চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কিশোর গ্যাং ও রাজনৈতিক বড়ভাই কা-

সামাজিক প্রতিরোধেই প্রকৃত সমাধান

২১ মে, ২০১৯ | ১:২৯ পূর্বাহ্ণ

ইয়াবাব্যবসাকে কেন্দ্র করে একদল কিশোর অপরাধীর হাতে নিরীহ রিকশাচালক খুন হওয়ার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই ঘটনা আমাদের কিশোরদের চরম বিপথগামিতার ইঙ্গিতবহ। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সম্ভাবনাময় কিশোররা তথাকথিত ‘বড়ভাইদের’ স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে ছিনতাই থেকে খুন-খারাবি, মাদকব্যবসা থেকে অপহরণ; নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের রাশ টানতে বলিষ্ঠ কোনো উদ্যোগ না থাকায় কিশোর অপরাধ দিনদিন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। ফলে ‘বড় ভাই’ কালচারে যোগ দিয়ে সম্ভাবনাময় অসংখ্য কিশোর হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। বড় ভাইদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অনেকে হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর অপরাধী। এমনটি চলতে থাকলে কিশোর অপরাধ গ্রাস করে নেবে পুরো সমাজকে। এমন চিত্র একটি স্বপ্নের সমৃদ্ধ সুন্দর বাংলাদেশের অনুকূল নয়। সংগতকারণে এ ব্যাপারে আর নির্লিপ্ত থাকারও সুযোগ নেই।
শুক্রবার দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, কারাবন্দি একজন মাদকব্যবসায়ী বড় ভাইয়ের নির্দেশেই খুনের ঘটনায় অংশ নেয় সাত কিশোরের একটি দল। গ্রেপ্তারের পর তারা পুলিশকে জানিয়েছে, ডবলমুরিং থানার হাজিপাড়ার মাদকব্যবসায়ী ছগির আহমদ তাদের গ্রুপের বড় ভাই। কয়দিন আগে বড় ভাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ছগিরের ধারনা তারই মাদক বহনকারি মফিজুর রহমান তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। তাই সে কারাগারে বসে কিশোর গ্রুপকে নির্দেশ দিয়েছিলো মফিজকে হত্যা করার। আর বড় ভাইয়ের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে মফিজ মনে করে রাজু আহমদকে খুন করে কিশোর গ্রুপের সদস্যরা। প্রসঙ্গত, এর আগেও বিভিন্ন কিশোর গ্রুপের হাতে নানাস্থানে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে। গত ১০ মে মুরাদপুরে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে একদল বখাটের হামলা থেকে নিজ সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান এক ব্যবসায়ী। এভাবে নানা ঠুনকো ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরো অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে বিভিন্ন কিশোর অপরাধীচক্র। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, এরা তথাকথিত ‘বড় ভাইদের’ স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় সবসময়। মাদকসেবনতো বটেই বড় ভাইদের নির্দেশমতো মাদক বহন ও পাচারের কাজেও যুক্ত থাকে। যুক্ত থাকে খুনখারাবী, ছিনতাই, যৌনসন্ত্রাসসহ নানা সমাজবিরোধী কাজে। ফলে তাদের বিভিন্ন অপকর্মে সমাজ বিষিয়ে উঠছে দিনদিন, অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে সমাজবাসী। কিশোর অপরাধের নৃশংসতার মাত্রা সমাজের নিরাপত্তাকে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করছে। গত দুই বছরে দেশে গ্রুপভিত্তিক কিশোর অপরাধের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এখনই যদি এ অবস্থা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না যায় তবে তা মহামারীর রূপ নেবে।
উল্লেখ্য, কথিত বড়ভাইদের প্রশ্রয়ে বিভিন্ন নামে গড়ে উঠা কিশোর গ্রুপগুলোর সদস্যদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছর। তারা অপেক্ষাকৃত ছোট অপরাধের মধ্য দিয়ে পা বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বড় ধরনের অপরাধ কাজে লিপ্ত হয়। মাদকপাচার, চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের পাশাপাশি এখন খুনখারাবীতে মেতে উঠেছে তারা। নানা কারণে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তৎপরতাও নেই বললে চলে। ফলে এরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আমরা মনে করি, এদের রাশ টানতে এখনই দ্রুত প্রশাসনিক, সামাজিক ও পারিবারিক উদ্যোগ নেয়া জরুরি। কথিত বড়ভাইদের পাকড়াও এবং পুলিশী অভিযান ও টহল জোরদার করার পাশাপাশি সামাজিকভাবে প্রতিরোধ ও সচেতনতা কর্মসূচি থাকলে, একইসঙ্গে পরিবারের অভিভাবকদের ইতিবাচক ভূমিকা থাকলে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সাফল্য আসবে। অভিভাবকরা সচেতন হলে সন্তানরা বিপথগামী হবে না। কিশোররা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব অভিভাবকদের। অভিভাবকরা সন্তানদের অযৌক্তি আশকারা না দিয়ে পারিবারিক বন্ধন জোরদার করলে সন্তানরা বেপরোয়া হবে না। মনে রাখা দরকার, সন্তানকে সুপথে রাখতে চাইলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়াতে হবে। চাহিদা এবং প্রাপ্তির মধ্যে ব্যবধান কমাতে হবে। সন্তানকে নৈতিক শিক্ষায় পুষ্ট করতে হবে। দিতে হবে সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা। বাড়াতে হবে ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট