চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রতিকূলতায় টিকে আছে খামারিরা ফটিকছড়ি

বিশ্বজিৎ রাহা হ ফটিকছড়ি

১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ওষুধ নেই। পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। নানা সমস্যা আর সম্ভাবনার দোলাচলে এগিয়ে যাচ্ছে ফটিকছড়ির সম্ভাবনাময় ডেইরি শিল্প। ফটিকছড়িতে মোট ১১০টি ডেইরি ফার্মসহ মোট এক লক্ষ্য গরু স্থানীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এত বিপুল পরিমাণ গরুর বিপরীতে (ছাগল ও অন্যান্য গবাদি পশু বাদে) বিপরীতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আছে মাত্র একজন ভেটেরিনারি সার্জন। তার সাথে উপ সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) দুই জনের মধ্যে একজনের পদ দীর্ঘদিন থেকে খালি। যিনি আছেন তার উপরও আজ পিইসি পরীক্ষা, পরশু ভিজিএফ চাল বিতরণ ইত্যাদি সরকারি কাজে প্রায় সময়ই দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে সার্বক্ষণিক পশু চিকিৎসা হয়ে ওঠে না। অনুসন্ধানে জানাগেছে, ফটিকছড়িতে মোট ১১০টি ছোট বড় বিদেশি গরুর ফার্ম আছে। এছাড়া স্থানীয় কৃষক এবং অন্যান্য পেশার মানুষরাও গরু ছাগল ইত্যাদি পালন করে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ফার্ম এবং ফার্মের বাইরে ফটিকছড়িতে মোট ১ লক্ষ (প্রায়) শুধু গরু আছে, ছাগল ও অন্যান্য গবাদি পশুতো আছেই। এসব চিকিৎসার জন্য ফটিকছড়িতে মাত্র একটি মাত্র প্রাণিসম্পদ অফিস রয়েছে। এব্যাপারে হারুয়ালছড়ি এলাকার ডেইরি ফার্ম মালিক মো. শফিউল আলম বলেন, ডেইরি

ফার্ম গুলোকে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চায় না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বাইরে ১৫ এবং ১৬% সুদে ঋণ দেয়, কিন্তু ডেইরি ফার্মগুলোকে তারা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৯% সুদে ঋণ দেয় না। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণ পেলে এবং সেই সাথে ফটিকছড়িতে যেসব টিলা/খিলা জাতীয় খাস জমি রয়েছে সেসব জমি ডেইরি ফার্মের জন্য ইজারা দিলে ফটিকছড়ির ডেইরি শিল্প সারাদেশের মধ্যে মডেল হতে পারতো। এছাড়া তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ফার্মগুলোতে যে ওষুধ দেয়া হয় তাতে সংকুলান হয় না। এর বাইরেও বাজার থেকে ওষুধ কিনতে হয়। এর পাশাপাশি সময়ে অসময়ে পশু খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে এ শিল্পকে কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয় বলে তিনি জানান। এ খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি ফার্মকে লাভজনক অবস্থায় নিতে হলে দৈনিক অন্তত দুশো লিটার দুধ পাওয়ার মত অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, এ খাতে সরকার নজর দিলে দেশে পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি ফার্মগুলো থেকে অন্তত হাজার কোটি টাকার জৈব সার, বায়োগ্যাস, মাছের খাদ্য ইত্যাদি পাওয়া যাবে। অপরদিকে, ফটিকছড়ি পৌরসভা এলাকার ফার্ম মালিক মো. আমান উল্লাহ্ ডেইরি ফার্মের নানা সমস্যা তুলে ধরে বলেন, ফটিকছড়িতে পর্যাপ্ত পশু চিকিৎসক নেই, যার ফলে ফার্ম মালিকদের বেসরকারি হাতুড়ে পশু চিকিৎসকদের কাছে অনেক সময় নির্ভরশীল হতে হয়। ফটিকছড়িতে গত তিন মাস যাবৎ এলএসডি রোগে হাজার হাজার গরু ভুগছে। কিন্তু এর জন্য সরকারিভাবে কোন ভ্যাকসিন বা ওষুধ ফটিকছড়ি প্রাণিসম্পদ অফিসে সরবরাহ করে না। এতসব সমস্যা পার করেও ফার্ম মালিকদের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে দুধ বিক্রি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফার্ম মালিক এবং স্থানীয়দের উৎপাদিত দুধ বিক্রির জায়গা হচ্ছে স্থানীয় চা দোকান এবং মিষ্টির দোকানগুলো। ফটিকছড়িতে একটি আধুনিক দুধ সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবির পাশাপাশি দেশের গুঁড়ো দুধউৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফটিকছড়ি থেকে দুধ কেনার আহ্বান জানান।

জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদটি প্রশাসনিক পোস্ট। এ পদে কখনো ভেটেরনারি সার্জন বদলির কারণে থাকতেও পারেন, নাও থাকতে পারেন। এ পদ বাদ দিলে এখানে একজন মাত্র ভেটেরিনারি সার্জন রয়েছেন এবং তার পাশাপাশি সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং ড্রেসার পদ গত দুই বছর যাবৎ খালি। এছাড়া কম্পিউটার পদ, অফিস সহকারীর পদও বেশ কিছুদিন যাবৎ খালি বলে জানান। ফটিকছড়ি যা ফেনী জেলার চেয়েও বড় উপজেলায় একজন সার্জন ফটিকছড়ির উত্তরে গেলে আর দক্ষিণে যাওয়া হয় না। এছাড়া সরকারিভাবে ফটিকছড়ির জন্য যা ওষুধ বরাদ্দ আসে ফটিকছড়ির চাহিদা প্রায় তার দ্বিগুণ। ফলে পশু মালিকদের বাইরে থেকে ওষুধ কেনার প্রেসক্রিপশন দিতে হয়। প্রাণিসম্পদ অফিসে যারা পশু নিয়ে আসে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় না বলে তিনি দাবি করেন। তবে ফার্ম বা বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা করতে গেলে যেহেতু অফিসে কোন গাড়ি নেই কাজেই গাড়ি ভাড়া বাবদ দূরত্ব ভেদে সামান্য খরচ নেয়া হয় যা সিটিজেন চার্টারে উল্লে­খ আছে। সীমিত লোকবল এবং বরাদ্দকৃত ওষুধ দিয়ে ফটিকছড়ির প্রাণিসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট