চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

একই জমিতে একাধিক সবজি চাষ

চন্দনাইশে কৃষিবিপ্লব ঘটাতে তৎপর চাষিরা

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

১৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশে একই জমিতে তিন রকম সবজি চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষক। মাত্র ১ দশক আগেও যেখানে এ এলাকার জমিগুলোতে এক ফসলি চাষ করে কৃষকদের বসে থাকত হতো, সেখানে এখন জমিগুলো বছরে একটি দিনও অনাবাদি থাকছে না। সারাবছরই কোন না কোন ফসলের চাষ হচ্ছে। অর্থাৎ, চন্দনাইশে কৃষি বিপ্লব ঘটাতে তৎপর রয়েছে চাষিরা।

চন্দনাইশ-সাতকানিয়া উপজেলার শঙ্খ নদীর দ্ইু পাড়ে ১০টির অধিক গ্রামের লোকজন সবজি চাষের সাথে জড়িত। এতে লক্ষাধিক কৃষক সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পেরেছে নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগে। শঙ্খনদীর উপকূলবর্তী চরের একাধিক সবজি ক্ষেত পরিদর্শনে দেখা যায়, কোন জমিতে নিচে মূলা-গাজর চাষ, উপরে অন্য ধরনের মাচাং তৈরি করে দেয়া হয়েছে দেশি লাউয়ের লতা, বরবটির জন্য। একইভাবে আবার কোন কোন জমিতে নালা কেটে লাগানো হয়েছে শীতকালীন ধনিয়া পাতা, মরিচ, উপরে মাচাং দিয়ে চাষ করা হচ্ছে কাকরল আর তিত-করল। একই জমিতে দুই থেকে তিন ধরনের ফসল চাষের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জমির একটি ফসল উঠে গেলে আর একটি ফসল জমিতে থেকে যায়। আর সেই ফসল থেকে দ্রুত উৎপাদন পাওয়া সহজ হয়। ফলে বছরের পর বছর একই জমিতে একসাথে দুই থেকে চার রকমের ফসল উৎপাদনে আগ্রহীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তেমনি এ রকম দো-ফসলা তিন-ফসলা জমিতে ক্ষেতের সংখ্যাও বাড়ছে। এ ধরনের ফসল উৎপাদন করে শতশত কৃষক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সংসারের অভাব ঘোচাতে সক্ষম হচ্ছে।

শঙ্খচরের বিশাল এলাকাজুড়ে জেগে ওঠা এসব জমির মাটি পলিমিশ্রিত, দো-আঁশ হওয়ায় জমিগুলো সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং উপযোগী বলে জানালেন কৃষকেরা। একই জমিতে কয়েক ধরনের ফসল ফলিয়ে লাভের মুখ দেখা কৃষকদের মধ্যে নুর মোহাম্মদ, আমির হোসেন, হাছি মিয়া, রফিক, আবদুল শুক্কুর অনেকেই উচ্ছ্বসিত।

একই জমিতে একইসাথে কয়েক ধরনের সবজি ফলিয়ে সফল হয়েছেন বলে জানান তারা। তাদের মতে, পরিশ্রম করলে কোনভাবে লোকসান হওয়ার কথা নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে শঙ্খনদীর উপকূলবর্তী চরে উৎপাদিত সবজি চট্টগ্রামের সিংহভাগ চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। একই জমিতে একাধিক ধরনের ফসলই শুধু নয়, অনেকেই সাথী ফসলের চাষও করছেন একই জমিতে। সেরকম জমিগুলোতে দেখা যায়, জমিতে নালা কেটে রোপণ করা হয়েছে আখের ডগা, আবার দুটির নালার মাঝখানের জায়গায় চাষ করা হয়েছে নানা ধরনের শাক, মূলা, গাজর, বেগুন। আবার একইভাবে একই জমিতে বেগুন গাছের মাঝখানের সারিতে রোপণ করা হয়েছে মূলা, বরবটি, শিমের চারা। পুরো চর জুড়ে সবজি ক্ষেতের সবুজে সবুজে ভরা উঠার দৃশ্য দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেন, একই জমিতে দুই বা তিনটি ফসলের চাষ বা একাধিক চাষ হওয়ার বিষয়টি সত্য। কৃষি ক্ষেত্রে এটি একটি আশাব্যঞ্জক দিক। এভাবে প্রত্যেক এলাকায় একই জমিতে দুই ফসল বা ততোধিক ফসলের চাষ হলে দেশে কৃষিবিপ্লব ঘটবে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, এটি সকলের জন্য মঙ্গলজনক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট