চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শোক প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী পর পর ৪ এমপির মৃত্যু বড় কষ্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

২২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ

সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের অসামান্য সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেম ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সত্যিই আমাদের দুর্ভাগ্য, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আমাদের বর্তমান সংসদের চার জন সংসদ সদস্য মারা গেলেন। মানুষ জন্ম নিলে মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু সত্যিই অত্যন্ত কষ্টের, বেদনার। প্রয়াত সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের কর্মজীবনে সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেম ছিল অসামান্য। হঠাৎ করেই এত তাড়াতাড়ি তিনি এভাবে চলে যাবেন, তা কখনো ভাবতেও পারিনি।

গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, সরকারি দলের কাজী নাবিল আহমেদ, ওয়াশিকা আয়েশা খান, আ ক ম সারোয়ার জাহান ও জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান। আলোচনা শেষে শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। পরে প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন এবং মোনাজাত করা হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বাকি কার্যক্রম স্থগিত রেখে সংসদের অধিবেশন আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জন্ম নিলে মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু সেই মৃত্যু এমন সময় হয়, সেটা সত্যি খুব কষ্টকর। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী সাদেকের মৃত্যুর পর মিসেস সাদেককে যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুরোধ করলাম, তখন প্রথমে তিনি ঘাবড়ে গিয়ে বলেছিলেন, আমি এটা করতে পারব? আমি বলেছিলাম, আপনি পারবেন। ওই নির্বাচন করে জিতে আসার পর প্রথমে তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিলাম। তখন প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেক বললেন, আমি তো কখনো এভাবে অফিস চালাইনি, কখনো কিছু করিনি, আমি তো গৃহিণী ছিলাম। আমি কীভাবে করব? আমি বলেছিলাম, যেহেতু আপনি শিক্ষিত, আমি আছি আপনার সঙ্গে। কোনো চিন্তা নেই। যখন যা দরকার হবে, আপনি বলবেন। আপনি পারবেনÍ এই বিশ্বাস আমার আছে। এরপর প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সততার সঙ্গে করে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ইসমাত আরা সাদেককে জনপ্রশাসনের দায়িত্ব দিলাম। তখনও তিনি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তার সঙ্গে বসতাম। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি কাজ করতেন। প্রতিটি কাজে তার সততা ও একাগ্রতা ছিল অসামান্য। তিনি বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগে আমার সঙ্গে দেখা করে মিসেস সাদেক আমাকে বললেন, শরীরটা খুব খারাপ। অপারেশন করতে হবে। তখন তাকে পরামর্শ দিয়ে বলেছিলাম, অপারেশনের আগে দ্বিতীয় অভিমত নিন। অনেকক্ষণ কথা হলো। কিন্তু উনি আজ আর নেই। কেশবপুরের উন্নয়নে উনি অনেক কাজ করে গেছেন। উনাকে ভুগতে হলো না। কিন্তু তিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, ভাবতেও পারিনি।
সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইসমাত আরা সাদেক অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার স্বামী প্রয়াত শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেকও ছিলেন অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত ও অভিজাত পরিবারের সদস্য। আমাদেরও চলে যেতে হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ইসমাত আরা সাদেক সবসময় আমাদের সঙ্গে মাতৃস্নেহে কথা বলতেন, পরামর্শ দিতেন। তার স্বামী এ এস এইচ কে সাদেকও যেমন অত্যন্ত সজ্জন-প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ছিলেন, ঠিক তেমনি অত্যন্ত সাদামনের মানুষ ছিলেন।
সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেকের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলেন। একজন বিদুষী, ভদ্র ও অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন তিনি। তার কথাবার্তা, আপ্যায়ন ও চাল-চলন অভিজাত পরিবারের আভিজাত্য ছিল। জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, হঠাৎ করেই পর পর কয়েকজন এমপির মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করে তুলেছে। মৃত্যু অবধারিত, কিন্তু মানুষের মৃত্যু সত্যিই অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট