চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বিজয় দিবসে পেলেন মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা মরার পর পেলেন না গার্ড অব অনার

সাতকানিয়া

সুকান্ত বিকাশ ধর, সাতকানিয়া

১৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ার চরতি ইউনিয়নের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা প্রণব কুমার ধর [প্রকাশ পি কে ধর রুনু] রণাঙ্গণের একজন লড়াকু সৈনিক হিসেবে পরিচিত ছিল সাতকানিয়াসহ চট্টগ্রামের সর্বত্র। তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে নিজ বাড়িতে পরলোকগমন করেন। তবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন বা সমাহিত করার কথা। কিন্তু তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদাতো দূরের কথা, উল্টো রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেয়ার জন্য অভিযোগ দেয়ায় রুনু ধরের স্বজনদের পাশাপাশি ক্ষোভে ফুঁসছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। এ নিয়ে লেখালেখির মাধ্যমে তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অন্যদিকে গত বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ব্যানারে মানববন্ধন করে এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ও স্বজনদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গত রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিজ বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের তুলাতলি এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রণব কুমার ধর [প্রকাশ পি কে ধর রুনু] পরলোকগমন করেন। এ বীরের মৃত্যুর খবরটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। রুনু ধরের মৃত্যুর পরদিন সোমবার [১৩ জানুয়ারি] সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবু তাহের এলএমজি নিজেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দাবি করে তার স্বাক্ষরিত ও ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষর ও গেজেট নং উল্লেখ করে রুনু ধরকে ‘রাষ্ট্রীয় সম্মানে’ সমাহিত না করার জন্য সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসকের [যেহেতু কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ তাই ইউএনও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক] নিকট আবেদন করেন। ইউএনও আবু তাহের এলএমজিদের দেয়া আবেদনের সত্যতা যাচাই না করে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা থেকে বিরত থাকেন।

এ ব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘রুনু ধর আসলে প্রণব কুমার ধর নয় এবং তিনি মুক্তিযোদ্ধাও নন- মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের এলএমজিসহ ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরিত এমন একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। এছাড়া মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকেও আমাকে কেউ জানায়নি। তাই তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া থেকে বিরত ছিলাম।’

এ ব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবু তাহের এলএমজির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে, গত বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে রুনু ধরকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেয়ায় মানববন্ধনের আয়োজনের বিষয়ে দক্ষিণ জেলা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাসান বলেন, রুনু দা খুবই সাদাসিধে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার লোভ বলতে কিছুই ছিল না। তাকে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেয়ায় আমরা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আগামীতে আরও কর্মসূচি আমরা দিব। এ ব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রুনু দাকে আমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই জানি। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে তাকে আমরা দেখেছি। যাদের অবহেলায় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেয়ার বিষয়টি মর্মাহত হওয়ার পাশাপাশি আমাদের জন্য অপমানজনকও বটে।

রুনু ধরের আপন ছোট ভাই সুশান্ত ধর অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই ব্যক্তি জীবনে খুবই সৎ ছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছে কোন কিছু পাওয়ার লোভে নয়। অন্ততঃ মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়া উচিত ছিল। সম্মাননা দেয় নাই। তাতেও কোন দুঃখ নাই। কিন্তু মৃত্যুর পর তাকে বিতর্কিত করাই আমাদের শোককে আরও দ্বিগুণ করে দিয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট