চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাজারে কঠোর নজরদারি দরকার

২৬ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

এবার মুনাফাশিকারি সিন্ডিকেটগুলোর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে চালের বাজারে। তাদের কারসাজিতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বাড়ছে চালের দাম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, মিলমালিক ও সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই চালের দাম বাড়ছে। বিভিন্ন বাজারে চালের দাম কেজিতে তিন থেকে সাত টাকা বেড়েছে। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা, সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা। যদিও ধানের দাম বাড়তি, চাহিদার তুলনায় জোগান কম, এমন সব অজুহাত চালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দেখানো হচ্ছে। তবে এসব অজুহাতের ভিত্তি নেই। চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ না মিললেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দোষ চাপাচ্ছে মিল মালিকদের ঘাড়ে। তাদের অভিযোগ, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। মাসকয়েক ধরে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে চালের বাজারের অস্থিরতা। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সন্দেহ নেই পেঁয়াজ, শাক-সবজি, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যে বেশি দাম দেয়ার পাশাপাশি চড়া দামে চাল কেনার কারণে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো বাড়তি চাপের শিকার হবে। চালের বাজারের এমন চিত্র দুঃখজনক। এতে স্বল্প আয়ের মানুষদের দুর্ভোগের পরিধি আরো বাড়বে। বাজারের ওপর এবং বাজার কুশীলবদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কার্যকর থাকলে এমন চিত্র দেখতে হতো না নিশ্চয়ই।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আমন ধানের মৌসুমে দুই দফায় চালের দাম বাড়িয়েছে মিলমালিকরা। ধান সংকটের কথা বলে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এক মাস ধরে চালের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। মোটা ছাড়া বেশির ভাগ চালে আড়াই থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে মনে করে টিসিবি। খুচরায় বস্তাপ্রতি চালের দর বেড়েছে ২শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত। মিলমালিকরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলমালিকদের যুক্তি সঠিক নয়। কারণ তারা আগেই কম দামে কিনে ধানের বিশাল মজুদ গড়ে রেখেছেন। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তৎপরতা নেই বললেই চলে। ফলে বাজারে মুনাফাশিকারীদের অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে। কঠোর নজরদারীর অভাবে মুনাফাশিকারিদের অপতৎপরতায় বার বার লাগামহীন হয়ে পড়ছে চালের বাজার। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, চালের বাজারে প্রশাসনের কোন তদারকি না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদেরকেই। কতিপয় মিল-মালিকের কারসাজিতে বাজারে চালের দাম বাড়ার এমন চিত্র মেনে নেয়া যায় না। বাজার বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, আগামি মৌসুমেও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী রাখতে চায় অসাধু মিল-মালিকরা। সে জন্যে এখন অকারণে দাম বাড়াচ্ছে। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্লিপ্ততার সুযোগে তারা এ ক্ষেত্রে দুঃসাহস দেখাচ্ছে, বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কিন্তু চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠার ফলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।

চাল এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। সংগত কারণে এর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ বয়ে আনে। বিষয়টি উপলব্ধি করে সরকারও। সে জন্যেই সরকার কৃষির উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। চালের দাম সহনীয় করতে শুল্ক কমানো সহ বিভিন্ন উদ্যোগও আছে। কিন্তু যথাযথ নজরদারির অভাবে সরকারের এসব উদ্যোগের ফল জনগণ পাচ্ছে না। টাউট ও মুনাফাখোররাই নিয়ে নিচ্ছে। এ অবস্থায় চালের বাজার সহনীয় করতে কার্যকর কর্মপন্থা অবলম্বন জরুরি। অসৎ ব্যবসায়ীরা জনগণকে পুঁজি করে অবৈধ মুনাফা করবে, তা কিছুতেই হতে পারে না। এ অবস্থায় চালের বাজার তদারকিতে মাঠপর্যায়ে বাড়াতে হবে কঠোর নজরদারি। পাশাপাশি টিসিবির ডিলারদের কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে। নিয়মিত করা দরকার খোলা বাজারে চালবিক্রি, ওএমএস কার্যক্রম। একই সঙ্গে নিশ্চিত করা প্রয়োজন সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর মাঠপর্যায়ে কঠোর নজরদারি। অতি মুনাফালোভীচক্রের কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনে দুরবস্থা নেমে আসবে, তা কারো কাম্য হতে পারে না। যেভাবেই হোক, জনগণকে এই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট