চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিজ চেষ্টায় টিকে আছেন খামারিরা মিরসরাই

এনায়েত হোসেন মিঠু, মিরসরাই

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

সরকারি প্রণোদনা, ওষুধ, চিকিৎসা কিংবা ব্যাংক ঋণ সুবিধা কোনটাই পান না চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের শতাধিক ডেইরি খামারের মালিক। এক কথায় নিজেদের একক প্রচেষ্টায় টিকে আছেন এসব খামারিরা।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তালিকাভুক্ত খামারের সংখ্যা ১০৪টি। এসব খামারে প্রায় ৩ হাজার গরু লালন পালন হয়। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব খামারে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি গবাদি পশু লালন পালন হচ্ছে। যা দেশের দুগ্ধখাদ্য ও মাংসের খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে কর্মরত আছেন একজন ভেটেরিনারি সার্জন, তিনজন উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) ও ৫ বছর মেয়াদি বিশেষ একটি প্রকল্পে কর্মরত আছেন দুইজন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। এখানে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ সহকারী পদটি।
এছাড়া ১৬টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভা এলাকার জন্য এখানে রয়েছে একমাত্র উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। যার কারণে ভোগান্তিরও কমতি নেই খামারিদের।

উপজেলার আনোয়ার ডেইরির মালিক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তার দুগ্ধ খামারে ৪০টির মত গরু রয়েছে। বেশ কয়েক বছর হল তিনি খামার চালু করেছেন। এতদিন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কোন রকম সেবা তিনি পাননি। তবে সম্প্রতি একটি রোগ ছড়ালে তারা টিকা সরবরাহ করেছিল।
আনোয়ার বলেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ, টিকা নিজেদের বাজার থেকে কিনে ব্যবহার করতে হয়। এটি যদি ন্যুনতম মূল্যে সরকার সরবরাহ করতো তাহলে খামারিরা আরো উৎসাহ পেতো।’
নিজের খামারের নাম ও নিজের পরিচয় গোপন রাখা শর্তে উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের একজন খামারি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকার সিঙ্গেল ডিজিটে ব্যাংক ঋণের সুবিধার কথা বললেও আমরা কোন খামারি এ নিয়মে ব্যাংক ঋণ পাই না। বরং ব্যাংকগুলো আমাদের থেকে বাৎসরিক ১৫ থেকে ১৬ ভাগ সুদ আদায় করে। আমাদের অনেক খামারি বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকেও ঋণ গ্রহণ করে, যার সুদের হার চক্রবৃদ্ধি হারে ৪১ ভাগেরও বেশি। এভাবে ঋণ নিয়ে খামার চালানো অসম্ভব।’

তবে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের সর্ববৃহৎ খামার নাহার এগ্রোর মালিক মো. রাকিবুর রহমান টুটুল পূর্বকোণকে জানান, তার খামারে মোট ১৪’শ ৪০টির মত গরু রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ গাভী। প্রতিদিন তার খামারে ৪ থেকে ৫শ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এসব দুধ তিনি পাইকারি এবং খুচরা মূল্যে প্যাকেটজাত দুধ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন।
টুটুল বলেন, ‘মিরসরাই প্রাণিসম্পদ অফিস ভালো সহযোগিতা করে। তাদের পরামর্শ, সহযোগিতা নিয়ে খামারকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে দেশের মাংস ও দুগ্ধখাদ্য চাহিদায় আমার খামার অবদান রাখছে।’
এদিকে গতকাল বুধবার মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় (মাস্তান নগর) এলাকার ফারদিন এগ্রোতে গিয়ে কথা হয় খামারের মালিক মো. রেজাউল করিম মাস্টারের সাথে। তিনি পূর্বকোণকে জানান, তার খামারে বর্তমানে দুইশটির মত গরু রয়েছে। যার মধ্যে দুগ্ধজাত গরুর সংখ্যা কম। তবে তাজাকরণ লাভজনক হওয়ায় তিনি সেদিকে ঝুঁকছেন।

এসময় করিম মাস্টার বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজন আমার খামারে নিয়মিতই আসেন। আমাদের খামারের প্রয়োজনীয় ওষুধ, টিকা কিংবা ভেক্সিন আমরা নিজেরাই সরবরাহ করি। তারা শুধু এটি প্রয়োগ করতে সাহায্য করেন।’
মিরসরাইয়ের অধিকাংশ খামারি অভিযোগ করেন, সরকারিভাবে দুধ সংগ্রহ ও সরবরাহের জন্য মিরসরাইয়ে কোন ব্যবস্থা না থাকার দরুণ প্রতিনিয়ত খামারিরা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া উৎপাদিত দুধ প্যাকেটজাত করার পদ্ধতি সম্পর্কে খামারিরা কিছু না জানার কারণে প্রতিদিন শত শত লিটার দুধ এখানে নষ্ট হচ্ছে। তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খামারি।

এসব প্রসঙ্গে মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা আমাদের তালিকাভুক্ত ৯৪টি খামার ছাড়াও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাদের সেবা প্রদান করে থাকি। রোগ নির্ণয়, টিকা প্রদান, গবাদি পশুকে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিকরণ আমাদের নিয়মিত রুটিন কাজ। খামারিদের অভিযোগ সঠিক নয়।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট