চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হুইল চেয়ারে জাহাঙ্গীরের জীবনসংগ্রাম

রাউজান শুক্রবারের প্রতিবেদন

জাহেদুল আলম, রাউজান

১৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ

উপজেলার হলদিয়া ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছালেহ আহামদ তালুকদার বাড়ির ইদ্রিস মিয়ার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। ১৯৫৭ সালের ১২ আগস্ট জন্ম নেয়া জাহাঙ্গীর আলম মাত্র ১৭ বছর বয়সে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন। এরপর দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে কষ্টে জীবনযাপন করে চলেছেন তিনি।

১৯৭৩ সালে হলদিয়া হযরত এয়াছিন শাহ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন জাহাঙ্গীর। ৭৩ সালে এসএসসি পাস করার পর ১৯৭৪ সালে ঠিকাদারের হয়ে বিদ্যুতের কাজ করতেন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে। সেসময় সেনাবাহিনীর তৈরিকৃত স্টিলের এঙ্গেল বিদ্যুৎ খুঁটিতে কাজ করতে গিয়ে শর্ট খেয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। চমেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে। প্রায় দেড়বছর চিকিৎসা নেয়ার পর প্রাণ ফিরে পেলেও পঙ্গু জীবনের সম্বল হয় হুইল চেয়ার। শরীরের কোমর থেকে নিচের অংশ সেই থেকে বিকল। হুইল চেয়ারে বসে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয় বিকল্প পদ্ধতিতে। এসবের পরও থেমে নেই তার জীবন সংগ্রাম। অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছেন দীর্ঘ ৪৬ বছর। কোনসময় নিজে কিংবা কারো সাহায্যে হুইল চেয়ার নিয়ে ঘুরে বেড়ান জাহাঙ্গীর। পঙ্গুত্ববরণের পর থেকে করেছেন কাঠ ব্যবসা। এনজিও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে করেছেন হাঁস-মুরগি পালন। ১২ বছর যাবত বিনা বেতনে স্বেচ্ছায় চৌধুরী বটতল কেন্দ্রে টিকা খাওয়াতেন তিনি। প্রতিদিন ৩ মাইল হুইল চেয়ারে বসে ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন এলাকা। প্রতিদিন আমিরহাট বাজারে আসা নিত্য কাজ তার। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়া তার নেশা। সর্বপ্রথম স্যানিটারি লেট্রিন নিয়ে কাজ করেন হলদিয়া এলাকায় তিনি। সমাজের প্রতিটি অনুষ্ঠানে হুইল চেয়ারে করে হাজির হন তিনি। ঘরে ঘুমানোর সময় নিজে নিজে হুইল চেয়ার থেকে উঠা-নামা নিজেই করতে পারেন। এ প্রশিক্ষণ ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকাকালীন ডাক্তাররা দিয়েছিলেন বলে তিনি জানান। নামাজের ওয়াক্ত হলেই হুইল চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ পড়ে নেন তিনি।

বর্তমান ৬৩ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। ৫ ভাই দু’ বোনের মধ্যে সবার বড় জাহাঙ্গীরের মা ফরিদা বেগম এখনো বেঁচে আছেন। জাহাঙ্গীর হুইল চেয়ার নিয়ে বর্তমানে ছোটখাট ব্যবসা পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে মাসিক প্রতিবন্ধী ভাতাও পেয়ে থাকেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছেশক্তি থাকলে কোন কিছু দাবিয়ে রাখতে পারে না। তাই অদম্য গতিতে তার ছুটে চলা। কারো করুণার বোঝা না হয়ে হুইল চেয়ার ভর করে তার এগিয়ে যাওয়া সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে বলে মন্তব্য করেন হলদিয়া ইউপির সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান এম বেলাল উদ্দিন। জাহাঙ্গীর বলেন, পাঠকপ্রিয় দৈনিক পূর্বকোণ বের হওয়ার পর থেকে আমি নিয়মিত পূর্বকোণ পড়ি। আমার বাবাও দৈনিক পূূর্বকোণ পড়তেন। সরকারের নিকট সমাজের প্রতিবন্ধীদের ভরণ-পোষণের জন্য আরো বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট