চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

শেখ রাসেল এভিয়ারি পার্কের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাধা অবৈধ বসতি

রাঙ্গুনিয়া অবৈধ বসতিদের রক্ষার পাঁয়তারা

আবুল কালাম আজাদ হ কাপ্তাই

১৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ

অভ্যন্তরীণ এলাকায় জনবসতি রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর বনাঞ্চলে শেখ রাসেল এভিয়ারি এন্ড ইকো পার্ক সংরক্ষণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে এসব জন বসতিদের ঘিরে। বর্তমানে পার্কের সীমানায় নিরাপত্তার জন্য বেড়া নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়নে বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। এতে পার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। জানা গেছে, পার্কের উন্নয়নের জন্য জাতীয় অর্থ পরিষদে গত অর্থবছরে ১২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ পাশ করা হয়।

পার্ক প্রকল্প কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বন বিভাগ পার্কের উন্নয়নে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে। গতবছর চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের কারিগরি সহায়তায় উন্নয়নের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরিসহ বাস্তবায়নের জন্য টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করে। সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কের সীমানায় কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মজিদ কর্পোরেশনকে নিয়োগ দেয়া হয়। গত বছরের শেষের দিকে ঠিকাদার বেড়া

নির্মাণ কাজ শুরু করতে যায়। কিন্তু সেখানকার বসতিদের বাধার কারণে নির্দিষ্ট স্থান থেকে একাধারে কাজ শুরু করা যায়নি। বিক্ষিপ্তভাবে বেড়া নির্মাণের কাজ চললেও নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। অভিযোগ পাওয়া যায়, পার্ক এলাকায় দু‘ শতেরও বেশি পরিবারের বসতি রয়েছে। সীমানা বেড়া নির্মাণ প্রকল্পের কারণে এসব বসতি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছিল। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় অসাধু বন কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে পার্ক এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে অবৈধ বসতিদের রক্ষার পাঁয়তারা চলছে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ঠিকাদারের লোকজন এবং পার্কে নিয়োজিত কতিপয় কর্মচারী বনাঞ্চলে পার্কের সীমানা নির্মাণে অবৈধ বসতি রক্ষায় কারসাজি করছে। চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, নিবিঘœœ পরিবেশ না থাকায় যথাযতভাবে সীমানা রক্ষায় বেড়া নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। একাধারে সীমানা বেড়া তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। পার্কের সেগুনবাগান, দুবাইলাঘোনা ও জঙ্গল দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর এলাকার আব্দুল খালেক, আলতাপ মিয়া, আব্দুল কাদেরসহ পার্ক এলাকার কয়েকজন বসতি জানান, তারা বন বিভাগের নয়, সরকারি বনাঞ্চলে বসবাস করে আসছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে পার্কের সীমানা দাবি করে ঘেরা নির্মাণে তাদের অবরুদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে ।

পার্কের পরিদর্শক ও রাঙ্গুনিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় বলেন, পার্কের অভ্যন্তরে বন বিভাগের জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ১৫০টি অবৈধ পরিবারের বাড়িঘর রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছে। তাদের কেউ কেউ ভূমি অফিসের সাথে যোগসাজসে গোপনে সংরক্ষিত বনের জায়গা ভুয়া বন্দোবস্তির নামে বৈধ বলে দাবি করছে। বন বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারিতে পার্কের সীমানা বেড়া নির্মাণের কাজ বাধাগ্রস্ত করছে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে রাঙ্গুনিয়া বন রেঞ্জের কোদালা বন বিটের দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর বনাঞ্চলে ২১০ হেক্টর এলাকাজুড়ে দেশের একমাত্র পক্ষীশালা শেখ রাসেল এভিয়ারি এন্ড ইকো পার্ক স্থাপিত হয়। চট্টগ্রাম বন অঞ্চল কর্তৃপক্ষ পার্ক প্রকল্প গ্রহণকালে বেত চারা রোপণ করে চারিদিকের সীমানা চিহ্নিত করে। পাখীদের অভয়ারণ্য প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং রোপওয়েতে কেবল কারে ভ্রমণের দুর্লভ সুযোগ সুবিধায় এটি প্রকৃতি ও পাখি প্রেমিক দর্শনার্থী পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। পার্কের উন্নয়নে অন্যান্য প্রকল্পের পাশাপাশি সেখানকার নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে সীমানা বেড়া নির্মাণ ছিল খুবই জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় অর্থ পরিষদে পাশকৃত সরকারি বরাদ্দ থেকে সীমানা সংরক্ষণের জন্য কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ প্রকল্পও গ্রহণ করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, পার্ক এবং সীমানা অরক্ষিত থাকায় পার্ক এলাকার বনাঞ্চলে অবৈধ বসতি গড়ে উঠে।

পার্কের পরিচালক ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক আব্দুল আউয়াল জানান, তিনি কিছুদিন হয় দায়িত্বে এসেছেন। প্রথম পর্যায়ে পার্ক পরিকল্পনার সময় অবৈধ বসতির বিষয়ে জানা নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট