চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

শিশু গৃহকর্মীকে আগুনের ছ্যাঁকা ও নির্যাতন, গৃহকর্তা আটক

কক্সবাজার সংবাদদাতা

২২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৯:২২ অপরাহ্ণ

কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকায় শুভা আক্তার (১২) নামে এক শিশু গৃহপরিচারিকাকে অমানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই শিশুর শরীরে আগুনের ছ্যাঁকা ও বিভিন্ন ধরনের আঘাত করার চিহ্নও রয়েছে।

পুলিশ এই ঘটনায় আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় টেকপাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে গৃহকর্মী এইচ এম আবু ছিদ্দিককে আটক করেন। তবে গৃহকর্ত্রীর সদ্য ভূমিষ্ট বাচ্চা থাকার কারণে তাকে আটক করা হয়নি। আটককৃত আবু ছিদ্দিক একই এলাকার মরহুম আলী মিয়াজীর ছেলে।

নির্যাতনের শিকার শুভা আক্তার বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ৩য় তলায় ওয়ান স্টোপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া এলাকায়। সে একই এলাকার মরহুম আবুল কাশেমের শিশু মেয়ে। গত পাঁচ বছর ধরে শহরের টেকপাড়া এলাকায় আবু ছিদ্দিক নামের এই গৃহকর্তার বাসায় শিশু শুভা কাজ করত।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর থানার ওসি ছৈয়দ আবু মো. শাহজাহান পূর্বকোণকে বলেন, হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সূত্র এবং ভিকটিমের স্বজনদের অভিযোগ পেয়ে বুধবার সন্ধ্যায় গৃহকর্তা আবু ছিদ্দিককে আটক করা হয়েছে। সদ্য ভূমিষ্ট বাচ্চা থাকায় গৃহকর্মীকে আটক করা হয়নি। তবে এই ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই আসামি।

ওসি আরো বলেন, গত ১০ দিন আগেও নির্যাতনের পর শিশু শুভাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ওই সময় শুভার পরিচয় গোপন করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেন আবু ছিদ্দিক। শুভার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আগুনে ছ্যাঁকা দেয়ার চিহ্নও আছে। আটককৃত আবু ছিদ্দিক নিজেকে কলামিস্ট পরিচয় দিচ্ছে। তবে তিনি একজন আদালত প্রাঙ্গণে বিভিন্ন রাইটারের কাজ করে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে শুভা আক্তারের বাবা আবুল কাশেম মারা যান। পরে মা রেহেনা বেগম আরেকটা বিয়ে করে নতুন সংসার বাঁধেন। এরপর নানা-নানির কাছে থাকেন শিশু শুভা। নানা-নানীর অভাবের সংসারে আবু ছিদ্দিক নামের এক গৃহকর্তা শুভাকে বাসায় কাজের পাশাপাশি পড়ালেখার করানোর আশ্বাস দিয়ে টেকপাড়ায় নিয়ে আসেন। তখন শুভার বয়স ছিল ৭ বছর। বর্তমানে শুভার বয়স প্রায় ১১ বছর ৬ মাস। পাঁচ বছর পূর্বে নিয়ে আসলেও আর ভাগ্য জোটেনি পড়ালেখা।

ভিকটিমের সূত্রে জানা গেছে, কাজে সামান্য ভুল হলে লাঠি ও চুলের মুটিধরে তাকে কারণে-অকারণে মারধর করতেন গৃহকর্তা ও তাঁর স্ত্রী। এভাবেই কেটে যায় পাঁচটি বছর। এরমধ্যে বিভিন্ন সময় চলে অমানসিক নির্যাতন। ধারাবাহিক নির্যাতনের ঘটনায় গত ১৩ জানুয়ারি নাম পরিচয় গোপন করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করান শুভাকে। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে ১৯ জানুয়ারি শুভাকে গ্রামের বাড়ি চৌফলদন্ডীতে পাঠিয়ে দেন গৃহকর্মী।

গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর তার অবস্থা অবনতি হয়। তার শরীরের অবনতির বিষয়টি আচঁ করতে পারেন গ্রামের কয়েকজন নারী। গ্রামের মানুষজন সহযোগিতা করে গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ৫ম তলায় ভর্তি করান শুভা আক্তারকে। এরপর বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে হাসপাতালের ৩য় তলায় ওয়ান স্টোপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রেফার করা হয়।

এদিকে, শিশুকে নির্যাতনের বিষয়টি পুলিশের কাছে পৌঁছে বুধবার বিকালে। পুলিশ শিশুর অবস্থা দেখে এবং অভিযোগ পেয়েই টেকপাড়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গৃহকর্মীকে আটক করেন।

শিশু শুভার প্রতিবেশি এক মহিলা বলেন, শুভার শরীরের ভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এমনকি হাতে, পেটে ও পিটে আগুনে পুড়ে দেয়ার চিহ্ন আছে। তার পেটও ফুলে আছে। গৃহকর্তার লাথির আঘাতে তার পেট ফুলেছে বলে জানিয়েছে শুভা। পলিথিন পুড়িয়ে শরীরে ছ্যাকা দেওয়ার কথাও ওই মহিলাকে জানিয়েছে শুভা।

 

 

 

পূর্বকোণ/আরাফাত-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট