চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আঙ্গিনাই সামলাতে পারছে না

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ট্রাফিক কার্যালয়ে প্রবেশের পথ আটকে যাত্রী তুলছে বাস নির্দেশনা বোর্ডগুলোর সামনে লেগুনা-ট্যাক্সির অবৈধ স্ট্যান্ড

আল-আমিন সিকদার

১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর গুরুদায়িত্বটি পালন করে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। তাইতো যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ ও চালকদের সচেতন করতে একের পর এক নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ট্রাফিক পুলিশ। নগরীর সড়কগুলোতে চলমান বেপরোয়া সিটিবাসগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে সর্বপ্রথম যে উদ্যোগটি ট্রাফিক পুলিশ গ্রহণ করে সেটি হচ্ছে নির্ধারিত স্থানে বাস দাঁড়ানো নিশ্চিত করা। এজন্য প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে নির্দেশনামূলক বোর্ডও লাগিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। চালকদের নজরে আনতে বোর্ডগুলোতে দুই ধরণের রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। একটিতে লাল রঙের বোর্ডে সাদা রঙের বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘এখানে বাস থামিবে না’, অন্যটিতে সবুজ রঙের বোর্ডে সাদা রঙের বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘এখানে বাস থামিবে’।

কিন্তু এ উদ্যোগের পরেও নিয়ন্ত্রণহীন গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনতে পারেনি পুলিশ। কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আইন অমান্য করে যত্রতত্র যাত্রী তুলছেন বাস চালকরা। শুধু তাই নয়, অব্যবস্থাপনার কারণে বোর্ডগুলোর সামনে গড়ে উঠেছে লেগুনা-সিএনজি ট্যাক্সি ও থ্রি-হুইলারের অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে চাঁদাও তুলছেন লাইনম্যানরা। নগরীর প্রায় সবকটি মোড়ের চিত্র এ ধরণের হলেও ট্রাফিক কার্যালয়ের সামনের এমন চিত্র প্রশ্ন তুলছে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। যে চিত্র মনে করিয়ে দেয় প্রচলিত সেই ‘প্রদীপের নিচে অন্ধকার’ প্রবাদটির কথা।

সেবার মান বাড়াতে নগরীতে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম। গতকাল আগ্রাবাদ বাদামতলীতে অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশের বন্দর কার্যালয়ের সামনে দেখা যায়- লাল রঙের একটি বোর্ডে লেখা রয়েছে ‘এখানে বাস থামিবে না’। কিন্তু বোর্ডটির সামনেই যাত্রীর অপেক্ষায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে ৮-১০টি লেগুনা। হাতে লাঠি নিয়ে এসব লেগুনা থেকে টাকা নিতেও দেখা যায় এক ব্যক্তিকে। এরপরপরই সেখানে পরপর তিনটি সিটি বাস এসে দাঁড়ায়। যাত্রী নামানোর পাশাপাশি যাত্রী তুলতে অপেক্ষা করতে থাকে বাসগুলো। পাশেই বিশাল একটি বোর্ডে বাস থামা নিষেধ লেখা থাকলেও তা আমলেই নেয়নি চালকরা। বাস আর লেগুনাগুলো এমনভাবে সড়কটি দখল করে রেখেছে যে ট্রাফিক কার্যালয়ে প্রবেশের যে পথটি রয়েছে তা বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য এ কার্যালয়ের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য। তবে তিনি ব্যস্ত ছিলেন চা পান আর আড্ডায়।

শুধু বাস চালকরাই যে আইন ভঙ্গ করেছেন তা নয়, বাস না থামতে যে নির্দেশনা বোর্ড লাগানো হয়েছে তার নিচে বসে শীতের জামা-কাপড় বিক্রি করতে দেখা যায় এক হকারকে। এখানকার পুরো ফুটপাতটিই ছিল তাদের (হকার) দখলে। তাই বাধ্য হয়ে এখানকার পথচারীদের রাস্তা চলাচল করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। তবে এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না ট্রাফিক পুলিশের। অবশ্য না হওয়ারই কথা। কারণ নিজ অফিসের সামনেই তারা ব্যর্থ দায়িত্ব পালনে।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও কেন এখানে বাস দাঁড় করালেন জানতে চাইলে ৭ নং রুটের একটি বাসের চালক সাগর এ প্রতিবেদককে জানান, ‘যাত্রীরা এখানে দাঁড়ায় বলে আমরাও এখানে বাস থামাই। অনেক সময় বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীরাও এখানে নামতে চায়। তাই বাস দাঁড় করাতে হয়। আর আমি একা এখানে দাঁড়াই না। এই রুটের সবগুলো বাসই এখানে দাঁড়ায়। আমার পিছেও দেখেন একটা (বাস) দাঁড়াইছে এই মাত্র।’

ট্রাফিকের বন্দর বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মশিউর এ বিষয়ে পূর্বকোণকে বলেন, ‘গণপরিবহন আগে থেকেই এলোমেলো। তারা আইন মানতে চায় না। তবে ধীরে ধীরে তাদের এ অভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। নির্ধারিত স্থানে গাড়ি দাঁড় করাবেন বলে বৈঠকে আমাদের জানিয়েছেন গণপরিবহনের নেতারা। গতকাল রবিবার এনিয়ে তাদের (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) সাথে ট্রাফিকের বৈঠকটি হয়। তবে ট্রাফিক কার্যালয়ের সামনের এ পরিস্থিতিটি তাদের আইন না মানার প্রবণতার কারণেই হয়েছে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট