চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সরকারি মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে ৬১১ কৃষক

সীতাকুণ্ডে ২ সহস্রাধিক চাষির হতাশা

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকু-

২০ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু-ে সরকারি লটারির মাধ্যমে মাত্র ৬১১ জন কৃষক সরাসরি উচ্চমূল্যে আমন ধান বিক্রির সুযোগ পেলেও দুই সহ¯্রাধিক চাষি হতাশায় ভুগছেন। তাদেরকে মনপ্রতি ৩-৪শ টাকা পর্যন্ত কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা যায়, সীতাকু-ে এবার ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন ২৭৫৩ জন কৃষক। সরকারি নির্দেশে এদের মধ্যে থেকে লটারির মাধ্যমে মোট ৬১১ জন কৃষকের কাছ থেকে ৬১১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লটারিতে প্রতিকেজি ধান সরকার ক্রয় করবে ২৬ টাকা করে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে পাইকাররা কৃষকের ধান ক্রয় করেন প্রতি কেজি ১৮-২০ টাকা। তাই লটারিতে যেসব কৃষক ধান বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন, তারা প্রতি টনে ৩-৪শ টাকা পর্যন্ত বেশি পাবেন। আর যারা লটারিতে বিক্রির সুযোগ পাননি, তারা অনেক কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কৃষি অফিসের খাদ্য কর্মকর্তা ধান সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে হিসেবে ধান সংগ্রহ করতে হলে সব কৃষকের ধান ক্রয় করা কৃষিবিভাগের পক্ষে কোনমতেই সম্ভব নয়। এ কারণে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৬১১ জন সৌভাগ্যবান কৃষকের তালিকা করা হলে ধান বিক্রি করার সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন আরো ২১৪২ জন কৃষক।

এদিকে সরকারি দামে ধান বিক্রির সুযোগ পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহের কমতি নেই। যারা লটারির মাধ্যমে ২৬ টাকা কেজিতে ধান বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছেন তারা যেমন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন, তেমনি সুযোগবঞ্চিত কৃষকেরা হতাশ হয়েছেন এই সুযোগ না পাবার খবরে। এ বিষয়ে কথা বললে লটারি পাওয়া উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল মান্নান ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাকখালী গ্রামের কৃষক আবদুর রউফ প্রায় অভিন্ন বক্তব্য রেখে বলেন, লটারিতে সরকার আমাদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কিনলে আমরা খুবই খুশি। কারণ এতে প্রতি মন ধানে বাজারদর থেকে আরো ৩-৪শ টাকা বেশি পাব আমরা। এ উদ্যোগের জন্য সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তারা আরো বলেন, আগে বাজারে গিয়ে ধান বিক্রির জন্য অপেক্ষা করতাম। অনেক দরদামের পর পাইকাররা কিনে নিত।

কখন কত দাম পেতাম, তার ঠিক ছিলো না। এখন আমরা জানতে পারছি যে, ২৬ টাকা করে বিক্রি করব। এদিকে হতাশার কথা ব্যক্ত করেন লটারি না পাওয়া একাধিক কৃষক। বারৈয়াঢালার মহানগর গ্রামের আবুল কালাম ও সৈয়দপুরের বগাচতর গ্রামের কৃষক শামছুদ্দীন বলেন, লটারি না করে সরকার সবার কাছ থেকে এই মূল্যে ধান কিনে নিলে কৃষকরা উপকৃত হতো। এখন কেউ লাভবান, কেউ বঞ্চিত। কেউ কেজি ২৬ টাকা দরে বিক্রি করবে, আবার কেউ ২০ টাকাও বিক্রি করতে পারবে কিনা ঠিক নেই। আমরা যারা লটারি পাইনি বঞ্চিত হলাম, তাদের কি হবে? যেহেতু বঞ্চিত কৃষকের সংখ্যাই বেশি ভবিষ্যতে তারা আগ্রহ হারাবেন বলে মন্তব্য করেন তারা। অন্যদিকে সরকার উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার মাত্র ৬১১ জন কৃষকের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে ধান ক্রয় করলেও তাতে পাইকারি ব্যবসায় তেমন সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দীর্ঘদিন ধরে ধানের পাইকারি ব্যবসায়ী জয়দেব নাথ। তিনি বলেন, মাত্র ৬১১ জনের কাছ থেকে সরকার ধান কিনছে। তারা হয়ত প্রতি টন ১০৪০ টাকা করে বিক্রি করছেন। কিন্তু অন্যদের কাছ থেকে আমরা ধান পাব আগের মতই। তাই আমাদের ব্যবসার তেমন কোন সমস্যা হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসের খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা প্রিয়কমল চাকমা বলেন, সরকার ধান কেনার জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। আমি সে টার্গেট পূরণে লটারির মাধ্যমে ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার ২৭৫৩ জন কৃষকের মধ্যে ৬১১ জনের কাছ থেকে ৬১১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এছাড়া আরো কিছু কৃষকের নাম অপেক্ষমাণ রেখেছি। যদি লটারির কোন কৃষক পর্যাপ্ত ধান দিতে সক্ষম না হন, তবে অন্যদের কাছ থেকে নেয়া হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবে বলে তিনি মনে করেন। আর যারা লটারি পাননি তারা হয়ত কিছু কম মূল্যে বিক্রি করবেন একথা ঠিক। কিন্তু সরকার ৬১১ মেট্রিক টন ক্রয় করায় পাইকারি বাজারে ধানের কিছু ঘাটতি হলে অন্য কৃষকদের ধানের দামও পূর্বের থেকে বৃদ্ধি পেতে পারে বলে কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট