চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বঙ্গবন্ধু বিপিএল ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

আ জ ম শামসুল হক

২৬ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহের কমতি নেই। এই দেশের জনগণ অন্য সব খেলার চেয়ে ক্রিকেটের প্রতি দুর্বল। আমাদের ছোটবেলায় ডাঙ্গুলী খেলার প্রচলন ছিল। তবে ফুটবল খেলা জনপ্রিয় ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ক্রিকেটের আবির্ভাব হলেও ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আমরা খেলা অবলোকন এবং উপভোগ করেছি তিন দশক ধরে।

বিশ্বক্রিকেটের সাথে আমাদের সম্পৃক্ততাও অল্প সময়ের। ক্রিকেট বিশ্ব পরিক্রমায় আমরা পিছিয়ে নেই। বর্তমানে মাঠের বাইরে রাস্তা-ঘাটে, অলিতে-গলিতে এবং পরিত্যক্ত জায়গায় ছেলেরা মনের আনন্দে ক্রিকেট খেলে। ছেলে-মেয়েদের অবসর সময়ে ক্রিকেট ব্যাট এবং বল হাতে ছুটাছুটি করতে দেখা যায়। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে বস্তুত খেলার মাঠের আকাল। দখলমুক্ত সরকারি জমি খেলা উপযোগী মাঠ তৈরী করার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে তাই আমাদের কাম্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত রাতারাতি শীর্ষ পর্যায়ে আসেনি। তাদেরকে অনেক সময় পার করে কাঠখড় পুড়িয়ে অনন্য অবস্থান সৃষ্টি করতে হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটদর্শকেরা আশাবাদী, এই দেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়েরা তেমনিভাবে কোন একদিন তা অর্জন করতে সক্ষম হবে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে প্রমোট করা অধিকতর সহজ হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে ক্রিকেট প্রতিষ্ঠিত হবে, একটি উন্নত দেশের কাঠামোতে।

ঢিমেতালে চলা বাংলাদেশ ক্রিকেট বর্তমানে অনেকটা সাবলীল এবং গতিময়। তা সম্ভব হয়েছে, সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার কারণে। বিশ্বের কোন দেশ এই দেশের ক্রিকেটের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। অর্থাৎ বাংলাদেশ কাউকে ছাড় দেয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে এই দৃশ্যপট লক্ষণীয় এবং প্রশংসিত। এই দেশের দর্শকদের এবং খেলোয়াড়দের চাহিদামতে সরকার ক্রিকেটকে অবিরামভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের শত ব্যস্ততার মাঝেও ক্রিকেট খেলা প্রত্যক্ষ করার চেষ্টা করেন। প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও বিপিএল হয়েছে, তবে নতুন আঙ্গিকে। নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। এককথ্য়া, সরকারি আর্থিক অনুদানের ওপর ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধু বিপিএল এর কর্মযজ্ঞ। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের পরিসীমায় বিপিএলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এবং দক্ষতা সৃষ্টি করা। বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে বিপিএলের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই পূর্বক “এ” মানের খেলোয়াড় তথা জাতীয় টিম গঠন করা। আমরা আশাবাদী, বিবিপিএলের আয়োজন সার্থকতার মধ্যে দৃশ্যমান হবে।

বিবিপিএল রংধনুতে (সাত টিমে) অনেক বিদেশী খেলোয়াড়ের আগমন ঘটেছে। সাধুবাদ জানাই তাদের, দর্শকদের সারি থেকে। তাদের সাথে একাত্ম হয়ে খেলা আনন্দের। নবীন খেলোয়াড়েরা তাদের সাথে যোগ্যতা প্রমাণ করা মহা আনন্দের। দুই-একটি টিম শুধু জেতার জন্য খেলাকে প্রাধান্য দিয়েছে। শুরতে দুইজন বিদেশী খেলোয়াড় দিয়ে খেলা শুরু করতে দেখেছি। একজন বিদেশী খেলোয়াড়ের সাথে একজন বাংলাদেশী ওপেনার নামলে খেলা আরো বেশী উপভোগ্য হত এবং আমাদের খেলোয়াড়েরা অনুপ্রাণিত হত। ভবিষ্যতে প্রত্যেকটি টিমে বাংলাদেশের আইকনদের নেতৃত্বে এবং অধিনায়কত্ব হলে খেলার মান বৃদ্ধি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বিবিপিএলের মাধ্যমে কয়জন দক্ষ এবং উন্নতমানের খেলোয়াড় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সাথে যুক্ত হচ্ছে, তাই হবে আমাদের প্রাপ্তি। ওপরে ওঠার সিঁড়িটা কঠিন হলেও বিবিপিএল আমাদের জন্য সহজ বার্তা। যোগ্যতার বিচারে খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য প্রদর্শনের এই সুযোগ হাতছাড়া করতে নেই। নবীন খেলোয়াড়দের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক বলয় থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে মুক্ত রাখা জরুরি। বড়কর্তার আশির্বাদপুষ্ট না হয়ে খেলোয়াড়ের যোগ্যতা হবে খেলার মূল মাপকাঠি। ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ এবং ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর ভিত্তি করে টিমে যোগ-বিয়োগ কারো কাম্য নয়। তাতে একজন ভালমানের খেলোয়াড়ের জীবনে নেমে আসে দুর্বিসহ যন্ত্রণা। বিসিবি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে খেলোয়াড়দের ওপর মানসিক চাপ কমাতে পারলেই সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য টিম গঠন করা সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মহিলা ক্রিকেট টিমের প্রাপ্তি অনেক। তাদেরকে আলাদা করে চিন্তা না করে, বালাদেশের সুনাম অর্জনকারী খেলোয়াড় হিসেবে তাদের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করা হোক, দর্শকেরা তাই প্রত্যাশা করে। তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং আর্থিকভাবে তাদের স্বাবলম্বি করার মাধ্যমে যুগোপযোগী টিম হিসেবে উন্নীত করা সময়ের দাবী। আমরা ক্রিকেটপ্রেমীরা উন্নত এবং সমৃদ্ধ টিম গঠনের প্রত্যাশায় দিন গুনছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মান বজায় রাখার স্বার্থে নবীন খেলোয়াড়দের জন্য ন্যূনতম এসএসসি পাশ বাধ্যতামূলক হওয়া বাঞ্চনীয়। ক্রিকেটবিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। এই দেশের ক্রিকেট টিম হবে বিশ্বমানের। উপহার দেবে শ্রেষ্ঠ খেলা। আমরা যেন কন্ঠে সোনার বাংলা এবং হাত উঁচিয়ে লাল-সবুজের পতাকা তুলে ধরতে পারি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট