চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দেড় মাসে ৪৫ ছাগলের মৃত্যু

রাঙ্গুনিয়া পথে বসেছে অনেক খামারি

কে. জি. ইসলাম হ রাঙ্গুনিয়া

৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:২৩ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ (পশু) হাসপাতাল। সাধারণ খামারিরা হাসপাতালে এসে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত চিকিৎসা সেবা থেকে। পশু খামারিদের ভরসা কম্পাউন্ডার-সহকারীরা। এতে ভুল চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে পশু। সৈয়দ বাড়ি এলাকার ছাগল খামারি মো. ইমরান আলীর ৪৫ টি ছাগলের মৃত্যু হয়েছে অজ্ঞাত রোগে। তবে এসব ছাগল স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে দেড় মাস ধরে পর্যায়ক্রমে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খামার মালিক। তিনি জানান, এক বছর আগে হরিয়ানা, রাজস্থানি, ময়নাপুরিসহ বিভিন্ন বিদেশি জাতের ১২০ টি ছাগল কিনে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে খামারটি শুরু করি। খামারটি জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় নিবন্ধন দেন। শুরুতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিলেও পরে তাঁরা চিকিৎসা দিতে অবহেলা করেন। অজ্ঞাত রোগে দেড় মাস ধরে

পর্যায়ক্রমে ৪৫টি ছাগল মারা গেছে। সপ্তাহখানেক আগেই মারা গেছে ৭ টি ছাগল। কি রোগে ছাগলগুলো মারা গেছে তিনি কিছুই জানেন না। কয়েকটি ছাগল এখনো একই রোগে আক্রান্ত। হয়তো এসব ছাগলও মারা যাবে। খামারের তত্ত্বাবধায়ক মো. মেনন অভিযোগ করে বলেন, ‘খামারে চিকিৎসকদের নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। প্রথম প্রথম টাকা দিলেও পরে কম টাকা দেয়াতে তাঁরা খামারে আর যান না। চিকিৎসায় অবহেলার কারণে এসব ছাগল মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন মো. হারুন অর রশিদ বলেন, খামারের প্রথম থেকে প্রাণিসম্পদ আন্তরিকভাবে চিকিৎসা দিয়েছেন। চিকিৎসকের মোটা অংকের টাকা দাবির বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে থেকে খামার মালিক নিজেই চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাছাড়া বিদেশি এসব ছাগলকে যে খাবার দেয়া হয়েছে তা ছাগলের খাবারের উপযোগী নয়। খাবারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে এন্টেরোটক্সিমিয়া রোগে ছাগলগুলো মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রাণিসম্পদ দপ্তর কার্যালয় থেকে জানা যায়, উপজেলায় তালিকাভুক্ত গাভীর খামার রয়েছে ২৫৫ টি, পোল্ট্রি খামার ৬৩, ছাগলের খামার ৩০ টি, ভেড়ার খামার ৪ টি, হাঁসের খামার ৫ টি। উপজেলায় গরু রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৮২২ টি, মহিষ ৫ হাজার ৩০০টি, ছাগল ৩৯ হাজার ৪৫০টি, ভেড়া ৪৫০টি, হাঁস ৩৯ হাজার ৩১৫টি, মুরগী ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৪টি ।

সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, উপজেলা প্রাণী হাসপাতালের চিকিৎসকরা অফিসে হাজিরা দিয়েই বেরিয়ে পড়েন প্রাইভেট চিকিৎসায়। এই সময় চিকিৎসকের অভাব পূরণ করেন পিয়ন নুর মোহাম্মদ, কম্পাউন্ডার ফজলুল কাদের, উপসহকারী কর্মকর্তা দ্বীন মোহাম্মদ, পারিজাত কুসুম বড়–য়া, মীর মোহাম্মদ আজমগীর । চিকিৎসক না হয়েও তাদের বাধ্য হয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। তাদের বাড়তি ইনকামেও পকেট ভারী হয়। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ তাদের গৃহপালিত পশুর বিনা চিকিৎসা, কখনো কখনো অপচিকিৎসা কিংবা ভুল চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। এতে শত চেষ্টার পরও তাদের পশুটিকে আর বাঁচাতে পারেন না। অন্যদিকে প্রাইভেট চিকিৎসার ক্ষেত্রেও দাবিকৃত টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে গ্রামের গরিব অসহায় লোকজনকে বকাঝকা শুনতে হয়। অনেক সময় পশুর সঠিক চিকিৎসা পান না বলেও অভিযোগ তাদের।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট