চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

তারল্য সংকটে খাতুনগঞ্জে ধস

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। এলাচ, সয়াবিন, পাম তেল, ছোলা, ডালের দাম দুই মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। গত এক সপ্তাহ ধরে বাজার নিম্নমুখী। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। তারল্য সংকটের কারণে বাজারে ধস নামছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত নভেম্বর থেকে ভোগ্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। মসলা জাতীয় পণ্য এলাচের দাম কেজি প্রতি ২২শ টাকা থেকে বেড়ে ৪ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। দেড় মাসের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ১৮শ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছিল। তবে খুচরা বাজারে এখনো চার হাজার ৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে পাম তেলের দাম তিন হাজার ২১০ টাকা থেকে কমে গতকাল বুধবার দুই হাজার ৮৫০ টাকা, সয়াবিন ৩৪শ টাকা থেকে কমে ৩২৫০ টাকায় নেমে এসেছে। তিন দিনের ব্যবধানে বাজারে বড় ধস নেমেছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘এলসি ও ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলো চাপাচাপি শুরু করেছে। ঋণ শোধের জন্য পণ্য বিক্রি করে টাকা নগদ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বাজারে এখন নগদ টাকা সংকট চলছে। বেশি দামে কেনা পণ্য কম দামে বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ ও বাকি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে বাজারে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারল্য সংকটের ফাঁদে পড়ে ডিও এবং মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, চড়া সুদে ব্যাংক ঋণ নিয়ে এলসি খুলতে হয় ব্যবসায়ীদের। ১২ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হয়। ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদ এক অঙ্কের করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী এপ্রিল থেকে তা কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে এপ্রিলের আগে ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। একইভাবে বাকিতে কেনা দেনাদাররাও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। দেনাদার ও ঋণ পরিশোধের জন্য বেশি দামে কেনা পণ্য কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। এতে নগদ টাকার সংকট চলছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় বাজারে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই মাস ধরে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে মসলা জাতীয় পণ্য এলাচের দাম। নভেম্বর মাসে কেজি প্রতি ২২শ থেকে ২২৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছিল এই পণ্যটি। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হু হু করে বেড়ে ৪ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে। এখনো আন্তর্জাতিক বাজারে এলাচের মূল্যবৃদ্ধি রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারপরও গত এক সপ্তাহ ধরে এলাচের দাম কমতে শুরু করেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে চারশ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
মসলা আমদানিকারক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘গত মঙ্গলবার কেজি প্রতি তিন হাজার ৬৫০ টাকা দরে এলাচ বিক্রি করেছিলাম। একদিন পর সেই এলাচের দাম ৩৫শ টাকায় নেমে আসে। এখন বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে এলাচের দাম এখনো ৪ হাজার টাকার বেশি ।’
তবে ডিও ব্যবসায়ীরা ৩৫শ টাকা থেকে ৩৬শ টাকা দরে বিক্রি করলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৪শ টাকা দরে।

এলাচ ছাড়াও পাম অয়েল ও সয়াবিনের বাজারও দুই মাস ধরে অস্থির ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাম অয়েলের ডিও তিন হাজার ২১০ টাকা থেকে নেমে দুই হাজার ৮৫০ টাকায় নেমে এসেছে। গতকাল আন্তর্জাতিক বুকিং দর ছিল তিন হাজার ৩০ টাকা। গত নভেম্বর মাসে পাম ওয়েল দুই হাজার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। একইভাবে সয়াবিন তেলের দামও ৩৪শ টাকা থেকে কমে তিন হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে তা ২৯শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে খুচরা বাজারে ৩৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মেসার্স আমান এন্টারপ্রাইজের মালিক হাজি আমান উল্লাহ বলেন, ‘মিল মালিকদের যোগসাজশে ডিও ব্যবসায়ীরা সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার অস্থির করে তুলেছে। শেয়ার বাজারের মতো ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ে খেলছে ডিও ব্যবসায়ীরা। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে হঠাৎ ছন্দপতন শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মিল থেকে সরবরাহের আগেই নগদে তেলের ডিও বিক্রি করে দেয় ডিও ব্যবসায়ীরা। সেই তেল বাজারে আসতে আবার দাম নেমে যায়। এই কারসাজির কারণে ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে খাতুনগঞ্জে এখন নগদ টাকার সংকটে বাজার থমকে গেছে।’

ডালের বাজারও হঠাৎ করে থমকে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ছোলা ৫৭-৫৯ টাকা থেকে বেড়ে ৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা আবার ৬৫ টাকায় নেমে এসেছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক অজয় দত্ত পূর্বকোণকে বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। পণ্যের দাম হঠাৎ বাড়ছে, ফের কমছে।

 

 

পূর্বকোণ / এমএসইউ-এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট