চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

পরিকল্পনা ও লোকবল দিয়ে সাহায্য করবো

এ কে এম রেজাউল করিম স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ

১৫ মে, ২০১৯ | ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম পাহাড় এবং সাগরের শহর। পাহাড় এবং সাগর যদি না থাকে তাহলে চট্টগ্রামের কোনো বৈশিষ্ট্য থাকবে না। চট্টগ্রাম শহর অন্য দশটা সাধারণ শহরে পরিণত হবে। পাহাড় আছে বলেই মানুষ চট্টগ্রামে পাহাড় দেখতে আসে। সাগর আছে বলেই মানুষ চট্টগ্রামে আসে। পাহাড় আছে বলেই এখনো কিছুটা গাছপালা আছে। সবুজ আছে। পাহাড় দেখলেই মানুষের চোখ জুড়ায়। সাগর আছে। এখনো মানুষ সাগরের পাড়ে বেড়াতে যায়। এখন যেভাবে পাহাড় নিধন করে বস্তি স্থাপন, পাহাড়ের বালি ও মাটি বিক্রি হচ্ছে। পাহাড়ে প্লট তৈরি হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। আগে কাঁচা বস্তি থাকলেও এখন দুই-তিন তলা বস্তি হয়ে যাচ্ছে। সবকিছুই অপরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। একারণে পাহাড়ে ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাণহানিও ঘটছে। অপরদিকে পাহাড়গুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবুজ দৃশ্য দেখলে আমাদের চোখ জুড়াত। টাইগারপাস পাহাড়ের পাশ দিয়ে গেলে যতই গরমকাল হোক না কেন আমরা শীতল পরশ অনুভব করতাম। তা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি। আমরা যদি এখন থেকে সচেতন না হই তাহলে অবশিষ্ট পাহাড়টুকুও থাকবে না। জাতি, ধর্ম, পেশা, রাজনীতি নির্বিশেষে সবাইকে এই শহরকে ভালবাসতে হবে। আমার বাড়ি চট্টগ্রামে নয়। যেহেতু এই শহরে বসবাস করি তাই চট্টগ্রাম শহরকে আমি ভালবাসি। ভালবাসি বলেই এ কথা বলছি। কারণ পাহাড় না বাঁচলে চট্টগ্রামের পরিবেশ বাঁচবে না। এখনো কিছু পাহাড় অবশিষ্ট আছে। ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে না পারলে পাহাড় রক্ষা করা যাবে না। প্রথমে পাহাড় চিহ্নিত করে সুরক্ষা দিতে হবে। তার আগে প্রথমেই পাহাড়গুলি চিহ্নিত করতে হবে। কোন্টা কার পাহাড়। তারপর যে পাহাড়ের মালিক, সেই সংস্থা বা ব্যক্তিকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই শহরে প্রায় প্রতিটি সরকারি সংস্থার পাহাড় আছে। সেখানে যদি তাদের বিভাগীয় পরিকল্পনা থাকে তাহলে তা তারা বাস্তবায়ন করুক। যদি না থাকে তাহলে নতুন করে পরিকল্পনা করুক। পাহাড়কে রক্ষা করেই পরিকল্পনা গ্রহণ করুক। আমাদের মাঝে উজ্জল উদাহরণ সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি)। সিআরবি’তে ব্রিটিশ আমলে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের সময় পাহাড় ধ্বংস করা হয়নি। সম্প্রতি পুরো সিআরবি এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। সেখানে মানুষ বেড়াতে যায়। এই পাহাড়ে কোন ঝুঁকি নেই। ওখানে পাহাড় ধস হবে না।
আমরা আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞানে শিক্ষিত হয়েও পাহাড় বাঁচাতে পারছি না। তাতে আমাদের লজ্জাও হয়। প্রতিটি পাহাড়ের ল্যা- ইউজ পরিকল্পনা করতে হবে। পাহাড়ের কোন জায়গাটি কিভাবে ব্যবহার করা যাবে তা নির্ধারণ করা। কোন পাহাড়ে আমরা বনায়ন করবো। কোন পাহাড়ে বাগান করবো। কোন পাহাড়ের অংশে লেক করবো। ফয়’স লেক পাহাড়েই হয়েছে। কোন পাহাড়ে রিসোর্ট করবো। কোন পাহাড়ে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল এবং স্কুল হতে পারে। মানুষ ঢাকা কিংবা সিঙ্গাপুর যাবে না। চট্টগ্রামে এসে যদি পাহাড়ের উপর থেকে সাগরের ঢেউ দেখে তাহলে রোগী অর্ধেক ভাল হয়ে যাবে। চিটাগং ক্লাব, চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজে কখনো পাহাড় ধস হয়নি। পাহাড় ব্যবস্থাপনা করেই এখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনও করা হয়েছে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা করে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন করলে পাহাড় কখনো বিরূপ আচরণ করে না।
সিটি কর্পোরেশনের অনেক কিছুই করার আছে। যেসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের পাহাড় আছে তাদের সাথে সমন্বয় করে পাহাড় রক্ষা এবং এর সৌন্দর্যবর্ধনের তাদেরকে উৎসাহিত করতে পারে। রেলতো চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধেক সম্পদের মালিক। চট্টগ্রামে একটি সমন্বয় কমিটি আছে। সিটি মেয়র এই কমিটির প্রধান। তারা যদি সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয় তাহলে সিটি কর্পোরেশন পরিকল্পনা দিয়ে, লোকবল দিয়ে তাদের সাহায্য করবে। তাদেরকে প্রয়োজনে ট্যাক্সে ছাড় দেব। প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করবো, তারা যদি আলোচনায় আসেন।
দুষ্টচক্র সবসময় চিন্তায় থাকে কখন পাহাড় কাটা হবে। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ কেন দেব? কোরিয়ায় দেখেছি পাহাড় কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা। যেন কেউ তা কাটতে না পারে। পাহাড় আমাদের সম্পদ। সৌন্দর্যবর্ধন কোন একক সংস্থার কাজ নয়। এই দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট