চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

গোড়াতেই অনিয়ম

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতি দিয়েই শুরু হচ্ছে আমন মৌসুমে সরকারি চাল সংগ্রহ কার্যক্রম। চাল সরবরাহকারী মিলারদের ‘চাতাল’ থাকা বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ মিলারের চাতাল নেই। নগরীর বাইরে চাতাল রয়েছে বলে মিথ্যা অঙ্গীকারনামার মাধ্যমে চাল কেনার প্রক্রিয়া করা হয়েছে। খাদ্য বিভাগ ও মিলারদের যোগসাজশে এই জালিয়াতির প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরকার প্রতি বছর আমন ও বোরো মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহ কার্যক্রম গ্রহণ করে। চলতি আমন মৌসুমেও এই কার্যক্রম শুরু করেছে। সরকার ধান কিনবে কৃষকদের কাছ থেকে। আর চাল কিনবে মিল মালিকদের থেকে। প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা এবং আতপ চাল ৩৬ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৩৭ টাকা দরে কিনবে সরকার। সরকারের এই কার্যক্রম নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়মরোধে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও তা রোধ করা যাচ্ছে না।
চাল সংগ্রহে অনিয়মরোধে চলতি মৌসুমে মিল মালিকদের ‘চাতাল’ থাকা বাধ্যবাধকতার নিয়ম করেছে। কারণ চাতাল না থাকলে শুকনো ও ভালো মানের চাল সরবরাহ করা যাবে না। তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার এই নীতি প্রণয়ন করেছে। গত বোরো মৌসুম থেকে তা শুরু হয়েছে বলে একাধিক মিলাররা জনান।

নগরীর ১৯টি মিল মালিক সরকারকে চাল সরবরাহ করার জন্য খাদ্য বিভাগের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। প্রতিটি মিল মালিক নগরী ও নগরীর বাইরে পটিয়া, আনোয়ারা, লোহাগাড়া, বাঁশখালীতে চাতাল রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে। কেউ নিজের চাতাল, কেউবা ভাড়া চাতাল রয়েছে বলে তথ্য দাখিল করেছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ মিলারের চাতাল নেই বলে দাবি খোদ মিল মালিকদের।
এই বিষয়ে কথা হয় অন্তত চার-পাঁচজন মিল মালিকের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, বোরো মৌসুমেও একই পদ্ধতিতে চাল সরবরাহ করেছেন তারা। চলতি আমন মৌসুমেও একইভাবে চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা রাজি হলে সব অসম্ভব এখানে সম্ভব। এই ৫ জনের কেউ আনোয়ারা, কেউ পটিয়ায় চাতাল রয়েছে বলে তথ্য জমা দিয়েছে। এখানে আবার কেউ নিজেদের নামে, কেউবা ভাড়ায় চাতাল রয়েছে বলে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। অনেকেই মিলের আশপাশে থাকা খালি জায়গাকে চাতাল বলে তথ্য জমা দিয়েছে।
মিল নগরীতে, চাতাল কেন নগরীর বাইরে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাতাল না থাকলে কি আর করা। চাতাল রয়েছে বলে স্ট্যাম্প জমা না দিলে তো বরাদ্দ পাওয়া যাবে না।

মিলারদের মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির জন্য খাদ্য বিভাগকে বড় অঙ্কের উৎকোচ দিতে হয়। চলতি বছর জালিয়াতির জন্য মিল প্রতি এক লাখ টাকা পর্যন্ত দর হাঁকা হচ্ছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এখনো দরদাম নির্ধারণ না হওয়ায় ঝুলে রয়েছে এই জালিয়াতি প্রক্রিয়া।
এই বিষয়ে কথা হয় খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে সামান্য চাল সংগ্রহ করা হয়। যেকোন জায়গায় তা শুকিয়ে ছাঁচাই (মিলিং) করে চাল করা হয়। যেখানে হাজার হাজার টন চাল সংগ্রহ করা হয়, সেখানে চাতালের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়।
খাদ্য বিভাগ ও রাইস মিল মালিক সমিতি সূত্র জানায়, নগরীর ১৯ রাইস মিল মালিক চাল সরবরাহের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছে। তবে এখনো বরাদ্দ ও সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চাল সংগ্রহ ও নিয়ন্ত্রণ আদেশ ২০০৮ এ উল্লেখ রয়েছে মিলিং লাইসেন্স ও ফুড গ্রেইন লাইসেন্সধারী প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সম্পন্ন সচল মিলের সঙ্গে চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করবে খাদ্য বিভাগ।

অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য নীতিমালা ২০১৭ এর ১১ ধারার খ উপধারা অনুযায়ী যেসব মিলে ব্রয়লার ও চিমনি নেই, সেসব হ্যাস্কিং মিলের সঙ্গে চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করা যাবে না। ‘ঘ’ উপ-ধারায় উল্লেখ আছে, কোন বারিত চালকল মালিকের সঙ্গে চুক্তি করা যাবে না।
একাধিক মিল মালিক জানায়, আইনের ফাঁক-ফোঁকর কৌশলে এড়িয়ে সরকারের কাছে চাল সরবরাহ করা হয়। মিলার ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। এবারও একইভাবে চাল সরবরাহের জন্য প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে মিলাররা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট