চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

তের মাস বয়সী শিশু আয়ানের শরীরে আঘাতের চিহ্ন !

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ মে, ২০১৯ | ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

মাত্র তের মাস বয়সী শিশু আয়ান। ফুটফুটে এ শিশুটি অন্য দশ শিশুর মতো থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে। যেখানে অতিযত্মে বেড়ে ওঠার কথা তার। অথচ দু’হাত-পা ভাঙ্গা অবস্থায় হাসপাতালের বেডে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ফুটফুটে এ শিশুটি। শুধু যে হাত বা পা ভাঙ্গা তাও নয়, সারা শরীরে রয়েছে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্নও। এসব নিয়ে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে রহস্য। যদিও শিশু আয়ানের পরিবারের দাবি জন্মের পর থেকেই তার এমন পরিস্থিতি হয়েছে। অলৌকিকভাবে তার হাত-পা ভাঙ্গা থাকার কথাও বলেছেন তারা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এসব আঘাত কোন ভাবেই অলৌকিক নয়, বরং সব আঘাতেই মানুষের সৃষ্ট। এদিকে, ছোট্ট এ শিশুটির অবস্থায় এখন আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার রাতে নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন কাটগড় এলাকা থেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত নিয়ে আগ্রাবাদ মা ও

শিশু হাসপাতালে শিশু আয়ান কে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন তাঁর বাবা ও সৎ মা শাপলা মনি। প্রথমে চিকিৎসকরা তাকে অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে ভর্তি দেয়া হলেও পরবর্তীতে অবস্থা আশংঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাখা হয় আইসিইউতে। যদিও চিকিৎসা খরচ চালাতে না পারার কথা বলে বর্তমানে শিশু আয়ানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান তার পরিবার।
নগরীর পতেঙ্গা সি-বিচ এলাকায় পর্যটকদের ছবি তোলেন শিশু আয়ানের বাবা মো. হাসান। জন্মের তিন মাসের মাথায় আয়ানের মায়ের মৃত্যু হয়। এর কিছু দিন পরেই বাবা মো. হাসান দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আয়ানও মায়ের মৃত্যুর বছর না পুরাতেই পেয়ে যায় সৎ মা শাপলা মনিকে। এর পর থেকেই সৎ মায়ের কাছেই ছিল আয়ান।
কিন্তু কিভাবে এমন পরিস্থিতি হয়েছে জানতে চাইলে বাবা মো. হাসান পূর্বকোণকে বলেন,‘কিছুদিন আগে চেয়ারের উপর থেকে পড়ে যায় আয়ান। এসময় তার মাথা ফুলে যায়। তখন আমি তার হাত বা পায়ের এমন কিছুই দেখিনি। এর কিছুদিন পর আমি সী-বিচে থাকা কালে আমার স্ত্রী বিকেল তিনটার দিকে ফোন করে বলেন-আয়ানের আলগা আছরের সমস্যা হয়েছে। আমি এসে মসজিদের হুজুর দিয়ে তাকে দু’তিন দিন ঝাড়-ফুক করেছি। এর কিছুদিন পরে তার পেট ও বুক ফুলে যাচ্ছে দেখে আমি এখানে নিয়ে এসেছি’।
তবে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নুরুল হক পূর্বকোণকে বলেন,‘তার অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক। তার দুই হাত ও পা পুরোপুরি ভাঙ্গা। মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে দীর্ঘদিন থেকেই অত্যাচার করা হয়েছে, যার কারণেই তার এমন অবস্থা। তবে পরিবারের একেক সময় একেক ধরণের কথা বলায় সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বাবার অসংগতিপূর্ণ কথাবার্তায় নিশ্চিত যে আয়ানকে আঘাত করা হয়েছে’।
চিকিৎসকরা বলেন, ভর্তির সময় আয়ানের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাকে নির্যাতনের কারণে তার শরীরের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শিশুটির হিমোগ্লোবিন ৫.২৫ হয়ে যায়। এতে জরুরি ভাবে রক্তের প্রয়োজন হলে বার বার তার বাবাকে তাগিদ দেয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আফরোজা নিজেই শিশুটির জন্য রক্ত দিয়ে থাকেন।
জানতে চাইলে মেডিকেল অফিসার ডা. আফরোজা পূর্বকোণকে বলেন, ‘এমনিতেই বাচ্চা শিশুটির সারা-শরীরের আঘাতের চিহ্ন। একপ্রকার মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থায় ছিল শিশুটি। তারমধ্যে দ্রুত রক্ত দিতে না পারলে তার অবস্থা আরও আশঙ্কা ছিল। তাই নিজেই রক্ত দিয়ে তাকে সাহায্য করলাম। আর ওই মূহুর্তে নিজের রক্ত দিয়ে শিশুটিকে বাঁচাতে পারলাম এটাই ছিল সবচেয়ে বেশি আনন্দের’।
মাত্র তের মাস বয়সী এ শিশুটি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়লেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই জানেন না পতেঙ্গা থানার পুলিশ। জানতে চাইলে থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল হারুন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আপনার কাছ থেকেই আমি প্রথম শুনেছি। বিষয়টি দেখছি’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট