চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পরিবেশের সর্বনাশ

বিদ্যালয়ের পাশে অবৈধ ইটভাটা

নাইক্ষ্যংছড়ি লোপাট হচ্ছে পাহাড়ের মাটি ও জমির টপসয়েল

শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অদূরে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ভাটায় নতুন ইটকাটা। প্রধান সড়কের পাশে মজুদ করে স্তূপ করা হয়েছে কয়লা পাথর আর কাঠের কয়লা মিশ্রণ। এই ভাটায় একযুগ ধরে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে নাইক্ষ্যংছড়ির প্রধান সড়ক ও পাহাড় গা-ঘেঁষে ধানি জমিতে। সংগ্রহ করছে ফসলি জমির টপসয়েল ও পাহাড়ের মাটি। এমএ কালাম কলেজ, ছালেহ আহাম্মেদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও তাংরা বিছামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই সবই মিলে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হচ্ছে ইটভাটার এ প্রধান সড়ক দিয়ে। এতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। এই নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকেরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বিভিন্ন ঠিকাদারি টেন্ডারে কাগজপত্র যোগাড় করে ফিক্সড চিমনির সাহায্যে দীর্ঘ একযুগ ধরে এ ভাটায় ইট পোড়ানো হলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান করতে এসে মুখ ফিরিয়ে চলে যাওয়াতে এলাকার লোকজনের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। প্রধান সড়ক ও পাহাড়ের কাছে ইটভাটা স্থাপন নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় অনেকবার ভাটাটি বন্ধের দাবি করে আসলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা-সদর ইউনিয়নের তাংরা বিছামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অদূরে চাকঢালার প্রধান সড়ক। পাহাড়ের গা-ঘেঁষে ও চাক সম্প্রদায়ের বৃহত্তর ঘনবসতি পাড়ার চাক হেডম্যান পাড়া নামক এলাকায় ভাটাটি স্থাপন করেছেন সাবেক এক উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই জহির আহাম্মেদ। এই ভাটাটির নাম দেয়া হয়েছে জেটএসি ব্রিকস। এ ভাটার মাত্র ২’শ গজের দূরে রয়েছে তাংরা বিছামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।

একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন ও মোস্তাকিম জানায়, ইটপোড়ানো শুরু হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হয়। এছাড়া স্কুল মাঠের আম গাছগুলোর ফল নষ্ট হয়ে যায়। পরিপক্ক হওয়ার আগেই পঁচন ধরে গাছ থেকে ঝরে পড়ে আম। ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো পরিবেশ অধিদপ্তর আইনের ২০১৩ সালের সংশোধনীতে উল্লেখ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাগান ও আবাসিক এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইনের তোয়াক্কা না করেই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাত্র ২৫০ মিটার দূরে ভাটাটি স্থাপন ও দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ইটপোড়ানোর কাজ করে আসছেন যুব নেতা জহির আহাম্মেদ।

উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শফি উল্লাহ জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ইটপোড়ানো বন্ধ রাখার জন্য ভাটামালিক জহির আহাম্মেদকে বারবার নিষেধ করার পরও তা মানছেন না। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোথাও অভিযোগ দিয়েও কাজ হবে না। তবে এবারে ইউএনও অবৈধ ইটভাটাগুলোতে বান্দবানের পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ অভিযান চালিয়ে ঘুমধুমে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছেন।
ভাটামালিক জহির আহাম্মেদ জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কয়লার পরিবর্তে ভাটায় খড়ির মজুত কেন জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি জানান, যৌথভাবে গত ৩ ডিসেম্বর উপজেলার ঘুমধুমে অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিবেশ অধিদপ্তর। জেটএসি ব্রিকসের মালিক জহির আহাম্মেদ ইট প্রস্তুত ও পোড়ানোসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েছেন কি না সেটি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কোন কাগজপত্র আছে কিনা দেখতে হবে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন প্রত্যেকটি ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট