চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

চুয়েটে ‘শামসেন নাহার খান হল’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী

বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে প্রকৌশলীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে

জাহেদুল আলম হ রাউজান

২৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ. মান্নান এমপি বলেছেন, ‘জাতির ইতিহাসে প্রথমবারের মত আমরা আমাদের কর্তৃত্ব আমাদের হাতে পেয়েছি। দেশটাকে আমাদের মত করেই গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমরা যদি এখন না করি তবে পরবর্তী প্রজন্ম ঠিকই করবে। কিন্তু দাস জাতি কোন মহৎ কাজ করতে পারবে না। আমাদের এখন উন্নত জাতি তৈরি করতে হবে। গত ১৫ বছরে দেশের মানুষের জীবনমানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। অবকাঠামোগত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সবক্ষেত্রেই আমাদের দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে তৈরি করার মিশনে নেমেছেন। আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের অগ্রগামী সেনিক। তাদের হাতেই আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। এক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’ তিনি বলেন, চুয়েট অত্যন্ত সুন্দর ক্যাম্পাস। দারুণ সাজানো-গোছানো। শিক্ষার চমৎকার পরিবেশ। একে খান পারিবার যেভাবে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন তেরি করে দিচ্ছে সেটা অভূতপূর্ব। তাদের এসব উদ্যোগ প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)’এ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিল্প পরিবার এ.কে. খান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবং চুয়েটের গবেষণা ও

সম্প্রসারণ দপ্তরের সহযোগিতায় নবনির্মিত আবাসিক ছাত্রী হল ‘শামসেন নাহার খান হল’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে শামসেন নাহার খান হল প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম দোভাষ এবং এ.কে. ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি সেক্রেটারি সালাহউদ্দিন কাসেম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল। সহকারী অধ্যাপক এটিএম শাহজাহান এবং সহকারী অধ্যাপক নাহিদা সুলতানার যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এ.কে.খান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এম. জিয়াউদ্দিন খান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন ও অধ্যাপক ড. ফারজানা রহমান জুথী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই এ.কে. খান ও শামসেন নাহার খানের জীবনী তুলে ধরেন শামসেন নাহার খান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আশরাফুল জান্নাত ও ফাহমিদা হামিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফজলে করিম এমপি বলেন, ‘২০২২ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর থেকে রেললাইন চুয়েট হয়ে কাপ্তাই চলে যাবে। এছাড়া চুয়েট ক্যাম্পাসকে ঘিরে সিলিকন ভ্যালির আদলে একটি আইটি ভিলেজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। আমার পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা থাকবে।’

বিশেষ অতিথি ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি বলেন, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আমরা এখন বুঝতে শিখেছি। নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উদ্যোগ সেটাই প্রমাণ করে। চুয়েটের মেয়েরাও এক্ষেত্রে দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে আমি বিশ্বাস করি।’ বিশেষ অতিথি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন ‘একে খানের সমাজহিতৈষী কাজগুলো নিছক প্রচারের জন্য করে না। তাঁরা কেবল খান সাহেবের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চুয়েটের ছেলেমেয়েরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।’ বিশেষ অতিথি মো. জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে চুয়েট জড়িত। দু’জন ছাত্র শহীদ হয়েছেন। এটা গর্বের বিষয়। বর্তমানে অনেক মেয়ে প্রকৌশল শিক্ষা নিয়ে পড়ছেন। চট্টগ্রামের মেয়েরা এক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যাবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।’ বিশেষ অতিথি এ.কে. খান ফাউন্ডেশনের সম্মানিত ট্রাস্টি সেক্রেটারি সালাহউদ্দিন কাসেম খান বলেন ‘একে খান ট্রাস্টি সেক্রেটারি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির (নলেজ বেইসড ইকোনমি) প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। নাহয় এসব উন্নয়ন টেকসই হবে না। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জে টিকে থাকলে হলে উন্নয়ন টেকসই করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, আজ থেকে চুয়েটের মেয়েদের আবাসিক হলে আসন সংকট থাকবে না। শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকারের গতিশীল ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের ফলে দেশে নারীদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় ব্যাপক আগ্রহের সঞ্চার হয়েছে। চুয়েটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিল্প পরিবার এ.কে.খান গ্রুপের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ.কে. খান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে দৃষ্টিনন্দন একটি ছাত্রী হল নির্মিত হয়েছে। এই মহতী উদ্যোগের জন্য এ.কে.খান ফাউন্ডেশনের সকল ট্রাস্টিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি চুয়েট পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। পরে চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর প্রধান অতিথির হাতে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।

প্রসঙ্গত, প্রায় ১৮ কোটি ব্যয়ে এক লক্ষ বর্গফুট আয়তনের ৬ তলা বিশিষ্ট (বেইসমেন্টসহ) চারদিকে সবুজ ঘাসে ঘেরা হলটি যেন স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর প্রয়োগে নির্মিত হলটিতে প্রায় ৫০০ জন ছাত্রীর আবাসনের সুবিধা রয়েছে। অত্যাধুনিক ও পরিবেশবান্ধব স্থাপত্যশৈলী ও প্রযুক্তিতে নির্মিত এই আবাসিক ছাত্রী হলটির নকশা করেছেন চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্থপতি বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস এবং স্থপতি সজীব পাল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট