চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তিপণের জন্য অপহরণ চিৎকারের কারণে খুন

কর্ণফুলীতে প্রবাসী খুন প্রেমিকাসহ গ্রেপ্তার দুই আদালতে জবানবন্দি

মোর্শেদ নয়ন, কর্ণফুলী

২২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী উপজেলায় পাঁচদিন আগে আবুধাবি ফেরত যুবক মো. রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী সজীব (২৭) নৃশংসভাবে খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে খুনের সঙ্গে জড়িত নিহত প্রবাসীর প্রেমিকাসহ দুজনকে। গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন- সুমি আক্তার শারমিন (২৭) ও বাদশা মিয়া (৩১)। হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে এবং বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সুমি চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে এবং বাদশা আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সফি উদ্দিনের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জোবাইর সৈয়দ। গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা সিডিএর টেক এলাকার কবরস্থান থেকে মো. রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী সজীব (২৭) নামে এক প্রবাসী যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন ছিল। সজীব পটিয়া উপজেলার খরনা গ্রামের আতাউর রহমান চৌধুরীর ছেলে।

কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জোবাইর সৈয়দ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, আড়াই বছর আগে দেশে আসলে আবুধাবি প্রবাসী সজিবের সাথে মুঠোফোনে রং নাম্বারের পরিচয়ের সূত্রধরে সম্পর্কে জড়ান এক সন্তানের জননী সুমি আক্তার শারমিনের সাথে। সুমির বাসায়ও যাতায়ত ছিল সজিবের। তাঁদের সম্পর্কের কথা সুমির স্বামী জানত এবং তাঁদেরকে মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দিত। কিন্তু সজিব ফের আবুধাবি চলে গেলে তাঁদের সম্পর্কে ছেদ পড়ে। গত ১৪ নভেম্বর ফের দেশে আসার পর ১৯ ডিসেম্বর সজিব চট্টগ্রাম নগরীর কদমতলী এলাকার এক মেয়েকে পারিবারিকভাবে আকদ সম্পন্ন করেন। ২৫ জানুয়ারি স্ত্রীকে ঘরে তোলার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে, প্রেমিকার সুমির সাথে মুঠোফোনে ফের সর্ম্পক স্থাপন করেন।

গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেল সজিব নগরীর বাকলিয়ায় ফুপুর বাসায় অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে যান। সেখান থেকে ফুপাত ভাইকে নিয়ে যান বহদ্দারহাট এলাকায় চিকিৎসকের চেম্বারে। সেখান থেকে নগরীর গরীবউল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় চাচার বাসায় দাওয়াত দিতে যাবার কথা বলে বের হন। চাচার বাসায় যাবার কথা মূলত সজিব সেখানে যাননি। গতকাল শনিবার সকালে সিডিএর টেক এলাকায় কবরস্থানের পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় সজিবের বাবার দায়ের করা মামলায় সোমবার রাতে কর্ণফুলী থানার মইজ্যারটেক এলাকা থেকে বাদশা ও সুমিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বাদশার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার কাছ থেকে সজিবের একটি ঘড়ি উদ্ধার করা হয়েছে, যেটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক জোবাইর সৈয়দ।
তদন্তে পাওয়া নেপথ্যের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জোবাইর জানান, চাচার বাসায় না গিয়ে সজিব গিয়েছিলেন তার প্রেমিকা সুমির সঙ্গে দেখা করার জন্য। স্বামী মো. সেলিমের সম্মতিতে সজিবের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যান। সজিব দেখা করতে আসলে সেলিম ও সুমি এবং আরও পাঁচজনসহ মোট সাতজন মিলে তাকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেন।

গত বৃহস্পতিবার সজিব সুমির সঙ্গে বাসায় গিয়ে সাক্ষাতের কথা ছিল। তাকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের জন্য আগের রাতে (বুধবার) সাতজন মিলে শাহ আমানত সেতুর নিচে মিটিং করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সজিব পারিবারিক ব্যস্ততার কারণে যেতে পারেননি। শুক্রবার সুমি তাকে ফোন করে জানায়, মইজ্যারটেক এলাকায় গেলে সেলিম তাকে নিয়ে যাবে বাসায়।’
পুলিশ পরিদর্শক জোবাইর জানান, মইজ্যারটেক থেকে সেলিম ও সজিব হেঁটে যাচ্ছিল। সিডিএরটেক এলাকায় পৌঁছার পর সজিবকে কয়েকজন মিলে ঝাপটে ধরে মারধর করে টেনেহিঁচড়ে একটি কবরস্থানের পাশে অন্ধকারে নিয়ে যায়। সেখানে তার হাত-পা এবং মুখ বেঁধে ফেলা হয়। প্রথমে ২০ লাখ, পরে ১৫ লাখ এবং এরপর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ১০ লাখ টাকায় রাজি হলে সজিবের মুখের বাঁধন আলগা করে দেওয়া হয়। এসময় সজিব চিৎকার করে ওঠেন। তখন তার গলায় থাকা মাফলার দুদিক থেকে টান দেন দুজন। আর দুজন গিয়ে মাথা নিচু করে ঠেসে ধরে রাখে মাটিতে। শ্বাসরোধে মৃত্যু হয় সজিবের। এরপর সজিবের মানিব্যাগ ৯ হাজার ৮০০ টাকা, হাতঘড়ি ও দুটি মোবাইল নিয়ে তারা চলে যায়।

তিনি বলেন, ‘দুটি মোবাইল নিলেও অন্য একটি মোবাইল লাশের আনুমানিক ৫০ গজ দূরে পড়ে ছিল। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটি উদ্ধার করি। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা সুমি ও সেলিমের সন্ধান পাই।
কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ইয়াছির আরাফাত জানান, খুনের পুরো রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। সেলিমসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট