চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এবার গর্ভের সন্তান হত্যার অভিযোগ ম্যাক্সের ৩ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

আদালত প্রতিবেদক

৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে দেড় বছর আগে সাংবাদিক রুবেল খানের ৪ বছর বয়সী কন্যা রাইফা হত্যার অভিযোগ ওঠার পর এবার গর্ভের সন্তান হত্যার অভিযোগে ম্যাক্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক আইনজীবী। গতকাল (রবিবার) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান এর আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন এডভোকেট মো ইউসুফ আলম মাসুদ। আদালত

অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এ ব্যাপারে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক হলেন, ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক লিমিটেডের কনসালটেন্ট ও চমেক হাসপাতালের অবস এন্ড গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফরোজা ফেরদৌস, ম্যাক্স হাসপাতালে নিহত শিশুটির রিপোর্ট প্রস্তুতকারক ও চমেক হাসপাতালের সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড আল্ট্রাসাউন্ড এর ডা. এ.এইচ.এম রকিবুল হক ও ম্যাক্স হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. লিয়াকত আলী খান।

এর তিনদিন আগে গর্ভের সন্তান হত্যার তদন্ত ও বিচার দাবি করে শিশুর মা মোহছেনা ঝর্ণা চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত আবেদন করেন।
বাদির আইনজীবী সাবেক মহানগর পিপি আবদুস সাত্তার পূর্বকোণকে বলেন, আদালত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে পিবিআইকে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কমপক্ষে এএসপি সমমর্যাদার অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত করার জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদি পূর্বকোণকে বলেন, দুই দিন আগে ম্যাক্স হাসপাতালের রিপোর্টে আমার স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে গর্ভের সন্তান স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানানো হয়। অথচ সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির পর আমার সন্তানের মৃত্যু হল।

মামলার বাদি মাসুদ ও তার আইনজীবী শুনানিতে বলেন, এবছর ৫ মে’র ইউএসজি রিপোর্টমতে আমার স্ত্রীর সম্ভাব্য ডেলিভারির তারিখ ছিল ১১ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে ডা. আফরোজার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ১৩ অক্টোবর আবার ইউএসজি রিপোর্টমতে ডেলিভারির তারিখ ১৭ ডিসেম্বর উল্লেখ করা হয়। বাদি বলেন, ১ ডিসেম্বর আমার স্ত্রী পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ডা. আফরোজার কাছে নিয়ে যাই। তিনি সবকিছু পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে জানালেন ১৭ ডিসেম্বর ডেলিভারির তারিখ ঠিক আছে। তিনি এলিন (৫০ এমজি) নামের ওষুধ দিয়ে ডেলিভারির জন্য ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর আবার আমার স্ত্রীকে ইউএসজি পরীক্ষা দেন। সেদিন রাত পৌনে দশটায় ম্যাক্স হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাই। আল্ট্রাসনোগ্রাফির ডা. এইচ এম রাকিবুল হক আমাকে (বাদি) বলেন, সব ঠিক আছে। পরে ২ ডিসেম্বর রাতে ডা. আফরোজা ফেরদৌসকে রিপোর্ট দেখাই। তিনি এবারও সব ঠিকঠাক আছে বলে উল্লেখ করে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেলিভারির জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। ৩ ডিসেম্বর দুপুরে আমার স্ত্রীর পেটে আবার তীব্র ব্যথা শুরু হয়। এসময় আমার স্ত্রীর ভাই তাকে ম্যাক্সে নিয়ে যান। এরমধ্যে জরুরি ভিত্তিতে আমার স্ত্রীকে ভর্তি করা হলে সিজার করার জন্য লেবার রুমে নেয়া হয়। এদিকে, আমি আদালত থেকে দ্রুত হাসপাতালে যাই। সেখানে পৌঁছার পর কর্তব্যরত ডা. সুমাইয়া রফিক জানান, আমার স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করেছে। এসময় আমার কন্যাসন্তানের প্রায় গলিত শরীর দেখতে পাই। তার গায়ের চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ম্যাক্স হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাফী রিপোর্টে আসলে কি ছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী আমার সন্তানের সবকিছু সঠিক ছিল। চিকিৎসকদের গাফিলতি ও অবহেলায় আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক রুবেল খানের ৪ বছর বয়সী রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় একই হাসপাতাল ও হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এক বছরে এ নিয়ে তিন শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল ম্যাক্সের বিরুদ্ধে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট