চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

দুর্ঘটনা রোধে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ

২৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বর্তমানে জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে সড়কদুর্ঘটনা। এমন কোনো দিন যাচ্ছে না যে দিন সড়কদুর্ঘনা হচ্ছে না। এসব দুর্ঘটনায় বাড়ছে অপমৃত্যুর মিছিল। আর দুর্ঘটনার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব। তবে আশার কথা হচ্ছে, সরকার এ বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে। দক্ষ চালক তৈরির মধ্য দিয়ে সড়কদুর্ঘটনা প্রতিরোধে দেশের ১ লাখেরও বেশি তরুণকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান’ নামে এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। দেশের ৬১ জেলার কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নারীরাও এই সুযোগ পাবেন। এটি একটি সুখবর সন্দেহ নেই। প্রকল্পটির সুচারু বাস্তবায়ন হলে দেশের কর্মসংস্থানে যেমন, তেমনি সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১২৮টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৮টি ট্রাক ও একটি মাইক্রোবাস কেনা হবে। এছাড়া ৩ ধরনের ১৯২টি প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি, ৭ ধরনের ২১টি অফিস যন্ত্রপাতি কেনা হবে। আর ব্যবহারিক প্রশিক্ষক থাকবেন ১২৮ জন, তাত্ত্বিক প্রশিক্ষক ৬৪ জন ও স্কিল ওয়ার্কার থাকবেন ৬৪ জন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে ২৬৭ কোটি ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ১১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা খরচ হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ৩৮ কোটি টাকার কিছু বেশি করে খরচ ধরা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় যারা প্রশিক্ষণ নেবে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। এ প্রশিক্ষণ হবে শতভাগ ফ্রি। প্রশিক্ষণার্থীদের দৈনিক ১০০ টাকা করে দেয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমটিআই)। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। কিন্তু বাড়ছে না প্রশিক্ষিত দক্ষ চালকের সংখ্যা। সম্প্রতি সীতাকু- উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক কর্তৃক পরিচালিত এক অভিযানে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চালকদের ৭০ শতাংশের বৈধ কাগজপত্র নেই। এসব ড্রাইভারের বেশিরভাগই আনাড়ি। যার ফলে যান চলাচলে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই চিত্র সারা বাংলাদেশেরই।

প্রশিক্ষিত ও দক্ষ চালকের অভাবে প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। একটি দুর্ঘটনা শুধু প্রাণই কেড়ে নেয় না, একটি পরিবারকে তছনছ করে দেয়। আর পঙ্গু হলে সারাজীবন তা বয়ে বেড়াতে হয়। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রতিকারহীন সড়কদুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের অদক্ষতা। অনেকের লাইসেন্স নেই, অনেকের লাইসেন্স ভুয়া। এদের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া বিপজ্জনক। অথচ মালিকদের একাংশ সেটাই করছেন। এ অবস্থায় দক্ষ ও সুপ্রশিক্ষিত চালক তৈরিতে নেয়া সরকারের পদক্ষেপ সাধুবাদযোগ্য এবং যথাযথ বলতে হবে। এই উদ্যোগ সড়কদুর্ঘটনা কমানোর পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণেরও ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দক্ষ গাড়িচালকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দক্ষ ও সুপ্রশিক্ষিত চালক তৈরি করা গেলে দেশের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বিদেশেও সরবরাহ করা যাবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথও সুগম হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট