চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পীরবাড়ি থেকে ইফতারিতে মেজবানির মাংসের প্রচলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ মে, ২০১৯ | ২:৪৮ পূর্বাহ্ণ

থরে থরে সাজানো ছোট-বড় খালি প্লাস্টিকের বাটি। পাশেই বড় ও মাঝারি আকারে দুইটি ডেক থেকে বেরুচ্ছে ঘ্রাণ। বাতাসে চারদিকে ছড়াচ্ছে এই ঘ্রাণ। একটি ডেকে মেজবানির মাংস ও অন্যটাতে চনার ডাল। নগরীর আগ্রবাদ চৌমুহনীর বীর বাঙালির পাশেই শামিয়ানা টাঙানো, কাপড় দিয়ে ঘেরা ছোট অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানির মাংস। বিভিন্ন রকম সামাজিক, পারিবারিক ও কোন বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের আয়োজন করে চট্টগ্রামবাসী। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে মেজবানির মাংস স্থান করে নিয়েছে ইফতারের টেবিলেও। রমজান মাসে বিভিন্ন রেস্তোরাঁর পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বিক্রি করছে এ মেজবানি মাংস। রমজান উপলক্ষে নগরীর চৌমুহনী এলাকার পীরবাড়ি রোডে মেজবানি মাংসের কিছু অস্থায়ী দোকান বসেছে। এ এলাকার বাবুর্চি আবদুল খালেকের হাতের ‘স্পেশাল রান্না করা মেজবানের মাংসের’ কদর কম বেশি পুরো শহরেই রয়েছে। এখানে রমজান মাসে পীরবাড়ি রোডে ঢুকলেই মেজবানি মাংসের খুশবু পাওয়া যায়। রাস্তার দুই ধারে বসে মাংস বিক্রি করছে অস্থায়ী বেশ কয়েকজন দোকানি। দুপুর বারোটা থেকেই কেনা-বেচা শুরু হয়। বিশেষ করে বিকেল তিনটা থেকে ভিড় দেখা যায় দোকানগুলোতে। এখানে দোকানগুলোতে দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ কেজি মেজবানের মাংস এবং ২৫ থেকে ৩০ কেজি চনার ডাল বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মাংসের দাম ৬৪০ টাকা ও চনার ডাল ১৬০ টাকায় বিক্রি করছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে মাংস রান্না শুরু হয়। রান্না শেষ হয় বারোটার মধ্যে। বিশেষ করে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে।
বাবুর্চি আবদুল খালেক স্পেশাল মেজবানের মাংস রান্নার বিষয়ে বলেন, খাঁটি সরিষার তেলে রান্না করা এই মাংসে অন্যান্য মসলা হলো আদা, জিরা, খাঁটি সরিষার তেল, জাইফল, যত্রিক, মিষ্টি জিরা, দারুচিনি, এলাচ, লং, হাটহাজারীর মিষ্টি মরিচ, নারকেল, বাদামবাটা। এতে কোন প্রকার পানির ব্যবহার করা হয়না। পুরোটাই সরিষার তেলের উপর রান্না করা হয়।
অস্থায়ী দোকান মালিক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রায় দুই দশক আগে পীরবাড়ির বাসিন্দারা ইফতারী উপলক্ষে মেজবানের মাংস বিক্রি শুরু করেন। মূলত তারা কেউ পেশাদার বিক্রেতা নন। রমজান এলেই পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে মেজবানের মাংস বিক্রি করেন। তখন থেকেই এখনো পর্যন্ত প্রতি বছর রমজানে মেজবানির মাংস ও হাড় দিয়ে চনার ডাল রান্না করে বিক্রি করেন।
এখানে মাংস কিনতে আসেন দেওয়ানহাট বাজারের বাসিন্দা মিলন চৌধুরী। তিনি বলেন, ইফতারে বিভিন্ন খাবারের সাথে মেজবানির মাংস সবাই পছন্দ করে। খাবারে একটু ভিন্নতা আনতে এখান থেকে পরিবারের জন্য মাংস কিনে নিয়ে যাই আমি।
জানা যায়, ১৯৯৬-৯৭ সালে চট্টগ্রামের চৌমুহনী এলাকার পীরবাড়ির সামনে প্রথম রমজানে মেজবানের মাংস বিক্রি শুরু হয়। তবে এখন শুধু পীড়বাড়ি নয়, নগরীর চকবাজার, স্টেডিয়াম পাড়া, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, বন্দরটিলা, সল্টগোলা, চৌমুহনী, কর্নেলহাট, পাঠানটুলী, ফকিরাহাটসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক ছোট দোকান এবং ছোট বড় হোটেলে রমজান উপলক্ষে এ মাংস বিক্রি হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট