চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

দুর্ভোগ আর কত কাল

পিসি রোড সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয়বারের মেয়াদও শেষ হচ্ছে এমাসে, অগ্রগতি নেই ধুলায়-ধূষণে নাকাল, ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে, প্রায় দুর্ঘটনা

ইফতেখারুল ইসলাম

২২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

পোর্ট কানেকটিং রোডের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের মে মাসে। এরপর আরো দুইবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ বাড়লেও কাজের অগ্রগতি তেমন নেই। তবে বেড়ে গেছে জনদুর্ভোগ। প্রচণ্ড ধুলি দূষণের কারণে বিশেষ জরুরি কাজ ছাড়া এই সড়ক দিয়ে কেউ দ্বিতীয়বার যেতে চায় না। সড়কের দুই পাশের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী এবং নিয়মিত যাত্রীরা যেন নরক যন্ত্রণা ভোগ করছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দুর্বল তত্ত্বাবধানের কারণেই এই দুরাবস্থার অবসান হচ্ছে না।

জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা পূর্বকোণকে বলেন, ঠিকাদারকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। জানুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে উল্লেখ করে বলেন, যেহেতু শুধুমাত্র কার্পেটিংয়ের কাজ বাকি আছে, তাই কাজ শুরু করলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই তা শেষ হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন হাজারো ট্রাক, কাভার্ডভ্যান এবং প্রাইম মুভার এই সড়ক দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করে। কিন্তু এই সড়কের ঠিকাদারের কাছে সড়কটির কোন গুরুত্বই নেই। চলতি জানুয়ারি মাসে তৃতীয়বারের মত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। কাজ এখনো অনেক বাকি। এই সড়ক দিয়ে চলাচলাকারীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। বিশেষ করে ধুলি দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এছাড়া সড়কের মাঝে সৃষ্ট গর্তে পড়ে যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে গাড়ি বিকল হওয়ার ঘটনা অহরহ। ছয় কিলোমিটার সড়ক পার হতে লেগে যায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সড়কের বেহাল দশায় যাত্রীবাহী সাধারণ যানবাহন সহজে এই পথ মাড়াতে চায় না। ফলে সড়কের উভয় পাশের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। ঠিকাদার যে গতিতে কাজ করছে তাতে জনদুর্ভোগ আরো বহুদিন থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, নিমতলা থেকে আনন্দীপুর পর্যন্ত সড়কটির একপাশে কার্পেটিং করা হয়েছে। অপরপাশ দেখে বুঝার উপায় নেই যে, এটি একটি রোড। কার্পেটিং করা অংশ দিয়ে দুই দিকের গাড়ি ঝুঁকিপূর্ণভাবে আসা-যাওয়া করছে। বিশেষ করে বন্দর থেকে বের হওয়া কন্টেইনারবাহী প্রাইম মুভার এবং কাভার্ডভ্যান একটি অপরটিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে ক্রস করে। ওইসময় পাশ দিয়ে কোন হালকা যানবাহন থাকলে তা গর্তে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। আনন্দীপুর গেটের পর থেকে আর কার্পেটিং করা হয়নি। এরপর থেকে পুরো সড়কটিই যানবাহন চলাচলে প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখানে প্রতিদিন কোন না কোন গর্তে পড়ে গাড়ির চাকা বসে যায়, চেসিস ভেঙে যায়, কখনো গাড়ির স্প্রিং ভেঙে যায়। কখনো গর্তে পড়ে চাকা আটকে যায়। সিএনজি ট্যাক্সি কিংবা প্রাইভেট কারের মত হালকা যানবাহনগুলো যতটা সম্ভব এই সড়কটি এড়িয়ে চলছে। কারণ গর্তে চাকা পড়ে হালকা যানবাহনের তলা মাটির সাথে লেগে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় জ¦ালানি তেলের টাংকি ফেটে গাড়িতে আগুন ধরে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের মে পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় আগস্টের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেই বাড়ানো মেয়াদও শেষ হয়েছে। এরপর জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু জানুয়ারি মাসও শেষ হতে চলেছে। ভালো প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ নিয়েছে অদক্ষ ব্যক্তি। অর্থাৎ ভালো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে অদক্ষ ব্যক্তি কাজ নেয়াতেই আজ এই দুর্গতি।
জানতে চাইলে চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মো. তৈয়ব পূর্বকোণকে বলেন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজের জন্য সড়কটিকে চারটি লটে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে নিমতলা থেকে আনন্দীপুর পর্যন্ত দুই লটে ১০০ কোটি টাকার ৩৬৫০ মিটার সড়কের কাজ করছে রানা বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একপাশের কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। অপর অংশে ম্যাকাডম এবং ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এখন শুধু কার্পেটিংয়ের কাজ বাকি আছে। কার্পেটিং করার জন্য ঠিকাদার প্রস্তুতি নিয়েছে। চসিকের এসফল্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে কাজ করার জন্য ঠিকাদার মালামাল ক্রয় করেছে। আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু হবে। যদি আন্তরিকভাবে কাজ করে তাহলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই কার্পেটিংয়ের কাজ সম্পন্ন হবে।

তিনি জানান, সাধারণ মানুষের ধারণা চলমান কাজ শেষ হলেই পিসি রোডের কাজ শেষ হয়ে যাবে। বাস্তবে তা নয়। আরো দুই লটের কাজ চলছে।আনন্দী বাজার থেকে সাগরিকা মাজার পর্যন্ত ১৪৫০ মিটার সড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজের মেয়াদ আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে। কাজটি করছে চসিকের ঠিকাদার মনজুর আলম চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনজুর আলম চৌধুরী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট