চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

গাউছুল আজম সিটিতে তরিক্বত কনফারেন্সে অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ্

ঈমানের পরীক্ষা তাদের উপরই আসে যারা হকের উপর থাকে

২১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

‘যুগে যুগে যতবার ইসলামের উপর আঘাত এসেছে ইসলাম ততবারই আরও অধিক শক্তিশালী হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আঁধারের গভীর হতে আলোকধারায় ফিরেছে। প্রিয় রাসুলের হিজরত, তায়েফের করুণ স্মৃতি, কারবালার নৃশংসতা, হযরত শাহজালাল (রহ.) এর সাথে গৌড়গৌবিন্দের ষড়যন্ত্র, খাজা গরীবে নেওয়াজ (রা.) এর সাথে পৃত্থীরাজের ঘটনা কিংবা ইমাম আজম আবু হানিফা (রা.), মুজাদ্দিদে আল ফেসানীর কারাবরণ এসব ইসলামের ইতিহাসকে পর্যালোচনা করলে বাধা বিপত্তির যে ভয়ানক চিত্র ফুটে উঠে তা কখনো ভুলবার মত নয়। তবে আশার কথা হলো কোনকালেই ইসলাম পরাজিত হয়নি, পরাভূত হয়নি। এখলাসের নিশানা যতবার তাক করেছে প্রতিবারই বিজয়ের সানাই বেজেছে, ষড়যন্ত্রকারীরা পরাভূত হয়েছে। হযরত গাউছুল আজমের অশ্রুসিক্ত এ তরিক্বতও তার ব্যতিক্রম নয়। বাধার পাহাড়, দ্বিধার দেয়াল, হিংসুকের হিংসা করার খেয়াল, সবকিছুকে ডিঙিয়ে খোদার পথে, নবী প্রেমের উৎসাহে মঞ্জিলে মকছুদের দিকে ছুটে চলছে। কাগতিয়ার নিভৃত পল্লি থেকে যে তরিক্বতের সূচনা হয়েছিল তা আজ বিশ^ময় ছড়িয়ে পড়েছে।

এতদূর আসার পথ কোনকালেই কুসুম কোমল ছিল না। নিন্দুকের নিন্দাবাদ কিংবা কারো জিন্দাবাদ এই তরিক্বতের যাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারেনি। এই তরিক্বত চলে না দুনিয়ার কোন শক্তিমত্তায়, কারো অর্থবিত্তের দানশীলতায়, এই তরিক্বত চলে না আলেমের এলেমে কিংবা লেখকের কলমে, শায়েরের শায়েরীতে কিংবা বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধিতে। এই তরিক্বত চলে খোদার দয়াতে, নবীজির ফুয়ুজাতে গাউছুল আজমের এখলাস আর অশ্রুর বদৌলতে। গাউছুল আজম একবিংশ শতাব্দিতে নবী (দ.) এর একটি উপহার, যাঁর ছোঁয়াতে ছায়াতে লক্ষ লক্ষ পথহারা মানুষ পেয়েছে নূরে মোস্তফার সন্ধান। গাউছুল আজমের বক্ষে নবী (দ.) যে নূর আল্লাহ পাক আমানত রেখেছেন তার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনুল কারীমে এসেছে ওরা আল্লাহর নূরকে ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণ করবেনই। সুতরাং নিরাশা নয় আশার বাতিঘর হয়ে নবী (দ.) এর দয়ায় এ তরিক্বত সামনে যাচ্ছে যাবে ইনশাআল্লাহ। এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এখলাসের সাথে নিজেদেরকে স্থির রাখা, গাউছুল আজম যে পথ মত আদর্শকে নবীর কাছ থেকে পেয়েছেন সে অনুযায়ী আমল করা সবর ও শোকরের সাথে পথচলা। আল্লাহর মেহেরবানিতে নবীর উসিলায় দুজাহানে কামিয়াবী হবেই।

গতকাল ২০ জানুয়ারি সোমবার নগরীর বায়েজিদের গাউছুল আজম সিটিতে ঐতিহাসিক তরিক্বত কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মহান মোর্শেদ আওলাদে রাসূল হযরতুলহাজ আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী মাদ্দাজিলুহুল আলী এসব কথা বলেন।

কনফারেন্সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা ইসলামী আরবী বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, নানুপুর মাজহারুল উলুম গাউছিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুছলেহ উদ্দিন আহমদ মাদানী, এলবিয়ন গ্রুপ এর প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন, হাটহাজারী উত্তর মাদার্শা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ নূর খান প্রমূখ।
বক্তব্য রাখেন হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর, মাওলানা মুহাম্মদ রকিব উদ্দিন, মুহাম্মদ সালাউদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ এরশাদুল হক, মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন নূরী প্রমুখ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জালাল আহমদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সাহেদ ইকবাল বাবু, মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি মুহাম্মত সালাহ উদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার কামাল, আওয়ামীলীগ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান।

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, মানুষের মনের ময়লা দূর করার জন্য প্রয়োজন তরিক্বত, প্রয়োজন একজন আধ্মাত্মিক সাধকের। মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ এমনই একটি তরিক্বত। কাগতিয়ার গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন এমনই একজন আধ্মাত্মিক সাধক। যিনি নবী প্রেমের ছোঁয়া দিয়ে মানুষের ক্বলবকে করে তোলেন নবীর নূরে নূরান্বিত।

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, যুব সমাজ হচ্ছে একটি দেশের প্রাণশক্তি। সেই যুব সমাজকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের দেখানো পথে এবং মতে পরিচালিত করে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রেখে চলেছেন কাগতিয়া দরবার শরীফ।
কনফারেন্সে যোগদানের উদ্দেশ্যে সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড, বোয়ালখালী, আনোয়ারা পটিয়া ছাড়াও রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, মহেশখালী থেকে গাড়িযোগে কাগতিয়া দরবারের অসংখ্য অনুসারী, ভক্ত ও সাধারণ মুসলমানেরা কনফারেন্সস্থলে আসতে থাকে। চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লা, বি.বাড়িয়া, চাঁদপুর ও ঢাকা থেকেও কাগতিয়া দরবারের হাজার হাজার অনুসারী ও মুসলমানেরা উপস্থিত হন। কনফারেন্সে যোগদানের জন্য শুধু দেশের নয়, বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সৌদিআরবসহ ওমান, কাতার, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবী, শারজাহ্ হতেও কাগতিয়া দরবারের অনুসারী সপ্তাহখানেক পূর্ব থেকে বাংলাদেশে আসেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আলোকসজ্জিত করা হয় এবং চট্টগ্রামের প্রায় সকল প্রবেশমুখে ও বিভিন্ন উপজেলায় উত্তোলন করা হয় তোরণ। মাগরিবের আগেই কনফারেন্সস্থল গাউছুল আজম কমপ্লেক্সের বিশাল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
মিলাদ ও কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্য, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি, অসহায় নির্যাতিত মুসলমানদের হেফাজত এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হুর ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট