা হয়েছে এবং ভারত থেকে আসার পর আমাকে নতুন বাসায় যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমার সাথে আরতো দেখা হলো না।
মঈন উদ্দিন খান বাদলের সামাজিক রাজনৈতিক জীবন কখনোই মসৃণ ছিল না। তাঁর পরিবার ছিলো খুবই রক্ষণশীল। পরিবারের সমস্ত রক্ষণশীলতা উপেক্ষা করে সে প্রগতিশীল চিন্তার দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক পথচলা ছিল আরো কঠিন। কি চট্টগ্রাম বা কি কেন্দ্রে তাকে কেউ এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা ছাড় দেয় নি। সমস্ত প্রতিকুলতাকে তিনি জয় করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট