চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পটিয়ায় ছদু তালুকদারের দানপত্রের জমিতে মসজিদ

মালিকানা নিয়ে থানা-পৌরসভার টানাটানি, নির্মাণকাজ বন্ধ

হারুনুর রশিদ সিদ্দিকী, পটিয়া

১৮ মে, ২০১৯ | ২:২৩ পূর্বাহ্ণ

পটিয়া থানার সামনের জামে মসজিদের জমির মালিকানা নিয়ে থানা ও পৌরসভার মধ্যে চলছে টানাটানি। মূলত মসজিদকে ঘিরে পৌরসভার উদ্যোগে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় জমির মালিকানা দাবি করে থানা কর্তৃপক্ষ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। এতে বর্তমানে পাশের একটি স্কুলের কক্ষে নামাজ আদায় করছে মুসল্লিরা। দুর্ভোগ নিরসনে সহসা মসজিদ নির্মাণকাজ শুরুর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মুসল্লিরা।
জানা যায়, শতাধিক বছর আগে ১৯১১ সালে ছদু তালুকদার গোষ্ঠী মসজিদ স্থাপন ও পরিচালনার জন্য মৌলভী আবদুর রশিদের নামে রেজিস্ট্রিমূলে দানপত্র জমি হস্তান্তর হয়। ৪৩ শতক জমিতে মসজিদ, ব্যয় নির্বাহের জন্য দোকানঘর ও অযুর জন্য পুকুর খনন করা হয়। ১৯১১ সালে মসজিদের জন্য মৌলভী আবদুর রহমানের নামে জমি দান করা হলেও খতিয়ানে ছদু তালুকদার বাড়ির ওয়ারিশদের নাম থেকে যায়। বিষয়টি নিয়ে আদালতে গড়ালে ২০০২ সালে আদালত জায়গাটি মসজিদের বলে আদেশ দেন। ওই জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ একই দলিলের জমি ও শর্ত মোতাবেক স্থাপিত দোকানঘরের ভাড়ার টাকায় পরিচালিত হয়ে আসছিল। দোকানঘর থেকে প্রাপ্ত ভাড়ায় এখনো মসজিদ পরিচালিত হয়। মৌলভী আবদুর রশিদ বয়োবৃদ্ধ হওয়ার পর মসজিদ পরিচালনায় সমস্যার সৃষ্টি হলে ১৯৬৪ সালে পটিয়া থানার ওসিকে সম্পৃক্ত করা হয়। সেই থেকে পদাধিকার বলে ওসি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ব্যয় নির্বাহ হতে থাকে দোকানঘরের ভাড়া থেকে প্রাপ্ত টাকাতেই। থানার ওসিকে সভাপতি পদে সম্পৃক্ত করায় একপর্যায়ে স্থানীয়রা মসজিদটিকে পটিয়া থানা মসজিদ হিসেবে চেনে। এ প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে ওই জায়গার খতিয়ান সংশোধন করে প্রচলিত নাম অনুযায়ী পটিয়া থানা মসজিদের নামে খতিয়ান সৃজিত হয়। তবে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, থানার জমির মালিকানার খতিয়ানে মসজিদের জমি অন্তর্ভুক্ত নেই।
এদিকে ২০১১ সালে পটিয়ার ইউএনও মসজিদ পরিচালনায় নতুন একটি কমিটি করে দেন। সভাপতি করা হয় পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদকে। তখন থানার পক্ষ থেকে কোন ধরনের আপত্তি করা হয়নি। পটিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রাচীন এ মসজিদের প্রয়োজনীয়তা বাড়ায় পটিয়া পৌরসভা মসজিদের প্রচলিত নামের সাথে জমিদাতার নাম সংযুক্ত করে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদ ও বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এক বছর আগে অপসারণ করা হয় পুরনো মসজিদ। তাতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর কমপ্লেক্স নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন পটিয়া আসনের এমপি সামশুল হক চৌধুরী। এরপর মসজিদের জমিতে অবস্থিত দোকানদাররা ভবন নির্মাণের আগেই তাদের নামে দোকানের জায়গাসহ চুক্তিপত্র দাবি করে। কিন্তু মসজিদ পরিচালনা কমিটি ভবন নির্মাণের আগে কোন ধরনের চুক্তিপত্র প্রদানে অসম্মতি জানালে এক ব্যবসায়ী পটিয়া থানার তৎকালীন ওসি নেয়ামত উল্লাহর কাছে মসজিদের জমি থানার বলে তথ্য দেন। এরপর ওসি নেয়ামত উল্লাহ শুধুমাত্র নামজারি খতিয়ানে ‘পটিয়া থানা মসজিদ’ নামকরণ উল্লেখ থাকায় জমির মালিকানা দাবি করে কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে পৌরসভার সাথে থানার দূরত্ব বাড়ে।
পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে উন্নয়নের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের জায়গা নিয়ে ছদু তালুকদার বাড়ির ওয়ারিশদের সঙ্গে মামলা চলে আসছিল। তাদের দাবি ছিল থানা জামে মসজিদের নতুন নামকরণ এবং তাতে ছদু তালুকদার নাম সংযুক্ত করতে হবে। মসজিদ কমিটি এতে একমত হওয়ায় আপোষমূলে আদালত থেকে মামলা তুলে নেয়া হয়। এরপর মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু তাতে পটিয়া থানা পুলিশ বাধা প্রদান করে।
পটিয়া থানার নবাগত ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। মসজিদের জমির বিষয়ে তিনি শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট