চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

৪৭ বছর পর আ. লীগের আসন পুনরুদ্ধার, ভোট পড়েছে ২২.৯২%

মোছলেম উদ্দিনের বিপুল বিজয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৩১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-৮ আসনে বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ (নৌকা) বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৮৭ হাজার ২৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী মো. আবু সুফিয়ান (ধানের শীষ) পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট। ভোট পড়েছে ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ।
মোছলেম উদ্দিনের বিজয়ে ৪৭ বছর পর এই আসন থেকে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত কফিল উদ্দিন খান। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থী এই আসন থেকে জয়লাভ করতে পারেননি। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছিলেন। ২০০৮ এর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেছিলেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি প্রয়াত সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদল। মোছলেম উদ্দিন বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ঘরে আসল আসনটি।

এই আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৫। প্রাপ্ত বৈধ ভোটের সংখ্যা এক লাখ ৮ হাজার ৫৮১। কোন ভোট বাতিল হয়নি। ১৭০ কেন্দ্রের মধ্যে সবকটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ভোটের হার ২২ দশমিক ৯২ শতাংশ।

গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। সবকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোটগ্রহণ শেষে নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম থেকে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. মুনীর হোসাইন খান।
প্রধান দুই প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীরা পেয়েছেন বিএনএফের প্রার্থী এস এম আবুল কালাম আজাদ (টেলিভিশন) এক হাজার ১৮৫ ভোট। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন (চেয়ার) পেয়েছেন ৯৯২ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক (আপেল) পেয়েছেন ৫৬৭ ভোট। ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত (কুঁড়েঘর) পেয়েছেন ৬৫৬ ভোট।
ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ী মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ভোট শেষ হয়েছে। জনগণের রায়ে আমি সন্তুষ্ট। এ নির্বাচনে ব্যাপক মা-বোন অংশগ্রহণ করেছেন।’ ইভিএমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতি নতুন ছিল। আমি দেখেছি, ইভিএম পদ্ধতিতে সহজেই ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। জনগণ তা গ্রহণ করেছে।’
সংসদীয় এলাকার ভোটার, দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা সবাই পরিশ্রম করেছেন। সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘তিনি আমার মতো একজন রাজনৈতিক কর্মীদের মনোনয়ন দিয়েছেন। এতে রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য রাজনীতির একটা নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

বিজয়ী হওয়ার পর নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম অঙ্গীকার থাকবে চট্টগ্রাম তথা বোয়ালখালীবাসীর দুঃখ কালুরঘাটে জরাজীর্ণ সেতুর পরিবর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত নতুন একটি সেতু নির্মাণকাজ দৃশ্যমান করাবো। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরীর যেসব ওয়ার্ড সংসদীয় আসনে অন্তর্ভুক্ত এখানকার উন্নয়নে করার জন্য সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করবো। সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রামের নগরের উন্নয়ন, সুয়ারেজ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের সরকারের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাব। তিনি বলেন, মৃত্যুর আগপর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে বেঁচে থাকবো। এলাকার উন্নয়নের জন্য সকল মত-দলের জন্য আমার দরজা খোলা থাকবে। এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে সবসময় আমাকে পাশে পাবে।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তারা তো জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিভিন্নভাবে আগুন সন্ত্রাস কওে, মানুষ হত্যার রাজনীতি করে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নিশ্চিত পরাজয় দেখে আগেভাগে কিছু কথা বলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যাচার করছে।
ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে সকলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়েছে। উপ-নির্বাচনে সাধারণত আগ্রহ কম থাকে। ইভিএম সঠিক ছিল, তা প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ তা গ্রহণ করেছে।

ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আসনের সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব নোমান আল মাহমুদ প্রমুখ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট