চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

 রিকশা চালক রাজুকে খুন করে কিশোরের দল

হাজিপাড়ায় বাসায় খুন গ্রেপ্তার ৭

১৬ মে, ২০১৯ | ৫:৩৩ অপরাহ্ণ

এবার কিশোর অপরাধীদের হাতে খুন হয়েছে একজন রিকশাচালক। কারাবন্দি একজন মাদক ব্যবসায়ী বড় ভাইয়ের নির্দেশে খুনের ঘটনায় অংশ নেয় সাত কিশোর। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর তারা জানিয়েছে, ডবলমুরিং থানার হাজিপাড়ার মাদক ব্যবসায়ী ছগির আহমদ তাদের গ্রুপের বড় ভাই। কয়দিন আগে বড়ভাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ছগিরের ধারনা তারই মাদক বহনকারি মফিজুর রহমান তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। কারাগারে বসে কিশোর গ্রুপকে নির্দেশ দিয়েছিলো মফিজকে যেন হত্যা করা হয়। বড় ভাইয়ের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে মফিজ মনে করে রাজু আহমদকে খুন করে কিশোর গ্রুপের সদস্যরা। এর আগে গত গত ১০ মে সন্ধ্যায় মুরাদপুর পিলখানা এলাকায় ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমদে ছুরিকাঘাত করে হত্যা সদ্য কৈশোর পার হওয়া বখাটে তরুনের দল।
গত ১৪ মে ভোরে ডবলমুরিং থানার হাজীপাড়া সোহেল কলোনীর ভাড়া বাসায় রিকশা চালক রাজু আহমদকে খুন করা হয় । খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সাত কিশোর ও একজন মহিলাকে গ্রেপ্তার করে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম জানান, রিকশাচালক রাজু হত্যায় জড়িতরা সবাই কিশোর বয়সী। কারগারে থাকা মাদক ব্যবসায়ী ছগিরের নির্দেশে তারা খুনের ঘটনায় জড়িয়েছে। সাত কিশোর ছাড়াও ছগিরের স্ত্রী সেলিনা আক্তারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারণ তিনিও খুনের পরিকল্পনায় ছিল।
পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বেগম জানান, গ্রেপ্তার কিশোর গ্রুপের সবাই মাদকসেবন করে। ছগির মাদক ব্যবসার কাজে তাদের ব্যবহার করতো। কয়দিন আগে ছগিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার ধারনা কলোনীর মফিজ তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। গ্রেপ্তারের চার পাঁচদিন স্ত্রী সেলিনাম মাধ্যমে খবর বন্দি দেখার নিয়ম অনুযায়ী ছগিরের সাথে কিশোরের দল জেল খানায় দেখা করে। সেই সময় মফিজকে খুন করার কথা জানায় মাদক ব্যবসায়ী ছগির। এরপর একাধিকবার কিশোররা জেলখানায় গিয়ে ছগিরের সাথে দেখা করে।
গ্রেপ্তার কিশোরদের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বেগম জানান, গত ১৩ মে কিশোর গ্রুপের সদস্য শিমুল, শুক্কুর, রাকিব নিয়ে স্ত্রী সেলিনা জেলখানায় গিয়ে ছগিরের সাথে দেখা করে। ঐদিনই মুলত মফিজকে হত্যার চুড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঐদিন (১৩ মে) সন্ধ্যায় হাজিপাড়ার ছগিরের বাসার সামনে শুক্কুর, শিমুল, রাকিব, সিফাত ও ছগিরের ছেলে কিরণ বৈঠক করে। সেই বৈঠকে সেলিনা কিশোরদের হাতে খরচের জন্য এক হাজার টাকা দেয়।
বৈঠক থেকে তারা হাজ্জি কোম্পানীর মোড়ে এসে রুবেলের টং দোকানে আবার বৈঠক করে। এরমধ্যে ছগিরের ছেলে কিরণ ব্যাগে করে একটি চাইনিজ কুড়াল ও ছুরি এনে শুক্কুরের হাতে তুলে দেয়। ভোরে (১৪মে) শুক্কুর, শিমুল, রাকিব, সিফাত ও সুজন চাইনিজ কুড়াল ও ছুরি নিয়ে মফিজ মনে করে একই কলোনীর পাশের ভাড়াটিয়া রিকশা চালক রাজুর া ঘরে প্রবেশ করে। কিশোর নুরনবী, রুবেল লোকজন আসছে কিনা তা দেখতে বাইরে পাহারায় থাকে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ঘরে ঢুকেই মফিজ মনে করে ঘুমন্ত রাজুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এ সময় বাইরে থাকা পাহারায় থাকা কিশোররা অন্য ভাড়াটিয়াদের ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। এ কারণে পাশের ঘরে থাকা মফিজও বের হয়নি।
ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (ওসি) সদীপ কুমার দাশ জানান, রাজু পেশাায় রিকশা চালক। হাজীপাড়া আল আমিন হোটেলের পাশেই সোহেল কলোনীতে ভাড়া থাকতো। মুলত কারাবন্দি মাদক ব্যবসায়ী ছগির কিশোরদের খুনের কাজে ব্যবহার করেছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আমরা সাত কিশোরকে গ্রেপ্তর করেছি। তারা হলেন, মীর সরাই রতন মাস্টার বাড়ির উত্তর দাশের ছেলে শিমুল দাশ (২০), লক্ষীপুরের তানভীর হোসেন সিফাত, বি বাড়িয়ার কসবার সুজন ওরফে মধু (১৮), সিলেট হবিগঞ্জের নুরনবী (১৮), পানওয়ালা পাড়ার মেহেদী হাসানে রুবেল(১৮), মাদক ব্যবসায়ী ছগিরের ছেলে ওসমান হায়দার কিরণ ও ছগিরের স্ত্রী সেলিনা আক্তার শেলী (৩০)।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট